কৃষি ও খাদ্যসমৃদ্ধ অঞ্চল শেরপুরে চলতি মৌসুমে আলু বীজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরোদমে চলছে আলু বীজ রোপণের কাজ। গ্রামের পর গ্রাম একরের পর একর জমিতে চলছে আলু বীজ রোপণের ধুম। অন্যদিকে আলু বীজ রোপণে কর্মসংস্থান হয়েছে মৌসুমি শ্রমিকদের। প্রতিদিন কয়েক হাজার পুরুষ ও নারী শ্রমিক ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা মজুরি ভিত্তিতে কাজ করছেন।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে শেরপুরের ৫ উপজেলায় ৫ হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৮০ শতাংশ জমিতে আলু বীজ রোপণের কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় আলু চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে শেরপুরের চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, আলু বীজ রোপণে মাঠে কাজ করছেন চাষিদের পাশাপাশি পুরুষ ও নারী শ্রমিকরা। যেসব চাষিরা একটু আগাম বীজ রোপণ করতে পেরেছেন, তারা ক্ষেত পরিচর্যা করছেন।
ইসমাঈল হোসেন নামের এক চাষি বলেন, এ বছর ১০ একর জমিতে আলু চাষ করছি। অন্যান্য ফসল চাষের পাশাপাশি আলু চাষে লাভ বেশি। এক একর জমিতে আলু বীজ ক্রয়, রোপণ, সার প্রয়োগ, সেচ ও শ্রমিকসহ খরচ হয় ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এরপর খরচ বাদ দিয়ে একর প্রতি লাভ থাকে ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা।
কৃষক সাদেক মিয়া জানান, প্রতিবছর তিনি আমন ধান কাটার পর আলু বীজ রোপণ করেন। এ বছর তিনি ডায়মন্ড, এস্টারিক্স ও সানশাইন- এ ৩ জাতের আলু বীজ রোপণ করেছেন। আলু গাছের সব থেকে খারাপ রোগ লেট ব্লাইট বা আলুর মড়ক রোগ। এ ভাইরাস আলু ক্ষেতে প্রবেশ করলে একদিনের ব্যবধানে সব গাছ মরে পুড়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়। তবে যদি শৈত্যপ্রবাহ কম থাকে বা জমিতে মড়ক রোগের আক্রমণ না হয় তবে এবার ভালো লাভের আশা করেন তিনি।
নারী শ্রমিক হেলেনা বেগম বলেন, সংসারের কাজ শেষ করে এমন সময়ে আলু বীজ রোপণ ও আলু তোলার কাজ করি। এতে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা মজুরি পাই। কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসারের বিভিন্ন কাজে খরচ করি।
শ্রমিক আবু মিয়া জানান, বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ের আলু বীজ রোপণের কাজ করি। এজন্য দূরে কোথাও কাজের জন্য যেতে হয় না। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে হাতে কোন কাজ থাকে না। তখন বাড়ির পাশেই আলু বীজ রোপণের কাজ করে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা আয় করতে পারি।
এ ব্যাপারে শেরপুরের কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি-বীজ) উপ-পরিচালক মো. খলিলুর রহমান বলেন, চলতি বছর জেলায় উন্নতমানের আলু বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। চাষিরা এবার লেডি রোসেটা, সানশাইন, এস্টারিক্স, ডায়মন্ড, কারেজ এই চার জাতের আলু বীজ রোপণ করছেন। আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে জেলায় আলুর বাম্পার ফলন হবে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ