পাঁচ, দশ, পঁচিশ ও পঞ্চাশ পয়সার মুদ্রার ব্যবহার হতে দেখা যায় না এখন আর। কুষ্টিয়ার হাট-বাজারেও নেই এসব মুদ্রার বিনিময়। এমনকি ভিক্ষুকও খুচরা পয়সা হিসেবে এসব মুদ্রায় নেয় না। কেবল যে ব্যবহার নেই তা নয়, ক্রমেই দুর্লভ হয়ে উঠছে এসব মুদ্রা।
সরকারি হিসেব মতে মুদ্রার প্রচলন এখনো আছে। কিন্তু বাস্তবে নেই কোনো লেনদেন। আর সচারচর লেনদেন না থাকায় পাঁচ, দশ, পঁচিশ ও পঞ্চাশ পয়সার মুদ্রা চিনে না কুষ্টিয়ার আজকের প্রজন্মের তরুণ-তরুনীরা।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের একাধিক শিশু-কিশোরের কাছে জিজ্ঞাসা করে জানা গেছে, তারা পাঁচ, দশ বা পঁচিশ পয়সার মুদ্রা কখনো দেখেনি। শুধু বইয়ে পড়েছে ও ছবিতে দেখেছে। তাদের কেনাকাটায় এসব মুদ্রার কোনো প্রয়োজনও পড়ে না। তবে অল্প সংখ্যক শিশু- কিশোর পঁচিশ এবং পঞ্চাশ পয়সার মুদ্রা চিনলেও তা কেনাকাটার কোনো কাজে লাগাতে পারে না তারা।
অপরদিকে অভিভাবকরা জানান, শিশু-কিশোরদের পঁচিশ ও পঞ্চাশ পয়সার মুদ্রা দিলে তারা তা নিতে চায় না। অনেকেরই প্রশ্ন, এসব মুদ্রা গেল কোথায়? হাট-বাজারে কোথাও এসব মুদ্রার প্রচলন আর নেই।
দোকানিরা জানান, এসব মুদ্রার প্রচলন না থাকার একমাত্র কারণ কেনা-কাটার কোনো পর্যায়েই খুচরা পয়সার প্রয়োজন পড়ে না। এমনকি এক টাকার কয়েন দিয়েও এখন নিম্ন মানের চকলেট ছাড়া আর কিছুই কিনতে পাওয়া যায় না। বর্তমানে হাট-বাজার কিংবা গ্রাম-শহরের ছোট্ট একটি দোকানে একটা পান কিনতেও প্রয়োজন হয় পাঁচ টাকা।
বাজার মূল্যায়নে টাকায় পৌঁছায় মুদ্রা বা কয়েনের প্রচলন হ্রাস পেয়েছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসৎ খুচরা বিক্রেতারা এসব মুদ্রার পরিবর্তে মুদ্রা মূল্যায়নে ব্যবহার করছে নিম্নমানের খাবার অযোগ্য চকলেট। এসব মুদ্রা থাকার পরেও তা লেনদেন না করে সাধারণ ক্রেতাদেরকে অনেকটা বাধ্য করছে চকলেট নিতে। ফলে একদিকে যেমন পাঁচ, দশ, পঁচিশ, পঞ্চাশ ও এক টাকার মুদ্রার ব্যবহার ওঠে যাচ্ছে। তেমনি অন্যদিকে, খাবার অযোগ্য চকলেট বিক্রি করে প্রতিনিয়ত হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
কুষ্টিয়ার এই জনপদের হাট-বাজারে চালু মুদ্রাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলন রয়েছে দুই ও পাঁচ টাকার। সরকারি নীতি ও নির্দেশ উপেক্ষা করে এভাবেই হাট-বাজারগুলোতে দিনের পর দিন এসব মুদ্রার ব্যবহার-বিনিময় বা প্রচলন বন্ধ হয়ে গেলে একদিন কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে এসব মুদ্রার পরিচয়।
আজকের প্রজন্মের কাছে দেশের মুদ্রার আদি ইতিহাস ও মুদ্রা পরিচয় অধরায় রয়ে যাবে। তাই এসব মুদ্রার মান ও মুদ্রা মূল্য অটুট রাখতে এখনই হাট-বাজারগুলোতে লেনদেনে করার প্রয়োজনী ব্যবস্থানীতি চালু করতে হবে।
নয়াশতাব্দী/এনএইচ/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ