লালমনিরহাটের তিস্তার চরে আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। নতুন ফসল ঘরে তুলতে সীমাহীন আনন্দে চরের চাষিরা। এবার কয়েকবার আকস্মিক স্বল্প মেয়াদি বন্যায় সেচ ছাড়াই চরাঞ্চলে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে।
কৃষকেরা জানান, তিস্তার চরে প্রতিবছর বন্যায় আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হলেও এবছর তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি সর্বনাশী তিস্তা। চলতি মৌসুমে গত বছরের তুলনায় ফসল কম হলেও ধানের বর্তমান বাজার দরে সন্তুষ্ট চাষিরা। চলতি বছর দোন (২৭ শতক) প্রতি ১২ থেকে ১৪ মণ করে আমন ধান পেয়েছে। প্রতি মণ ধানের বাজার মূল্য ১২'শ থেকে ১৩'শ ৫০ টাকা। এ বছর সার, কীটনাশক, ডিজেলসহ কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি তাই আমন ধান উৎপাদনে খরচ বেশি। তবে বর্তমান ধানের বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় লাভের আশা চাষিদের।
হাতীবান্ধার চর-সির্দুনায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রচণ্ড রোদে তিস্তার চরে কৃষকেরা আমন ধান কাটছেন। অনেকে কাটা ধান ঘরে তুলতে নৌকা দিয়ে পার করছেন। আবার কেউ কেউ বালু চরের মধ্যেই ধান মাড়াই করে বস্তায় ভরছেন। তবে বেশিরভাগ কৃষকের বাড়ি নদীর তীরবর্তী এলাকায় হওয়ায় নৌকা দিয়ে নদী পার করছেন। প্রচণ্ড রোদে ক্লান্তি দূর করতে একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ায় কিংবা ছোট টিনের চালার ঝুপড়ি ঘরে বসে ভাত খাচ্ছে মনের আনন্দে। চরে আমন ধান কাটা মানেই যেন কৃষকের মনে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানান, উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলে চলতি আমন মৌসুমে ২ হাজার ৩'শ ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেছে কৃষকেরা। বর্তমানে চরে আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চরে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। যদিও এবার খরায় আমনের ফলন আশানুরূপ হয়নি, তবে স্থানীয় ধানের বাজার মূল্য বেশি থাকায় চরের কৃষকেরা লাভবান হবেন।
কালীগঞ্জ তিস্তার চরের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বছর কষ্টে রোপা আমন ধান তিস্তা নদীর বন্যায় তলিয়ে যায়। দীর্ঘদিন পানির নিচে থাকায় ধান গাছে পচন ধরে। চলতি বছর তিস্তায় স্বল্প মেয়াদি বন্যা হওয়ায় ধান ভালো হয়েছে। এবার লাভবান হবো।
কৃষক আফজাল উদ্দিন বলেন, এ বছর খরার কারণে আগের তুলনায় ধান কম হয়েছে। তারপরেও দোন প্রতি ১২/১৪ মণ করে ধান হবে। এখন বাজারে ধানের দাম বেশি তাই লোকসান হওয়ার শঙ্কা নেই।
হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন মিয়া বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চরাঞ্চলের আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের বর্তমান বাজার মূল্য ভালো, কৃষকেরা এবার মোটামুটি লাভবান হবেন। চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলে ২ হাজার ৩'শ ৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ