প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শেষ করার ষড়যন্ত্র চলছে দীর্ঘকাল ধরে। শকুনের অভিশাপে গরু মরে না এই প্রবাদ বাক্যটি সত্য করে এখনো বেঁচে আছেন তিনি। সব সরকারের আমলে কম টার্গেট শেখ হাসিনা কেন বেঁচে আছেন তার প্রমাণ আজকের বাংলাদেশ। কথায় কথায় আমাদের জাতির একটি অংশ তার বিরোধিতায় মুখর।
আজকাল বিশেষ করে জামায়াত নেতা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং সাজা হবার পর থেকে শুনি শেখ হাসিনা যা করেন বা করছেন তার পেছনে নাকি ভারত। সবকিছু ভারত আর তাদের লোকেরা এসে করে দিয়ে যায় । লেখাপড়া জানা বাঙালির কথা ও কার্যকলাপ এখন রূপকথার গল্পের চাইতেও ভয়ংকর।
এই যে করোনা ইস্যু, টিকা পাওয়া না পাওয়া, চীনের কাছ থেকে টিকা নেয়া, চীনের সঙ্গে সেতু নির্মাণ কিংবা উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের ভূমিকা এতে কি ভারতের খোশ হবার কারণ আছে? না নরেন্দ্র মোদির মতো ব্যবসা ও কূটনীতি জানা মানা নেতা তাতে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন? তারপরও এক কথা শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের সব নষ্টের মূল। আমি একবার প্রশ্ন করেছিলাম, নষ্টামিগুলো কি কি? উত্তর ও প্রতিক্রিয়া নির্মোহভাবে বিশ্লেষণের পর বুঝলাম কারণ একটাই, বিএনপি ও জামায়াতের অপরাজনীতি সহ্য না করা। খালেদা জিয়ার জন্য যতটা সহানুভূতি কিংবা ভালোবাসা তার বহুগুণ বেশি দরদ তার বিলেতবাসী পুত্রের জন্য।
এই যে একুশে আগস্ট অতিবাহিত হলো এর সঙ্গে কারা জড়িত কাদের পরিকল্পনা আর মদদে তা হতে পেরেছিল? এটুকু বোঝার জন্য কি গবেষণার দরকার পড়ে? তখনকার সরকার জোট সরকারের মদদ আর অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে রাজধানীর রাজপথে সামরিক বাহিনীর গ্রেনেড ছোড়ার হিম্মত হতে পারে কারো? শেখ হাসিনার জান সেদিন হাতের মুঠোয় ছিল বটে তার চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল নেতাদের মানববন্ধন। এই মানববন্ধন এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটি বিএনপির জন্য এক চরম উদাহরণ। যারা তাদের নেত্রী কারাগারে গেলে বা সাজা ভোগ করলে একটা মিছিল করার সাহস রাখে না, কেবল নির্যাতনের অজুহাত দেখায়, তাদের এটা রোজ একবার দেখা উচিত। সেদিন সেসব নেতারা নিজেদের প্রাণের মায়া করলে আজ শেখ হাসিনা ছবি হয়ে থাকতেন।
আওয়ামী লীগের এটাই শক্তি। দীর্ঘসময় সরকারে থাকলে জনপ্রিয়তা কমে যাওয়া সাধারণ বিষয়। তাদের বেলায়ও তাই ঘটছে। সরকার ও শাসনে থাকা দলের জননির্ভরতা হ্রাস পায়। এক সময় তারা গদিকে নিজেদের পার্মানেন্ট জায়গা মনে করতে থাকে। আমাদের দেশের মতো দেশ ও সমাজে এই ব্যাপারটা একেবারে একশ’ পার্সেন্ট সত্য। দেশে এখন এটাই বাস্তবতা। কিন্তু এরপরও তার বেলায় মানুষ ভাবেন তিনি আছেন বলেই তারা নিরাপদ। যেসব বুদ্ধিজীবী বা তেমন নামধারী কিছু মানুষ আর তথাকথিত ভোকাল সমাজ তারা না দেশের কোনো কাজে লাগেন না তাদের কথা কেউ বিশ্বাস করেন। এই যেমন তালেবান ইস্যুতে এক টকশো বাগীশ বলে বসলেন ঢাকা এয়ারপোর্টের হাল নাকি কাবুলের মতো হবে যদি সঠিক ইলেকশান হয়। আসলে কি তাই?
আর কোনো কারণে সরকারের পরিবর্তন মানে কি আফগানিস্তানের মতো নৈরাজ্য সৃষ্টি করার পরিবেশ তৈরি করা? এমন উদভ্রান্ত লাগামহীন কথার লোকজ এখন ভয়ংকর পপুলার। এদের শক্তি বা মদদ দাতারা মূলত আমাদের সেই চিরচেনা চিরদুশমন গোষ্ঠী। কিন্তু তাদের শক্তির নেপথ্যে কাজ করছে প্রধানমন্ত্রীকে আড়ালে রেখে বা তার গোচরে না এনে অপকাজ করার অপশক্তি। পরিবেশটা এমন দাঁড়িয়ে গেছে পান ধেকে চুন খসার বিচার ও চাওয়া হয় শেখ হাসিনার কাছে। আর এর কারণ আমাদের অজানা নয়। যে পর্যন্ত কোনো বিষয় তার গোচরীভূত না হয় সে পর্যন্ত তার ন্যায্য সুরাহা হয় না। এভাবে যে অচলায়তন গড়ে তোলা হয়েছে সেটাই এখন ভয়ের।
এই বিপদসীমা বা ভয়ের জায়গাটা থেকে বের হতে হলে শেখ হাসিনাকে তার ন্যায্য আসনে রেখে বাকিদের আত্মশুদ্ধি ও সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। জনসংখ্যা আর সমস্যার কথা মাথায় রাখলে এটা বলা যাবে বাংলাদেশের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব কমেনি। কিন্তু এই লেখাটার মূল বিষয় হচ্ছে জাতীয় ঐক্য আর ভরসার প্রতীক শেখ হাসিনার নিরাপত্তা। প্রতি বছর একুশে আগস্ট আসলেই মনে পড়ে এই সেদিনও তার বিমানে কারিগরি ত্রুটি ঘটিয়ে তাকে আকাশেই নিঃশেষ করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সে ষড়যন্ত্র প্রবাহমান। তার আয়ু আর বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের ভালোবাসায় তিনি বেঁচে আছেন। যাত্রাপথের আগামী দিনকাল শুভ করার জন্য দলের দায়-দায়িত্ব অস্বীকারের সুযোগ নাই।
মানুষ উন্নয়ন দেখছে, সুফলও পাচ্ছে। কিন্তু তাদের দরকার শান্তি আর ন্যায্যতা। এ দুটো এখনো অধরা। করোনা থেকে সামাজিক জীবন কিংবা নারীর নিরাপত্তা কোথাও তার দেখা নাই। আমরা নিশ্চয়ই সরকারি দলকে মনে করিয়ে দেব বিএনপি জোট আমলেও উন্নয়ন হতো। এই স্কেলে না হলেও তাদের সময়কালে কিছু কাজ হয়েছে। কিন্তু সুশাসনের অভাব হঠাৎ গজিয়ে ওঠা হাওয়া ভবন আর লুটপাটে তাদের ঘর কাচের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে। বর্তমান সরকারের দুর্গেও বহুবার ঢিল পড়েছে। কেঁপে উঠেছে। কিন্তু ওই এক জায়গাতেই তারা টিকে যাচ্ছেন। মানুষ জানে শেখ হাসিনা না থাকলে দেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে। কী হতে পারে এ জাতির ভবিষ্যৎ। প্রধানমন্ত্রীর বয়সও বাড়ছে।
সে কারণেই এমন সব দুঃখ ভারাক্রান্ত দিনে ভাবি এরপর কী হবে? হঠাৎ করে পরীমনি পিয়াসা এমন সব নারী চরিত্রগুলো কেন সিনে আসা শুরু করেছে? সরকার কি এ খবর রাখে না, এখন নারীদের ৮০ শতাংশের সহানুভূতি পরীমণির দিকে। তাদের অন্তরে নিরাপত্তার অভাব আর পুরুষতন্ত্রের বিষময় ফল কাজ করতে শুরু করেছে। সামাজিক মিডিয়া খুললেই বোঝা যায় পরীমণি হঠাৎ কেমন পপুলার হয়ে গেছে। সত্যি বলতে কী আমার সাপোর্ট ও তার দিকে ঝুঁকে গেছে। কারণ অনিয়ম বিচারের নামে প্রহসন আর নাটক। এই নাটক বন্ধ করা দরকার। মানুষ চিরকাল বোকা থাকে না। তারা বুঝতে পারে কেন একের পর এক নাটকের জন্ম হয়। আর যাই হোক এসব কারণে সরকারের ইমেজের লোকসান ছাড়া কোনো লাভ নাই। যারা বা সে শক্তি এসব নাটক করে লাভবান তাদের বিরুদ্ধে না দাঁড়ালে নির্বাচনহীন সরকারের অপবাদ আরো ঘনীভূত হবে।
শেখ হাসিনাই এখনো উত্তর। তার কাছে আমাদের প্রত্যাশা নারী জাগরণের প্রতীক হিসেবে তিনি বাংলাদেশে নারীদের ওপর দমন অবিচার ও পুরুষের লোভের বিচার করবেন। তার কাছে চাওয়া দেশে-বিদেশে আওয়ামী লীগের নামে যার যেমন খুশি শাখা খোলার নামে দোকান খোলা ব্যবসা বন্ধ করবেন। দেশে দল ও সরকারে জবাবদিহিতা আর নেতাদের ভূমিকা ফেরানোর ব্যবসা করবেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। এই দেশ এ দেশের মানুষকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসেন তিনি। তিনি ছাড়া জাতি মূলত অসহায়। এই নিরীহ সাধারণ জনতা আর প্রগতিশীল উদারতার জন্যই তাকে বাঁচতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে তার নেতৃত্বের বিকল্প নাই। গ্রেনেডের মতো শক্তিশালী অস্ত্র তাকে হত্যা করতে পারেনি। ভালোবাসার শক্তি আর আদর্শে তার নির্বিঘ্ন জীবন হোক আমাদের প্রার্থনা।
লেখক: সিডনি প্রবাসী, সিনিয়র সাংবাদিক
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ