শেরপুরের নিভৃতপল্লীর এক কৃষক সেন্টু হাজং উদ্ভাবন করেছেন ২৩ জাতের নতুন ধান। এরমধ্যে তার উদ্ভাবিত ধান চাষ করে সফলতা পেয়েছেন স্থানীয় কয়েকশ কৃষক। তাই জেলার বিভিন্ন বাজারে এসব জাতের চাহিদা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। কৃষক ও গবেষক সেন্টু হাজং এর উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধান দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা চান স্থানীয়রা।
দরিদ্রতার কারণে এসএসসির পর লেখাপড়া ছেড়ে দেয়া সেন্টু হাজং উদ্ভাবন করেছেন ২৩ জাতের নতুন দেশীয় ধান। ২০০৫ সালে স্থানীয় একটি এনজিওর (কারিতাস) মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন তিনি। সাত বছরের চেষ্টায় উদ্ভাবন করেন সেন্টু শাইল নামের নতুন ধান। কম খরচে অধিক লাভ পাওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে তার উদ্ভাবিত সকল জাত। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে ও কৃষকদের কাছে ব্যাপক চাহিদা এই ধানের।
এ ছাড়া বগি, হালই, গোলাপী, মালঞ্চি, ময়নাগিড়ি, মালসিরা, অনামিয়া, পারিজাত, আপচি, কাইশাবিন্নি, মারাক্কাবিন্নি, শংবিন্নি, দুধবিন্নি, বিরই, চাপাল, খাসিয়াবিন্নিসহ দেশি জাতের বিলুপ্তপ্রায় ধান সংরক্ষণও করছেন তিনি।
কৃষক সেন্টু হাজং বলেন, ২০০৫ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশি জাতের বিলুপ্তপ্রায় বগি, হালই, গোলাপি, মালঞ্চি, ময়নাগিড়ি, মালসিরা, অনামিয়া, পারিজাত, আপচি, কাইশাবিন্নি, মারাক্কাবিন্নি, শংবিন্নি, দুধবিন্নি, বিরই, চাপাল, খাসিয়াবিন্নি, পুরা বিন্নিসহ বেশ কয়েক ধরনের আমন জাতের ধান ৪০০ প্লট করে বীজ সংরক্ষণ করে যাত্রা শুরু করি। এরপর তিনি বীজ ধান নিজের জমিতে ছোট ছোট ছোট প্লট করে ব্রিডিং ও শঙ্করায়ন পদ্ধতিতে নিজ হাতেই আবিষ্কার করছেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৩টি নতুন জাতের দেশি আমনজাতের ধান আবিষ্কার করছেন। একটি নতুন জাতের ধান আবিষ্কার করতে তার সময় লাগে প্রায় ৯ বছর।
সবগুলো ধানের নাম রেখেছেন তার নামে। এ বছর তার আবিষ্কৃত আতপ সেন্টু শাইল ও সেন্টু পাইজাম নালিতাবাড়ী উপজেলায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ বছর সেন্টু ২৩ (আতপ) ধান নতুন করে আরো চিকন ও ছোট ধান উদ্ভাবন করেছেন। আগামীতে উৎপাদনের জন্য কৃষকরা বীজ নিচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই নিয়মিত ধান নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন সেন্টু হাজং। ব্রিডিং সংকরায়ন ও পরাগায়ন পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত নতুন জাতের উদ্ভাবনের স্বীকৃতি মিলবে সেন্টু হাজংয়ের, নতুন বছরে এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
উপজেলার চাঁদগাও গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, এ বছর ৫ একর ১৫ শতাংশ জমিতে সেন্টুর আবিষ্কার করা আতপ সেন্টুশাইল জাতের ধান আবাদ করেছিলাম। শুকিয়ে একর প্রতি ৫০-৫৫ মণ হারে ফলন পেয়েছি। প্রতি একর খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। সেন্টু শাইলের বর্তমান বাজার দর ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকা প্রতিমণ।
একই এলাকার অপর কৃষক আরিফুল ইসলাম বলেন, এবার ৩ একর ১০ শতাংশ জমিতে সেন্টু পাইজাম ধান লাগিয়েছিলাম। শুকিয়ে ৪০-৪৫ মণ হারে ফলন পেয়েছি। এই জাতের ধানের বর্তমান বাজার দর ১৪০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা প্রতিমণ। ফলন ভালো হওয়ায় প্রতিবছর সেন্টু শাইল ও সেন্টু পাইজাম ধান আমি আবাদ করি।
আড়ৎদার হেলাল উদ্দিন বলেন, বাজারে বর্তমানে সেন্টু পাইজাম ও ইন্ডিয়ান পাইজাম ধান ব্যাপকহারে আসায় আমরা সে ধানই কিনছি। তবে সেন্টু পাইজাম ধানের চাহিদা বেশি। আর সেন্টু আতপ এখন শেষের দিকে। আতপ ধান ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকায় কিনেছিলাম।
এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবীর দৈনিক নয়া শতাব্দীক বলেন, কৃষক সেন্টু হাজং নিজ উদ্যোগে দেশি জাতের ধান উদ্ভাবন করে নালিতাবাড়ীতে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। স্থানীয়ভাবে কৃষিতে অবদানের জন্য কৃষি উদ্ভাবক হিসেবে তিনি যেন পুরস্কৃত হন, তাই তার নাম কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ