গ্যাস ভর্তি উড়ন্ত বেলুন বিক্রি করে স্বাবলম্বী আউয়াল হোসেন। ১২ বছর ধরে বেলুন বিক্রি করছেন তিনি। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি বেলুন বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতিটি বেলুনের দাম ৫০ টাকা। এতে প্রতিমাসে আউয়াল হোসেনের আয় প্রায় ৬০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা।
বেলুন বিক্রেতা আউয়াল হোসেনের বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার রশিদাবাদ ইউনিয়নের সগ্রা গ্রামে। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহের নান্দাইলের বিভিন্ন হাটবাজারে বেলুন বিক্রি করছেন। স্ত্রী, ১ মেয়ে ও মা নিয়ে তার চার সদস্যের সংসার। সুখেই আছেন তিনি বেলুন বিক্রি করে।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে নান্দাইল পুরাতন বাজারে দেখা হয় আউয়াল হোসেনের সাথে। বাজারে তিনি হেঁটে হেঁটে রং বেরঙয়ের গ্যাস বেলুন বিক্রি করছেন। দলবেঁধে ছোট শিশুরা রঙিন বেলুন কিনছে। তার এই খেলনা গ্যাস বেলুনগুলো ছোট বাচ্চাদের অনেক প্রিয়।
জানা গেছে, আউয়াল হোসেন ২০১০ সালে এস এস সি পাশ করে অভাবের সংসারে হাল ধরতে ২০১১ সালে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি নেন। ৬ মাস চাকরি করার পর চলে আসেন বাড়িতে। ২০১২ সালে ৫ হাজার টাকা মাসিক বেতন চুক্তিতে মহাজনের বেলুন বিক্রির চাকরি নেন। অল্প বেতনে সংসার চলে না। তাই তিনি ২০১৯ সালে নিজেই শুরু করেন বেলুন বিক্রির পেশা।
বর্তমানে আউয়াল হোসেনের অধীনে ৫ জন কর্মচারী কাজ করছেন। প্রতিদিন তারা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বেলুন বিক্রি করছেন। মাসে তাদের বেলুন বিক্রি হচ্ছে ৩ লাখ টাকার ওপরে। বছরে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা।
ফুলানো বেলুন বাতাসের সঙ্গে দুলতে থাকে। বেলুনের এক মাথায় সুতো দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। আর রঙ- বেরঙের এই বেলুন নিয়েই বেরিয়ে পড়েন আউয়াল হোসেন। বিভিন্ন রঙ-বেরঙের বেলুন দেখে আকৃষ্ট হয় শিশুরা। অভিভাবকরাও শিশুদের আনন্দ দিতে বেলুন কিনে দেন। সব শ্রেণির শিশুদের বেলুন খুবই প্রিয়। আর সেই বেলুন বিক্রি করেই চলে বেলুন বিক্রেতা আউয়াল হোসেনের সংসার।
হাতি, ঘোড়া, জেব্রা, ডলফিন মাছ, কুমির,বিমান, পাখি, ফুল ও উড়োজাহাজসহ নানা পশু-পাখির আকৃতির বেলুন রয়েছে। যা গ্যাস দিয়ে ফুলিয়ে বেলুনকে পশু-পাখি ও জলজ প্রাণির মতো নানা আকৃতিতে পরিণত করা হয়।
আউয়াল হোসেন থাকেন গফরগাঁওয়ে ভাড়া বাসায়। তার দলে রয়েছে ৫ জন। খালি বেলুন কিনে গ্যাস ভর্তি করে প্রতিদিন সকালে বের হয়ে যান তারা। সারাদিন ঘুরে ঘুরে ফেরি করে বিভিন্ন হাটবাজারে, রাস্তার মোড়ে, স্কুল- কলেজের সম্মুখে তিনি বেলুন বিক্রি করেন। কোন অনুষ্ঠান বা সভা-সেমিনারে বেলুন বিক্রি হয় বেশি।
আউয়াল হোসেন জানান, সারা বছর চলে তার এই বেলুন বেচার ব্যবসা। তবে ঈদ আর পূজায় ভালো হয় বেলুন বিক্রি। গ্যাসবেলুন বিক্রির আয় থেকেই চলে তার সংসার। প্রতি তিন বা ছয়মাস পরপর তারা বাড়িতে যান। পরিবার ও স্বজনের সাথে সাক্ষাত শেষে আবার বেরিয়ে পড়েন নতুন কোন স্থানে বেলুন বিক্রির উদ্দেশ্যে।
আউয়াল হোসেন বলেন, প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি বেলুন বিক্রি হয়ে থাকে। তাতে প্রতিদিন ২ থেকে আড়াই হাজার টাকার বেলুন বিক্রি হয়।
নান্দাইল পৌরসভার বাসিন্দা রত্না বলেন, আমার ছেলের আবদার তাকে বেলুন কিনে দিতে হবে। তার আবদার মেটাতে একটি বেলুন কিনে দিয়েছি।
নার্সারি শ্রেণির ছাত্রী মেঘলা বলে, আমার পছন্দের বেলুন কিনেছি। অনেক আনন্দ লাগছে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ