ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
‘গায়েব’ মাঠ-পার্ক

পূর্বাচল বাসযোগ্য হোক

প্রকাশনার সময়: ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০৭

ঢাকা শহরে স্বস্তির সঙ্গে বসবাস করার পরিবেশ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। পুরো রাজধানীর যে ধারণ ক্ষমতা তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষের বসবাস শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু তাই বলে কেউ সতর্ক হয়েছে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। প্রতিদিন স্রোতের মতো ঢাকায় মানুষ আসছে, থাকছে এবং বসবাস করছে।

এ ছাড়া পুরোনো যারা রয়েছেন তারা তো আছেনই। প্রতিনিয়ত একের পর এক প্রকল্প মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এসব প্রকল্প অপরিকল্পিত এবং এসব অপরিকল্পিত প্রকল্পের কারণেই ঢাকা শহর দিনদিন বসবাসঅযোগ্য হয়ে উঠছে। কিন্তু ঢাকাকে বসবাসযোগ্য করে তোলার জন্য আবাসিক প্রকল্পের সার্বিক তত্ত্বাবধান করবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

তাদের অনুমোদন ছাড়া ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্প কোনো আবাসন কাজ করার অনুমতি পাবে না। কিন্তু খোদ রাজউকই যদি তাদের নিজস্ব প্রকল্পে বারবার কাটাছেঁড়া করে, তাহলে মানুষের আস্থার জায়গা আর কোথায় থাকে?

রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে নতুন করে আর আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ নেই। যে কারণে এটিকে সম্প্রসারণ করে কেন্দ্র থেকে আশেপাশে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে খোদ রাজউক। পূর্বাচল উপশহর প্রকল্প এর একটি। কিন্তু এই প্রকল্পের নকশা বারবার পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে।

২৮ আগস্ট নয়া শতাব্দীতে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদে বলা হয়েছে, বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আবাসন প্রকল্পগুলো। চাহিদা বেশি থাকায় প্রকল্পগুলোতে খেলার মাঠ, পার্কসহ কমন স্পেসগুলো কেটে প্লট বানানো হয়েছে। ১০ লাখ মানুষের থাকার উপযোগী করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের নকশা করেছিল রাজউক। কিন্তু পরে পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পে বসতির সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রকল্পটি আন্তর্জাতিক মানের দাবি করলেও বাস্তবতা হলো, আন্তর্জাতিক মানের তো নয়ই, এমনকি রাজউক যে ভিত্তিকে মানদণ্ড ধরে আবাসন প্রকল্পের নীতিমালা তৈরি করেছে, সেটাও অনুসরণ করা হয়নি। নগর পরিকল্পনাবিদগণের জিজ্ঞাসা নকশায় থাকা খেলার মাঠ ও পার্কসহ কমন স্পেসগুলো গায়েব হয়ে গেল কোথায়?

জানা গেছে, রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পেই প্লটের সংখ্যা বাড়াতে ৫ দফা নকশা কাটছাঁট করা হয়েছে। চতুর্থবার কাটছাঁট করার পর হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আর কাটছাঁট না করার। কিন্তু আদালতের সেই নির্দেশ উপেক্ষা করেই পঞ্চম দফা মূল নকশা কাটছাঁট করেছে রাজউক।

খোদ রাজউক যদি তাদের প্রকল্পের নকশা ঠিক না রাখে, তাহলে অন্যরা কেন রাখবে বা অন্য কেউ রাজউক থেকে নকশা পাস করিয়ে আনার পর নিজ মর্জি মতো নকশা পরিবর্তন করে ভবন বা আবাসন তৈরি করে তখন এর জন্য তাদের কী এর জবাবদিহি করার নৈতিক অধিকার রাজউকের থাকবে?

শুরুতে মানদণ্ড ঠিক রেখে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা হলেও পরবর্তীতে উন্মুক্ত স্থান, পার্ক বা স্কুলের জায়গা কমিয়ে প্লট বানানো হয়েছে। এভাবে পূর্বাচল প্রকল্পে পাঁচবার লে-আউট প্ল্যান সংশোধন করার কারণে ঝামেলাও হয়েছে বহু। পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলা) এ নিয়ে মামলা করেছে।

পরিকল্পিত আবাসিক এলাকার জন্য রাজউকের মানদণ্ড রয়েছে। ৫০ একর জমিতে সাড়ে ১২ হাজার মানুষের জন্য প্রতিটি ইউনিটে দেড় একর জমিতে তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, দুটি পার্ক, একটি জলাধার তিনটি খেলার মাঠ, দুটি কমিউনিটি সেন্টার এবং দুটি কমিউনিটি ক্লাব থাকবে। কিন্তু রাজউক নিজেদের মানদণ্ডই মানছে না।

শুধু রাজউক নয় আমরা সব ধরনের আবাসন প্রকল্প বসবাসকারীদের জন্য স্বস্তিকর হবে এই প্রত্যাশা করি। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে অনুমোদিত নকশায় বারবার পরিবর্তন আনাটাও নানা সন্দেহের উদ্রেক করে, এটিও কারও কাম্য নয়।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ