হালকা হালকা কুয়াশায় যেন জানান দিচ্ছে শীত এসে গেছে। শীতের আগমনে খেজুরের রস আহরণের জন্য গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার গাছিরা। এবারও সুস্বাদু খেজুরের রস গুড় ও পাটালি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে সরবরাহ করা হবে।
গাছিদের দা হাতে নিয়ে ও কোমরে দড়ি বেঁধে গাছ চাঁচাছোলার কাজে রয়েছে আলাদা নিপুণতা। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই কোমরে রশি (দড়ি) বেঁধে গাছে ঝুলে রস সংগ্রহের কাজ করেন তারা। কদিন পরই শুরু হবে নলি বসানোর কাজ। এরপর রোজ বিকেলে ছোট-বড় মাটির হাঁড়ি গাছে বাঁধা হবে, আর সকালে সংগ্রহ করা হবে রস। খেজুরের এই কাঁচা কেউ এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাটে-বাজারে খাওয়ার জন্য বিক্রি করা হয়। আবার কেউ কেউ এই রস জ্বালিয়ে গুড় ও পাটালি তৈরি করবে।
উপজেলার উথলী গ্রামের শামসুল ইসলাম নামের এক গাছি জানান, সপ্তাহখানেক ধরে কাজ শুরু করেছে তারা। গাছের ময়লা ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা কেটে ফেলছেন। ধারালো দা দিয়ে খেজুর গাছের চাঁচ দেওয়া শুরু হয়েছে। কয়েকদিন পর থেকে নলি স্থাপনের কাজ শুরু হবে। গাছে লাগানো হবে মাটির পাতিল। এরপরই শুরু হবে সুস্বাদু খেজুরের রস সংগ্রহের কাজ।
তবে তিনি বলেন, চাষিরা গুড় বানাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে ধীরে ধীরে। এক কেজি গুড় তৈরিতে খরচ হয় ৯০-১০০ টাকা। আর বিক্রি করতে হয় ১২০-১৩০ টাকা দরে। তাই আগ্রহ হারাচ্ছে তারা।
একতারপুর গ্রামের আরেক গাছি রবিউল ইসলামের গাছ রয়েছে ৪০টি। আরও ৪০টি গাছ তিনি বর্গা নিয়েছেন। তবে দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় শঙ্কায় পড়েছেন গাছিরা।
বৈদ্যনাথপুর গ্রামের গাছি জুড়োন মিয়া বলেন, বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে এতে এক সময় হয়তো দেশে খেজুর গাছ থাকবে না। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে সবার উচিত তালগাছের মতো বেশি বেশি খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্ন সহকারে বড় করা।
স্কুল শিক্ষক গোলাম ফারুক বলেন, খেজুরের গাছ এখানকার মাটি ও মানুষের সাথে মিশে আছে। বসতভিটার আশপাশে, রাস্তার ধারে ও ফসলের জমির আইলে অসংখ্য খেজুরের গাছ চোখ পড়ে। শীত আসলেই এই এলাকার নারী-পুরুষ সকলেই খেজুরের রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যা আবাহমান বাঙলার চিরায়ত ঐতিহ্য।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ