ঢাকা, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কফি ও ড্রাগন চাষে সফল খাদিজা বেগম

প্রকাশনার সময়: ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১১:৩৪

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বৃহত্তর কৈমারী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের সুনগর গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম ১৬ শতক জমিতে ড্রাগন ফল ও কফি চাষ করে এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছেন। তিনি উপজেলায় প্রথম নারী কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে এই সাফল্য পেয়েছেন।

খাদিজা বেগমের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে ২৯ মে আমার স্বামী মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর আমি একাকিত্ব জীবন যাপন করছিলাম। আমার দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। বর্তমানে বড় ছেলে চাকুরি ও ছোট ছেলে উচ্চ শিক্ষার জন্য এলাকার বাহিরে থাকে। ছেলেরা শখ করে দু-একটি ড্রাগন ফল ও কফি’র চারা নিয়ে আসতো। এখান থেকেই শুরু ড্রাগন ও কফি চাষ।’

তিনি আরো জানান, ‘আগে এই জমি খালি পরে থাকতো। পরে যখন এই জমিকে বাগানের রুপ দিতে থাকি তখন থেকে শুরু হয় বাগান করার উদ্যোগ। কফি গাছে এবারই প্রথম কফি ধরেছে। এ‍্যারাবিকা ও রোবাষ্টা জাতের দুই ধরনের কফি গাছ ও এবারই প্রথম কফি গাছে ফল এসেছে। বর্তমানে খাদিজা বেগমের একাকীত্ব সময় এ বাগানের মধ্যে দিয়েই কাটে। অনেক সযত্ন ও নিবিড় পরিচর্যা করে এ বাগান গড়ে তুলছেন তিনি।

খাদিজা বেগম ভিয়েতনামের জাতীয় ড্রাগন ফল চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেতে শুরু করেছেন। টক-মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন কৈমারী ইউনিয়নের এই নারী উদ্যোক্তা।

বর্তমানে তার বাগানে ২৬০টি ড্রাগন ও ২০৮০টি কফি গাছ আছে। ১৬ শতক জমির উপর বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেছেন ড্রাগন ফল ও ২৪ শতকে রয়েছে কফির খামার। করোনার মধ্যে তিনি কয়েকবার ড্রাগন ফল বিক্রির পাশাপাশি দেশের কৃষকদের মাঝে এই ফলের চাষ ছড়িয়ে দিতে চান।

নতুন ফল ড্রাগন চাষে সফলতা পাওয়া গ্রামের খাদিজা বেগম জানান, ২০১৮ সালের জুন মাসে ১৬ শতক জমির উপরে ড্রাগন ফলের বাগানের সূচনা করেন মাত্র ২৬০টি চারা দিয়ে।

তার ড্রাগন খামার দূর থেকে দেখলে মনে হয় সযত্নে ক্যাকটাস লাগিয়েছেন কেউ! একটু কাছে যেতেই চোখ ধাঁধিয়ে যাবে অন্য রকম দেখতে ফুল ও এক লাল ফলে ভরা খামার। প্রতিটি গাছে রয়েছে ফল, ফুল, মুকুল, পাকা ড্রাগন ও কফি। তিনি লাল, হলুদ এবং সাদা ড্রাগন ফলের চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে গাছের বয়স প্রায় ৩ বছর হয়ে গেছে।

ড্রাগন গাছে ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। এক একটি ফলের ওজন ২৫০-৫০০ গ্রাম হয়ে থাকে। এছাড়া একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০ থেকে ১৫০টি ফল পাওয়া যায়। সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ হতে ৩০- ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফল পাওয়া সম্ভব।

এখন তিনি প্রতি সপ্তাহে নুন্যতম ২০ কেজি ফল বিক্রি করছেন। যার বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৪'শত টাকা। খামার থেকে বিক্রি হচ্ছে ড্রাগন গাছের চারা। প্রতিটি ড্রাগনের চারা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে।

এ বিষয়ে জলঢাকা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মীর তামিম বান্না'র সাথে কথা হলে তিনি বলেন,‘খাদিজা বেগম এর বাগানটি আমরা নিয়মিত পরিদর্শন করছি ও বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। খাদিজা বেগম ২০১৮ সালে স্বল্প পরিসরে ড্রাগন ও কফি চাষ প্রাথমিকভাবে শুরু করেন এবং বাগান শুরু করার পর তার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়। পরে তিনি বাণিজ্যিকভাবে বাগানের কার্যক্রম শুরু করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হন। নিজেদের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে এ সাফল্য থেকে পুনরায় বাগানকে আরো সম্প্রসারিত করেন। বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্য এক টুকরো জমি ফাঁকা না রাখা। তাই আমরা বসতবাড়ির আশেপাশে সবাই যদি স্বল্প পরিসরে এই উদ্যোগ গ্রহণ করি তাহলে দেশে পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আমাদের দেশের কৃষি বাণিজ্যিকভাবে সফল হবে বলে আমি আশা করছি।’

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ