ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দেশের রাজনীতি-অর্থনীতি গভীর সংকটে

প্রকাশনার সময়: ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ১৩:০৪

জাতীয় সংসদের দ্বাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ। গভীর সংকটে এখন দেশের রাজনীতি এবং অর্থনীতি। সরকার দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছে সংলাপের সময় নাকি শেষ। এ অবস্থায় বিরোধী দলগুলোর নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে লাগাতার হরতাল অবরোধের কর্মসূচি দিচ্ছে। সারা দেশে জ্বালাও-পোড়াও হচ্ছে। নির্বাচন যত এগোবে সংঘাত, সংঘর্ষ আরও বাড়বে। এতে দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং হচ্ছে।

বিশ্ব মন্দাসহ নানা কারণে দেশ এমনই দুঃসময় পার করছে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো নির্বাচনি জটিলতা হরতাল-অবরোধে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হওয়াটা যেমন সমস্যা, আন্দোলন হরতালের নামে ভাঙচুর সংঘাত সংঘর্ষও এক চরম সমস্যা। সাধারণ মানুষ শান্তি খোঁজে কিন্তু কোনোভাবেই শান্তি পাচ্ছে না। সিন্ডিকেট ওয়ালাদের কারসাজিতে এমনিতেই পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে পারছে না। এ অবস্থায় হরতাল অপরাধী পণ্যের বাজার আরও উত্তপ্ত করছে।

রাজধানীর অস্থিরতার কারণে বর্তমানে মানুষের জীবন-জীবিকা গভীর সংকটাপন্ন, আইনশৃঙ্খলারও চরম অবনতি ঘটেছে। মানুষ কিভাবে কাজে যাবে আবার বাসায় ফিরে আসবে এই নিরাপত্তা এখন আর পাচ্ছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। দেশে এখন এক ভয়ানক দুঃসময় বিদ্যমান বলা চলে।

ডলারের দাম নিয়েও দেশ টালমাটাল। এক লাফে ডলারের দাম কোথায় উঠেছে? ভাবা কি যায় বাজারে ডলারের দাম নাকি ১৩০ টাকা। তবে সহসাই তা ১৫০/১৬০ টাকা হলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। দর বেঁধে দিয়েও ডলার বাজারের নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। বেঁধে দেয়া দরের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে না পারার ব্যর্থতাই পরিস্থিতি খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন অনেক অর্থনীতিবিদ। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী যদি বাজারের গতিপথ পরিবর্তন করা না যায়, তাহলে খুব নিকটেই দেখতে হবে ডলারের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। তখন কি হবে? পণ্যের এলসি করতে না পারলে বাজারে পণ্যের সংকট হবে। দাম আরও বাড়বে। এখনই যে অবস্থা তখন কি হবে সাধারণত মানুষের? দেশের শিল্পখাতও খাদের কিনারে।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ডলার সংকটে ইতোমধ্যেই স্বাভাবিক এলসি প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। তার ওপর হরতাল অবরোধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আগামী এক/দুই মাসের মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব আরও প্রকট হবে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, শিল্পখাতে উৎপাদন খরচ যেভাবে বেড়েছে, অনুরূপভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। এ কারণে লোকসানে পড়তে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। রপ্তানিমুখী শিল্পে এ সংকট আরও প্রকট হবে। রপ্তানি খাত এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ সংকট দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে না পারলে ভবিষ্যতে সংকট আরও বাড়বে, যা মোটেই আমাদের কাম্য নয়।

সত্যি দেশটা এগিয়ে যাচ্ছিল। এগিয়ে গেছেও বহুদূর। দেশের কিছু কিছু উন্নয়ন যেটা ভাবিনি তাই হয়েছে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে দেশের চেহারা বদলে গেছে অনেকটাই। কিছু অসৎ লোকের কারণে লুটপাট হয়েছে। ব্যাংক সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের মূল অর্থনীতির। অনেক অর্থনীতিবিদ বলেছেন, গভীর খাদের কিনারে বাংলাদেশর অর্থনীতি। নিমজ্জিত দেশের অর্থনীতির বিষয়টি শাসক ও তাদের পোষকরা তা স্বীকার করছেন না। নির্মম বাস্তবতাকে যতই এড়ানোর চেষ্টা করুক না কেন, দেশের শীর্ষ ব্যাংক এমন বার্তা বহন করে আনল যা মোটেই সুখকর নয়। ব্যাংকে এলসির জন্য ছুটছে শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীরা।

সময়মতো এলসি করা যাচ্ছে না। একসময় তাদের কাছে ব্যাংকগুলো এফসি করার জন্য বসে থাকত এখন উল্টো শিল্পপতিরা তাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। শুধু বাংলাদেশ নয় পাশের দেশ ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক যে ইঙ্গিত দিয়েছে তা হলো ভারত এবার ঢলে পড়তে চলেছে গভীর মন্দার কোলে। তাহলে বাংলাদেশের অবস্থা কতটা খারাপ ভাবতে হবে। কোভিড-১৯’র থাবায় দুরবস্থা সংকট শুরু হয়। অনেক ব্যাপ্ত, সর্বগ্রাসী, গভীর হতে থাকে অর্থ পাচারের কারণে। যা চাহিদা ও জোগান, এই দুটো ক্ষেত্রকেই লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বজুড়ে মন্দা চলছে। ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছে বিশ্বায়িত গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন বা শৃঙ্খলকে।

বিশ্বমন্দা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে গেলে এ সংকট কাটবে বলে ধারণা করছি আমরা। তবে এ সংকট উত্তরণের জন্য দুর্নীতি লুটপাট এবং প্রশাসনিক নীতিবান মানুষের আধিক্য বাড়াতে হবে। শীর্ষ এবং মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সৎ হওয়ার জন্য চাপ তৈরি করতে হবে। অর্থ পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ এবং ব্যাংক লুটেরাদের চিহ্নিত করতে হবে।

লেখক: মহাসচিব, কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ