ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেই সংসার চলে বাবা-ছেলের

প্রকাশনার সময়: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:৩৭

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেই সংসার চালান নরেন চন্দ্র রায় (৬৪) ও তার ছেলে বাদল চন্দ্র (৩১)। আধুনিকতার এই যুগেও পূর্ব পুরুষদের এই পেশাকে ধরে রেখেছেন বাবা-ছেলে।

নরেন চন্দ্র রায়ের গ্রামের বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবী গ্রামে। উপজেলার তুষভান্ডার বাজারে একটি দোকানে বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেন নরেন চন্দ্র। এসব বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে সাহায্য করেন ছেলে বাদল চন্দ্র (৩১)।

নরেন চন্দ্র দোকানে বিভিন্ন ধরনের চামড়ার বাদ্যযন্ত্র তৈরি করা হয়। মৃদঙ্গ সাড়ে ৩ হাজার টাকা, ঢাক ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা, ঢোল ৭ হাজার টাকা, তবলা ৫ হাজার টাকা ও তবলা বায়া ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। একেকটি বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে সময় লাগে ৬ থেকে ৮দিন পর্যন্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও তবলার বেচা-বিক্রি ছিল বেশি। তখন প্রতিদিনই কাজের অর্ডার থাকত। অর্ডার দিয়ে বাদ্যযন্ত্র কিনতেন ক্রেতারা। কিন্তু বর্তমানে দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের অধিকাংশই মুখ থুবড়ে পড়েছে ইলেক্ট্রনিক বাদ্যযন্ত্রের কাছে। যার ফলে এই শিল্পের কারিগরদের কদরও অনেক কমে গেছে।

একটা সময়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যাত্রাপালা, লোকসংগীত, নাটক ও পালাগান ছিল বাংলার ঐতিহ্য। এসব অনুষ্ঠানকে মনোমুগ্ধকর করে তুলতে দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তবলা, ঢোল, মৃদঙ্গ, ঢোলক, ডাক, তবল ও বায়ার মতো দেশীয় বাদ্যযন্ত্রগুলো শোভা পেতো। কিন্তু আধুনিকতা আর ইলেক্ট্রনিক বাদ্যযন্ত্রের প্রভাবে দেশীয় এসব বাদ্যযন্ত্র ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসলেও হার মানতে নারাজ দেশি বাদ্যযন্ত্রের নিপুণ কারিগর নরেন চন্দ্র রায়।

অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিলেও তিনি বাপ-দাদার এই পেশাকেই আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। নিপুণ হাতে প্রতিনিয়িত দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তৈরির কাজ করছেন তিনি। এই কাজে সঙ্গে রেখেছেন নিজের ছেলেকে। বাবা-ছেলের কঠোর পরিশ্রম থেকে যে আয় হয় তা দিয়েই কোনোরকমে চলে সংসারের চাকা।

বাদ্যযন্ত্র কারিগর নরেন চন্দ্র রায় বলেন, বাপ-দাদার আমলে এ পেশা ছিল খুবই জনপ্রিয়। এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো অনুষ্ঠান হলে এসব যন্ত্রের প্রচলন ছিল বেশি। বর্তমানে অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় এবং আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের কারণে কমে যাচ্ছে হাতের তৈরি এসব বাদ্যযন্ত্র। পেশা টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতা কামনা করছি।

তিনি আরও বলেন, আমার বয়স হয়ে যাওয়ায় এসব কাজে এখন আর বেশি সময় দেইনা। তাই ছেলেকে নিয়োজিত রেখেছি এই পেশায়। এখন ছেলে সকল বাদ্যযন্ত্র তৈরির অর্ডার নেয়। আমি মাঝে মাঝে সময় দেই।

নরেন চন্দ্র রায়ের ছেলে বাদল চন্দ্র বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িত আছি। বাবার কাছ থেকে শিখেছি বাদ্যযন্ত্র তৈরির কাজ। এসব বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চলছে। বাবার বেশি বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন আর আগের মত কাজ করতে পারে না। তাই আমাকেই সব সামলাতে হচ্ছে।

দিনদিন কমে যাচ্ছে এসব যন্ত্র। তাই দেশীয় বাদ্যযন্ত্র টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে জানান এই কারিগর।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ