বাড়িতে বড় টিনের ছাউনি। ছাউনির নিচে কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রায় ৫ বছর ধরে এ সার তৈরি করছেন আবুল হাসেম। কেঁচো সারে জীবন বদলেছে তার। ফিরেছে সুদিনও। সচ্ছলতা এসেছে পরিবারে। এখন প্রতি বছরে আয় হয় অন্তত সাড়ে ৩ লাখ টাকা।
আবুল হাসেমের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার টাঙ্গাবের টাঙ্গাবে। তিনি সাবেক ইউপি সদস্য।
শুরুর গল্প
তখন ২০১৭ সাল। আবুল হাসেম চিন্তা করলেন, সার নিয়ে কাজ করবেন। কম খরচে নির্ভেজাল জিনিস দেবেন। শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদন। সিমেন্টের তৈরি ২০টি চারি দিয়ে যাত্রা শুরু তার। এখন ২০৮টি চারি ও ১০টি রিং আছে আবুল হাসেমের। বলা যায়, সার উৎপাদনের মিনি ‘কারখানা’ গড়ে তুলেছেন তিনি।
বছরে আয় সাড় ৩ লাখ
আবুল হাসেম প্রতি মাসে প্রায় তিন টন কেঁচো সার উৎপাদন করতে পারেন। প্রতি টন পাইকারি বিক্রি হয় ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকায়। আর খুচরা বিক্রি হয় ১৫ হাজার টাকা। সেই হিসেবে খরচ বাদে বছরে আয় করছেন অন্তত সাড়ে ৩ লাখ টাকা।
কৃষকরা খুশি
এর মধ্যে আবুল হাসেমের নাম ছড়িয়ে পড়েছে। কেঁচো সারেরও চাহিদা বাড়ছে। কৃষকরা এখন জমি প্রস্তুত করে ছুটে আসেন হাসেমের মিনি কারখানায়। চাহিদা অনুযায়ে কিনে নেন কম্পোস্ট সার। দামও কম পাওয়া যায়। বর্তমানে রাসায়নিক সারের ঊর্ধ্বমুখী বাজারে কেঁচোসার সরবরাহ করে কৃষকের ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি। কৃষকরা বেশ খুশি কেঁচো সার পেয়ে। অনেকে বলেন, আপনি আমাদের জীবন সহজ করেছেন।
আবুল হাসেমের কারখানায় তৈরি হচ্ছে কেঁচো সার। ছবি : লেখক
যেভাবে তৈরি হয় কেঁচো সার
‘প্রথমে গোবর, চা পাতা, কচুরিপানার লতা-পাতা ও ডিমের খোসা, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ও কলাগাছ টুকরো টুকরো করে কেটে মেশানো হয়। সেগুলো চারিতে ভাগ করে রাখা হয়। প্রতিটিতে ছেড়ে দেওয়া হয় অন্তত এক হাজার কেঁচো। চটের বস্তা দিয়ে চারি ঢেকে রাখা হয়। এই প্রক্রিয়ায় কেঁচো সার উৎপাদন হতে দুই মাস সময় লাগে।’ বললেন আবুল হাসেম।
তারা বললেন
আবুল হাসেম বললেন, গরুর গোবর কেঁচো সারের জন্য সর্বত্তম। কেঁচোর খাবারের জন্য গরুর গোবরেই সিংহভাগ দেয়া হয়। নিজস্ব গরুর খামার না থাকায় গোবর সংগ্রহ করতে অনেক কষ্ট হয় এবং প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। সরকার আমাকে খামারের জন্য লোন দিলে বড় ভালো হয়।
গফরগাঁও উপজেলা কৃষি অফিসার নূর মোহাম্মদ বলেন, টাঙ্গাব গ্রামের কৃষক আবুল হাসেম কেঁচো সারের উদ্যোক্তা। বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় ভার্মি কম্পোস্টে বিশেষ অবদান রাখছেন তিনি। আবুল হাসেম তার নিজের গরু থেকে যে গোবর আসছে তা থেকে কম্পোস্ট সার তৈরি করছেন। তার আরও গরু দরকার। সে ক্ষেত্রে আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি যাতে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে আরও গরু কিনতে পারেন সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা হবে। নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ