চলনবিলের বিস্তৃত ফসলি মাঠ সরিষার হলুদ ফুলে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। শিশির ভেজা হলুদ ফুলের পাপড়িতে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন দুলছে। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা সহ চলবিলের নয়টি উপজেলা উত্তরাঞ্চলের মৎস্য ও শস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত।
প্রচলিত কৃষি পণ্যের দাম না পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কারণ সরিষা এখন লাভজনক ফসল। গত মৌসুমে স্থানীয় হাট বাজারে সরিষার দাম ভালো পেয়েছে চাষিরা। সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে, দিগন্ত জোড়া বিস্তৃত ফসলী মাঠ। চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত মৌসুমে সরিষা চাষ হয়েছিল ১০৩১২ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে ১১০০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এরমধ্যে তা ছাড়িয়েছে। গত বছরের তুলনায় সরিষা চাষ বেশি হয়েছে প্রায় ৬৭৯ হেক্টর।
এদিকে, তেল জাতীয় ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে চলতি মৌসুমে তাড়াশ উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ৮৪০০ জন কৃষককে কৃষি প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে উন্নত জাতের সরিষার বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। চলতি মৌসুমে দেশে ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ফসলি মাঠে আরো সরিষা চাষের জন্য কৃষকরা জমি প্রস্তুত করছেন। অনেকে জমির জলাবদ্ধতার কারণে রবিশস্য আবাদ করতে পারবেন না। তবে আগাম জাতের সরিষা ক্ষেত ফুলে ফুলে ভরে গেছে, মৌমাছিরাও মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে, যা দেখে কৃষক ও দর্শনার্থীদের মন আনন্দে ভরে যাচ্ছে।
কৃষকেরা জানান, আমাদের এলাকায় বিনা-১৪ জাতের সরিষার আবাদ বেশি হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে উফশী জাতের সরিষার ফলন ১০-১২ মণ পর্যন্ত হয় এবং বপণের ৭০-৮০ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।
উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের রানীদিঘী গ্রামের কৃষক গোলাম রব্বানী বলেন, চলতি বছর ৬ বিঘা সরিষার আবাদ করেছি। চারা গজিয়ে এখন ফুল আসছে। বাজারে তেলের দাম বেশি হওয়ায় সরিষার দামও ভালো পাব বলে আশা করছি। সরিষা তুলে যেহেতু ধান লাগানো যায় আবার ধানে সারও কম প্রয়োগ করা লাগে, তাই এই আবাদ টা মিস করতে চাই না।
সরিষা চাষি মোহাম্মদ আলী বলেন, খরচ কম, পরিশ্রম কম আর সময়েও কম লাগে আবার দামও ভালো তাই সরিষা একটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল। প্রতি বিঘা জমি থেকে চলতি মৌসুমে ৬-৮ মণ হারে সরিষা পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, সরিষা চাষ সম্প্রসারণের জন্য কৃষি বিভাগ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। সরকারিভাবে ৮৪০০ জন কৃষককে বীজ ও সার সহায়তা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণে সরিষা চাষের উপকারিতা কৃষকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আশা করছি সরিষার আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হবে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ