ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাংলাদেশের উন্নয়নে বৈদেশিক ঋণের গতিপ্রকৃতি ও দায়

প্রকাশনার সময়: ২৪ জুলাই ২০২৩, ০৮:৪৮
ছবি : সংগৃহীত

উন্নয়ন হলো কোনো কিছুর কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন বা উত্তরণ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশি ঋণ কতটা সহায়ক ভূমিকা পালন করে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। বলা হয় বিদেশি সাহায্য সেসব দেশেই কার্যকর, যেখানে ভালো আর্থিক, মুদ্রা ও বাণিজ্য নীতিমালা রয়েছে। অন্যপক্ষের যুক্তি হচ্ছে বিদেশি সাহায্য কার্যকর হওয়ার সঙ্গে গ্রহীতা দেশের অর্থনৈতিক নীতিমালার কোনো সম্পর্ক নেই।

সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো দেশগুলো উন্নয়নের নামে বিদেশ থেকে গৃহীত বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে অনেক সমস্যায় জর্জরিত এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো একে ‘বিদেশি ঋণের ফাঁদ’ বলে অভিহিত করছে। এক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদরা বৈদেশিক ঋণ নিয়ে বাংলাদেশকে আগাম সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে উন্নয়নের নামে বিদেশ থেকে গৃহীত দেশের বৈদেশিক ঋণ বেড়েই যাচ্ছে। সরকারি খাতের চেয়ে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ সবচেয়ে বেশি এবং এ ঋণের ঝুঁকিও বেশি। সরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ কম, দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেশি।

ইদানিং বৈশ্বিক মন্দায় টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় এখন বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ডলার সংকটে নিয়মিত ঋণ শোধ করতে না পারায় এর মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। এতে ঋণের অর্থও বেড়ে যাচ্ছে। একদিকে ডলার সংকট, অন্যদিকে ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়ার কারণে বৈদেশিক ঋণ এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখন স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়েই ডলার সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত ১৪ বছরে দেশের বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে ৭ হাজার ৩৪৬ কোটি ডলার বা ৩২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

২০০৮ সালের শেষে মোট বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ২ হাজার ২৭৯ কোটি ডলার। গত বছরের ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬২৫ কোটি ডলারে, অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে ঋণ বেড়েছে ৩২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তবে ওই সময়ে মোট দেশজ উৎপাদন বেশি বেড়েছে, সে তুলনায় বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে কম।

যে কারণে জিডিপির আকারের অনুপাতে বিদেশি ঋণ এখন আগের চেয়ে কমেছে। ২০০৮ সালে দেশের জিডিপির তুলনায় বৈদেশিক ঋণ ছিল ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ২০ শতাংশে। ওই সময়ে দেশের বৈদেশিক ঋণ যে হারে বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে জিডিপির আকার। যে কারণে আগের চেয়ে এখন জিডিপির হিসাবে বৈদেশিক ঋণের অনুপাত কমেছে।

সাধারণত জিডিপির আকারের তুলনায় বৈদেশিক ঋণ ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি হলে তাকে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। সে তুলনায় বৈদেশিক ঋণের দিক থেকে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে নেই। তবে আইএমএফ এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে বৈদেশিক ঋণের দিক থেকে নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এ বিবেচনায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে। সংস্থাটি ঋণ অনুমোদনের পরে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে একটি বিশ্লেষণও তুলে ধরেছে। যেখানে বাংলাদেশের ঋণের সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে এদেশের ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৪৯০ কোটি ডলার, যা জিডিপির ৮ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে দ্বিপক্ষীয় বা বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৬৭ কোটি ডলার, যা জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি।

আইএমএফ এর তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২২৮ কোটি ৮ লাখ ডলার। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে টাকার অংকে (প্রতি ডলার ১০৫ টাকা হিসাবে) ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাবে এই ঋণের পরিমাণ ১৭ শতাংশ। তবে ঋণের এই পরিমাণ ঝুঁকি সীমার মধ্যেই রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

মোট সরকারি ঋণের মধ্যে বৈদেশিক ঋণের অংশ ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ঋণ স্থিতি রয়েছে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১ হাজার ৮১৬ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাংকের পর সবচেয়ে বেশি ঋণ রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ১ হাজার ৩২৮ কোটি ডলার।

এরপর আছে যথাক্রমে জাপান, রাশিয়া ও চীন। জাপানের ঋণ স্থিতি ৯২৩ কোটি ডলার, রাশিয়া ও চীনের ঋণ রয়েছে যথাক্রমে ৫০৯ কোটি ডলার ও ৪৭৬ কোটি ডলার। আইএমএফের কাছে ঋণের পরিমাণ ৯৮ কোটি ডলার। নতুন করে সংস্থাটির কাছ থেকে আরও ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ। নতুন ঋণের প্রথম কিস্তি ইতোমধ্যে ছাড়ও করা হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেও সরকারের বড় ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ রয়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্র হতে। আইএমএফ এই খাত থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ কমাতে সুপারিশ করেছে। দেশীয় উৎস থেকে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৩৮৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। যা জিডিপির ২২ দশমিক ১ শতাংশ।

সার্বিক ঋণের ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ এসেছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এর মধ্যে ট্রেজারি বিল ৮২৪ কোটি ২০ লাখ ডলার, ট্রেজারি বন্ড ৩ হাজার ৪৭৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার, সুকুক ১৯২ কোটি ৬০ লাখ ডলার, জাতীয় সঞ্চয়পত্র হতে ঋণ রয়েছে ৩ হাজার ৯১১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ ছাড়া ঋণের গ্যারান্টি আকারে রয়েছে ৩১০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর বাইরেও অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ রয়েছে ৬৭১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

অন্যদিকে, বিশ্বব্যাংকের ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেবট রিপোর্ট ২০২২’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি অর্থাৎ মোট বৈদেশিক ঋণ ২০১১ সালের ২৭.০৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৩৮% বেড়ে ২০২১ সালে দাঁড়ায় ৯১.৪৩ বিলিয়ন ডলার।

প্রতিবেশী ভারতের বৈদেশিক ঋণ এই একই সময়ে বেড়েছে ৮৩%, পাকিস্তানের বেড়েছে ১০১% এবং শ্রীলঙ্কার ১১৯%। বাংলাদেশে ২০২১ সালে দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ ছিল ৭০.০৪ বিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগে ২০২০ ছিল ৬০.৪১ বিলিয়ন ডলার। এই ঋণের মধ্যে ৬২.৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ পেয়েছে পাবলিক সেক্টর।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৫.৮৬ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের মজুদ ছিল ৭৩.৫০ বিলিয়ন ডলার।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ ১৫ লাখ ৫ হাজার ৩৬৩ কোটি এবং সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত মিলিয়ে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। এই ঋণ জিডিপির ৩৪ শতাংশের বেশি।

অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। এ হিসাবে প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু ঋণ ১ লাখ ৫ হাজার ২৫২ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৯৫ হাজার ৬০০ টাকা। এ হিসাবে এক বছরে বেড়েছে ৯ হাজার ৬৫২ টাকা।

বৈদেশিক সহায়তা বাবদ গৃহীত ঋণ সাধারণত সুনির্দিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় করা হয়ে থাকে। এর বাইরে কিছু সহায়তা আছে যা বাজেট সহায়তা এবং খাদ্য সহায়তা হিসেবে পাওয়া যায়। এই বাজেট সহায়তা খাতভিত্তিক হতে পারে বা উন্মুক্তও হতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে উন্নয়ন সহযোগী সুনির্দিষ্ট খাতে (যেমন: শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি) ব্যবহারের জন্য এটি উল্লেখ করে দিতে পারে অথবা যে কোনো খাতে ব্যবহারের জন্যও দিতে পারে।

আবার বৈদেশিক সহায়তা হতে পারে ঋণ বা অনুদান বা খাদ্য সাহায্য। ঋণের আবার বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে। অনমনীয় এবং নমনীয় ঋণ (Hard and Soft Loan), সরবরাহকারীর ঋণ (Supplier’s Credit)। সরকার ইদানিংকালে খুব কমই অনুদান পেয়ে থাকে (৫%)।

স্বাভাবিকভাবেই সবাই এই ঋণের সুদের হার এবং শর্ত নিয়েই বেশি আলোচনা করে থাকে। সরকার কি দেশকে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেউলিয়া করে দিচ্ছে, নাকি অর্থনৈতিক কূটনীতির অদক্ষতার কারণে বেশি সুদে ঋণ নিচ্ছে, এমন প্রশ্ন অনেকের মধ্যেই উদ্রেক হয় এবং যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত ছাড়াই অনেকে নিজস্ব মূল্যায়ন দিয়ে থাকে যা হয়তো সঠিক নয়।

বাংলাদেশে বিদেশি সাহায্য প্রবাহের ধারা ক্রমেই পরিবর্তিত হচ্ছে। পরিবর্তনটা শুধু সাহায্যের উৎস ও পরিমাণেই ঘটছে না, খাতভিত্তিক বরাদ্দ এবং ব্যবহারের দিক থেকেও তা হচ্ছে। অবশ্য বিদেশি সাহায্যের ভূমিকা ও কার্যকারিতা নিয়ে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিতর্ক এবং মতানৈক্য রয়েছে। কখনো কখনো সাহায্য দাতাদের উপস্থিতি অর্থনৈতিক নীতিমালার সঙ্গে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও বিস্তৃত হয়।

বাংলাদেশের সুশাসন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি উন্নয়নে দাতাদের বক্তব্য এখন নিয়মিত ব্যাপার। একদিকে শর্তের বেড়াজাল, অন্যদিকে সাহায্যপ্রবাহ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণার অভাব, দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে সমন্বয়হীনতা ইত্যাদি কারণে সাহায্যের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারণে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধিও একটি উদ্বেগজনক চিত্র।

অন্যদিকে সাহায্য বরাদ্দের ক্ষেত্রে দারিদ্র্য ও উন্নয়ন প্রাথমিক মাপকাঠি নয়। বরং রাজনৈতিক, কৌশলগত এবং উন্নয়নের উদ্দেশ্য বিবেচনা করেই সাহায্য দেয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতিতে অর্থায়নের উৎস হিসেবে অন্যান্য খাত যেমন অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালন, রেমিট্যান্স, বিদেশি বিনিয়োগ ইত্যাদির তুলনায় বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ ইতিমধ্যেই কমে এসেছে।

অপরদিকে যুদ্ধ-সংঘাতে জর্জরিত দেশগুলোর আর্থিক চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি সাহায্যের প্রবাহ যেমন বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে সংকুচিত হয়ে আসবে তেমনি সাহায্য ব্যবহারের ওপর নজরদারি ও কর্তৃত্ব বাড়বে। এ অবস্থায় বিদেশি ঋণের ফাঁদ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশকে বিদেশি সাহায্যের বাইরে অন্যান্য আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে দীর্ঘমেয়াদি সম্পদ সঞ্চালন করার প্রয়াস জোরদার করতে হবে।

লেখক: ব্যাংকার ও কলাম লেখক

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ