ঢাকা, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১, ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

লাউ চাষে শিক্ষার্থী আল-আমিনের চমক

প্রকাশনার সময়: ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:৫২

পাট ও পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুরের সালথা উপজেলা। এখানে মৌসুমে প্রায় ৯০ ভাগ জমিতে পাট ও পেঁয়াজের আবাদ হয়। তবে সব কিছু ছাড়িয়ে লাউ ও সবজি চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন শিক্ষার্থী মো. আল-আমিন শেখ। গত কয়েক বছর ধরে লাউ, ধুন্দল, চন্দনি, পুইশাক ও অন্যান্য সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। বিভিন্ন সবজি চাষ করলেও লাউ চাষে সাফল্য ধরা দেয়।

আল-আমীন শেখ (২৩) উপজেলার যদুনন্দী ইউপির জগন্নাথদী গ্রামের দক্ষিণপাড়ার লিটু শেখের ছেলে। তিনি নবকাম পল্লী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন প্রকার সবজি ও লাউ চাষাবাদ করছেন। বাবা-মা সহ পরিবারের সবাই তাকে চাষাবাদে সাহায্য করেন। সবজি চাষে তিনি নিজেকে পারফেক্ট মনে করেন। দেশ ও কৃষির প্রতি টান থেকেই আল-আমীনের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

চলতি মৌসুমে তিনি প্রায় ১ একর জমিতে লাউ চাষ করেন। সেখানে দুটি মাচা করেন। কাদা বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে বেড পদ্ধতিতে কয়েক প্রজাতির হাইব্রিড জাতের লাউ গাছ রোপণ করা হয়েছে। মোট ১৩ টি বেড রয়েছে, একটি চারা থেকে অন্যটির দূরত্ব প্রায় আড়াই ফুট, শতক প্রতি মাত্র ৫০০/৭০০ টাকা খরচ হয়েছে। ৪০-৪৫ দিন পর থেকে প্রায় প্রতিদিন লাউ সংগ্রহ করা যায়। লাউ গাছ ৪ মাস পর্যন্ত ভালো ফলন দেয়। এরপরই ফলন কমতে থাকে। এই জন্য ৪ মাস পর নতুন করে লাউ গাছ রোপণ বা অন্য কোন ফসলের চাষ করত হয়। লাউ সারাবছর চাষ করা যায়। তাই লাউ চাষকেই বেছে নিয়েছেন আল-আমীন। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৫/৭ লাখ টাকা লাউ চাষে লাভ করবেন বলে ধারণা এই শিক্ষার্ধীর।

আল-আমীনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ঢাকায় ছোট্ট একটা চাকরি করতাম। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বাড়িতে এসে চিকিৎসা নিতে থাকি পাশাপাশি চিকিৎসার খরচ ও পরিবারের খরচ মেটাতে চাষাবাদ শুরু করি। সবাই যেখানে পাট-পেঁয়াজ করে আমি সেখানে ভিন্ন কিছু করার পরিকল্পনা করি। আমার এক বড়ভাই আমাকে সেইভাবেই পরিকল্পনা দেন। তারই আলোকে গতবছর পরীক্ষামূলক লাউ চাষ করি। সেখানে আমি কিছুটা সাফল্য পেয়ে এবছর প্রায় ১ একর জমিতে লাউ চাষ করি। সব খরচ বাদ দিয়ে এবছর লাউ চাষে আমি প্রায় ৫/৭ লাখ টাকা আয় করবো।

তিনি আরও বলেন, আমি দেশকে ভালোবাসি এই মাটিকে ভালোবাসি, তাই কৃষিকাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। আমার মূলধন কম, তাছাড়া চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তাই আমি আমার দুই বন্ধুকে সাথে নিয়ে প্রায় ৫ একর জমি লিজ নিয়ে একটা বৃহৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সেখানে ভার্মি কম্পোস্ট, জৈব সার তৈরি করা হবে, নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে বিক্রি করতে পারবো। লাউ, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, পেপে, কয়েক প্রকার কলা সহ বিভিন্ন রকম সব্জি চাষ করবো। এখানে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক একদম ব্যবহার হবে না বললেই চলে, সব কিছু হবে অর্গানিক।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সুদর্শন সিকদার বলেন, উপ-সহকারী কৃষি অফিসারের কাছে তরুণ কৃষি উদ্দোক্তা আল-আমীনের গল্প শুনেছি। তারা নিয়মিত তার লাউ ক্ষেত পরিদর্শন করছে। তিনি বাজারের কয়েকটি হাইব্রিড জাতের লাউ চাষ করেছেন, জৈব সার ও সকল প্রকার সারের সঠিক ব্যবহার করেছেন। তার বৃহৎ কৃষি পকল্পের গল্প শুনে ভালো লাগছে। আমি নিজে দুএকদিনের মধ্যে তার লাউ ক্ষেত দেখতে যাবো। তাকে যেকোন সেবা ও পরামর্শ দিতে আমরা প্রস্তুত আছি। এই রকম তরুণ কৃষি উদ্দোক্তাদের মাধ্যমেই কৃষিতে নতুনত্ব আসে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ