মুসলমান ধর্মালম্বীদের অন্যতম উৎসব ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহা মানেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু কোরবানি। ঈদ আসতে এখন রয়েছে হাতেগোনা কয়েকদিন আর ঈদের দিন চাহিদা মত কসাই না পাওয়ায় দেশের সিংহভাগ পশু কোরবানিদাতা নিজেরাই নিজেদের পশু কোরবানির কাজটি করেন। তাই তাদের এ কাজের অন্যতম অনুষঙ্গ ধারালো ছুরি, বটি ও দা। সারাবছর খবর না থাকলেও প্রতিবছর ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এসব ধাতবযন্ত্রের জন্য যেতে হয় কামার পল্লীতে। আবার অনেকে এসব সরঞ্জামে শান দিতেও ভিড় করছেন কামার পল্লীতে।
অন্যান্য সময়ের তুলনায় কামার পল্লীতে কাজের চাপ বেড়েছে কয়েক গুন। দিনরাত সমান তালে কাজ করছেন তারা। কেউ আসছেন নতুন চাপাতি, ছুরি-চাকু কিনতে আবার কেউ আসছের ঘরের পুরনো দা, বটি, ছুরি, চাকুতে শান দিতে।
উপজেলার বিভিন্ন বাজারে রয়েছে পঞ্চাশ থেকে ষাটটি কামারের দোকান। বরমী এলাকার কর্মকার আবুল হোসেন জানান, বিভিন্ন উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ধাতব সরঞ্জাম তৈরি করতে অনেক খরচ হয়, তবে যারা ভালো সরঞ্জাম পেতে আগ্রহী তারাই কামার পল্লীতে আসেন।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন কামারপল্লী ঘুরে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদুল আজহা এলেই তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এতে তারা অনেক খুশি। তবে ঈদ ছাড়া বাকি দিনগুলোতে তাদের তেমন একটা ব্যস্ততা থাকে না বললেই চলে। বছরের অন্যান্য সময় তাদের দিনে ২/৩ শত টাকা আয় হয় আবার কোন কোন দিন হয়ই না। সে তুলনায় এখন আয়-রোজগার বেশ ভালো হচ্ছে বলে জানান তারা।
ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা যায়, সাধারণত স্প্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা ব্যবহার করে চাপাতি, দা, বটি ও ছুরি তৈরি করা হয়। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভালো, দামও বেশি। আর কাঁচা লোহার তৈরি উপকরণগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে কম। এছাড়াও লোহার মানভেদে স্প্রিং লোহার ১৫ ইঞ্চি লম্বার একটি ছুরি ১৪শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা, নরমাল ১০শ’ থেকে ১২শ’ টাকা, ছোট পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ৩০০ থেকে ৫০০, দা প্রতি কেজি ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা দরে, বঁটি দেড়শ’ থেকে ৪শ’, পশু জবাইয়ের ছুরি ৪০০ থেকে শুরু, চাপাতি ৯শ’ থেকে হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
মাওনা বাজারে কথা হয় আব্দুস সাত্তার মোল্লার সঙ্গে। তিনি বলেন, পুরনো চাপাতি, ছুরি, চাকুতে শান দিতে আসছি। লম্বা সিরিয়াল মুজুরিও চাচ্ছে বেশি। তবে বছরে একটা সময়ই এটা করি তাই টাকা বেশি গেলেও গায়ে লাগে না।
শ্রীপুর বাজারে কামার হরিপদ ও কালি বাবুর দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ঈদকে সামনে রেখে তাদের হামার ও হাতুড়ি যেন থামছেই না। বাজারের আশপাশের লোকদের ভোর হচ্ছে কামারদের দক্ষ হাতের হামার-হাতুড়ির টুংটাং শব্দে যা চলে গভীর রাত অবদি।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ