নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রসালো লিচু বাজারে আসতে শুরু করেছে। ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়াগত বৈশিষ্ট্য ও নির্দিষ্ট জাতের কারণে সোনারগাঁওয়ের লিচু সবচেয়ে আগে বাজারে আসে বলে এর আলাদা খ্যাতি রয়েছে। আগাম বাজারে আসে বলে দেশের বিভিন্ন স্থানের লিচুর তুলনায় এ লিচুর চাহিদা থাকে বেশি। মিষ্টি ও সুস্বাদু হিসেবে এখানকার লিচু সারা দেশে বেশ পরিচিত। বৈশাখের শেষ সময়ে এ লিচু প্রথম বাজারে আসে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও চড়ামূল্যে বাগানিদের কাছ থেকে লিচু কিনেছেন মৌসুমি লিচু ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, সোনারগাঁওয়ে পর্তুগিজদের আগমনের পর অর্থাৎ ১৭০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রথম লিচুর চাষ শুরু হয়। পর্তুগিজরাই সোনারগাঁওয়ে প্রথম লিচু চাষ শুরু করেন। প্রথমে ছোট পরিসরে এর চাষ শুরু হলেও এখন তা ব্যাপকভাবে চাষের রূপ নিয়েছে। লিচু ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় প্রতিনিয়ত জমির মালিকরা নতুন নতুন লিচুর গাছ রোপণ করছেন।
সোনারগাঁওয়ে সাধারণত তিন প্রজাতির লিচুর ফলন হয়ে থাকে। এগুলো হলো- পাতি লিচু, কদমি লিচু ও বোম্বাই (চায়না-৩) লিচু। সোনারগাঁওয়ে সর্বপ্রথম পাতি জাতের লিচু, পরে কদমি লিচু ও সর্বশেষ বোম্বাই জাতের লিচু পেকে থাকে। আকারে বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় অনেকে এ লিচুকে ‘দিল্লিকা লাড্ডু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সোনারগাঁওয়ে সাধারণত তিন প্রজাতির লিচুর ফলন হয়ে থাকে। এগুলো হলো- পাতি লিচু, কদমি লিচু ও বোম্বাই (চায়না-৩) লিচু। সোনারগাঁওয়ে সর্বপ্রথম পাতি জাতের লিচু, পরে কদমি লিচু ও সর্বশেষ বোম্বাই জাতের লিচু পেকে থাকে। আকারে বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় অনেকে এ লিচুকে ‘দিল্লিকা লাড্ডু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সোনারগাঁওয়ের লিচুর বাগানে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বাগানের গাছে থোকায় থোকায় কাঁচা-পাকা লিচু ঝুলছে। গাছের ডালে ডালে ঝুলন্ত লাল টকটকে রঙের ছোট ফলের গুচ্ছ লিচুর দৃশ্য খুবই মনোরম। ব্যবসায়ীরা প্রতিটি গাছে বৈদ্যুতিক বাতি, টিনের বাজনা বাজিয়ে উচ্চ শব্দ করে বাদুড় ও কাকের উপদ্রব থেকে লিচুকে রক্ষা করতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কদমি লিচুর পাশাপাশি ‘পাতি’ লিচু ও ‘চায়না-৩’ জাতের লিচু বেশি চাষ হয় সোনারগাঁওয়ে। এই উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৮৫টি গ্রাম লিচুর জন্য প্রসিদ্ধ। তবে সোনারগাঁও পৌরসভার গোয়ালদী, হরিষপুর, দুলালপুর, পানাম গাবতলী, খাসনগর দীঘিরপাড়, চিলারবাগ, ইছাপাড়া, দত্তপাড়া, হাতকোপা, অজুন্দী, বাগমুছা, গোবিন্দপুর, লাহাপাড়া, বালুয়াদীঘিরপাড় ও বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হাড়িয়া, হামছাদী, দামোদরদী, পঞ্চবটী, মোগরাপাড়া ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া ও গোহাট্টা এলাকায় সবচেয়ে বেশি লিচুবাগান আছে। এসব এলাকার প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় ও আশপাশের ভিটাবাড়িতে লিচুর চাষ করা হয়।
স্থানীয় চাষিরা জানান, সোনারগাঁওয়ে বর্তমানে কদমি, মোজাফফরপুরী, বোম্বাই (চায়না-৩), এলাচি ও পাতি এ পাঁচ ধরনের লিচুর চাষ হয়ে থাকে। তবে অন্যান্য লিচু থেকে বর্তমানে কদমি লিচু চাষের প্রতি মনোযোগী হয়ে পড়েছেন চাষিরা। প্রতি বছর একেকটি বাগান চার থেকে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। তাই চাষিরা কোথাও একটু খালি জায়গা পেলে সেখানেই কদমি লিচুর বাগান তৈরি করছেন। সোনারগাঁওয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে। এ বাগানে বেশির ভাগই কদমি লিচু চাষ হচ্ছে। শুরুতে ১০০ কদমি লিচু ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন। বোম্বাই লিচুর ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পাতি লিচু ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন। তবে এ বছর দাম একটু বেশি হবে।
লিচু ব্যবসায়ী তুষার বলেন, অন্য অঞ্চলের লিচুর চেয়ে সোনারগাঁওয়ের লিচু আকারে একটু বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় এ লিচুর চাহিদা বেশি রয়েছে। আর সোনারগাঁওয়ের লিচু সবার আগে বাজারে আসে তাই এর চাহিদা একটু বেশি।
কুমিল্লা থেকে সাগর, তুহিন দুই বন্ধু এসেছিলেন লিচু কেনার জন্য সোনারগাঁও পৌরসভার ষোলপাড়া এলাকায়। তারা বলেন, সোনারগাঁওয়ের লিচুর একটা ঐতিহ্য আছে। বছরের শুরুতে এই লিচু বাজারে আসার কারণে এর স্বাদ নিতে আমাদের খুব আগ্রহ থাকে। এই আগ্রহের কারণেই এত দূর থেকে লিচু কিনে নিতে এসেছি।
রাইজদিয়া গ্রামের লিচু বাগানের মালিক লিয়ন জানান, সোনারগাঁওয়ে এবার লিচুর ফলন খুবই কম হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় লিচু অনেকটা ঝরে পড়েছে। তা ছাড়া আকারে অনেকটা ছোট হয়েছে।
স্থানীয় লিচু ব্যবসায়ী শাহা আলী বলেন, এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। যদিও খরায় অনেক লিচু ঝরে পড়েছে, তারপরও লাভ হবে বলে আশা করছি।
গোয়ালদী গ্রামের লিচুবাগান মালিক বলেন, এ বছর টানা তাপপ্রবাহে অনেক লিচুর গুটি ঝরে পড়েছে এবং লিচু পরিপুষ্ট হয়নি। লিচু ফলনের সময়ে ঝড়ের কারণে ক্ষতি না হলেও এবার খরার কারণে গাছেই নষ্ট হয়ে গেছে অনেক লিচু। লিচু পুষ্ট না হওয়ায় এ বছর আশানুরূপ দাম পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছি।
সোনারগাঁও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা বলেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে অন্তত এক মাস আগে সোনারগাঁওয়ের লিচু বাজারে আসে। উপজেলায় এ বছর ১১০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ হেক্টর বেশি। এরই মধ্যে সোনারগাঁওয়ের লিচু বাজারে চলে এসেছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সর্বদা লিচুচাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তা ছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নের মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা লিচুচাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গত বছর সোনারগাঁওয়ে ৭০০ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদিত হয়েছে। এ বছর ৭০০ থেকে ৭৫০ মেট্রিক টন উৎপাদিত হতে পারে। টানা তাপপ্রবাহে বেশ কিছু সংখ্যক লিচুর গুটি ঝরে পড়েছে, বড় অবস্থায়ও লিচু ঝরে পড়েছে। যার ফলে ফলনে কিছুটা ঘাটতি হতে পারে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ