কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে তুলা চাষ করা হয়েছে। উপজেলার জাঙালিয়া ইউনিয়নের চরকাওনা মুনিয়ারীকান্দা গ্রামের কৃষক ইসলাম উদ্দিন ব্রহ্মপুত্র নদের চরে ২৫বিঘা জমিতে এর চাষ করছেন। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগীতায় তিনি বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়া ও রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ না হওয়ায় তুলার ফলন ভালো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার দাম চড়া হওয়ায় বাম্পার ফলনে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চরকাওনা মুনিয়ারীকান্দা এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝখানের চরে ২৫বিঘা জমিতে তুলা চাষ করছেন ইসলাম উদ্দিন। স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণসহ তুলা চাষে তাকে সব ধরণের সহযোগীতা করেছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। গত ১০-১২বছর ধরে ওই জমিতে তিনি বাণিজ্যিকভাবে তুলা চাষ করে আসছেন। তুলার বীজ বিনামূল্যে সরবরাহের পাশাপাশি প্রতিবছর ৪ পারসেন্ট সুদে দুই লাখ টাকার ঋণ পান ইসলাম উদ্দিন। তুলা চাষের জন্য চর এলাকার এই মাটি খুবই উপযোগী। তবে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকা, অসময়ে বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে অনেক সময় ফলন কম হয়ে থাকে। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়া এবং রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ মোকাবেলা করায় ব্যাপক ফলন হয়েছে।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিকভাবে তুলার বাজার দর নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। গত বছর এক মণ (৪০কেজি) তুলার দাম ছিল দুই হাজার ৭০০টাকা। এ বছর তুলার দাম বেশ চড়া। এবার এক মণ তুলার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তিন হাজার ৪০০টাকা। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি মণ তুলায় ৭০০ টাকা বেশি পাওয়া যাবে। তুলা চাষিদের উৎপাদিত তুলা জিনাররা ( তুলার আঁশ ছড়ানো মেশিনকে জিনিং মেশিন বলা হয়। যাদের এ যন্ত্র রয়েছে তাদের জিনার বলা হয়) কিনে থাকেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২৫বিঘা জমির সাতটি বাগানে তুলার চাষ করা হয়েছে। অধিকাংশ বাগানের তুলা ফুটে আছে। দূর থেকে সাদা ধবধবে লাগছে। শ্রমিকেরা তুলা সংগ্রহ করে বস্তাভর্তি করছেন। বাগানজুড়ে অসংখ্য সাদা তুলা বাতাসে দুলছে।
তুলা চাষি ইসলাম উদ্দিন জানান, চলতি বছরের জুলাই মাসে জমিতে তুলার বীজ বপন করেছেন। ডিসেম্বরের শুরুতে তুলা সংগ্রহের উপযোগী হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে তুলা সংগ্রহ চলছে। সাতটি বাগানের ২-৩টিতে এখনো ফুল ফোটেনি। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সেগুলোও ফুটবে। তুলা চাষে প্রচুর খাটুনি। শ্রমিক, কীটনাশক খরচসহ সব মিলিয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এবার তুলার ভালো ফলন হয়েছে। এক বিঘা জমি থেকে ১১-১২মণ তুলা পাবেন বলে আশা করছেন। একবার তুলা চাষে ৩-৪বার তুলা উত্তোলন করা যায়। ২৫বিঘা জমি থেকে ২৫০-২৬০মণ তুলা পাবেন বলে জানান তিনি। তুলার দাম বেশি থাকায় এবার আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবেন বলেও আশা করছেন তিনি।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের পাকুন্দিয়া এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কটন ইউনিট অফিসার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, তুলা চাষি ইসলাম উদ্দিনকে সব ধরণের সহযোগীতা করা হয়েছে। স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণসহ চাষাবাদে সব সময় খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখার পাশাপাশি সরেজমিনে তুলা বাগানটি ঘুরে গেছেন। সম্প্রতি তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান মহোদয়ও এই তুলা বাগানটি পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তুলার ভালো ফলন হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এবার দামও অনেক বেশি। এতে তুলা চাষি ইসলাম উদ্দিন বেশ লাভবান হবেন।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ