ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলের বালুচর এখন আর অভিশাপ নয়। বালুচরের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ গড়ে উঠেছে। সমুদ্রের ছোট ঢেউয়ের মতো যেন দোল খাচ্ছে সবুজ পাতাগুলো। এমন সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ে দোলছে কৃষকের স্বপ্ন। এবার ব্রহ্মপুত্রের বালুচরে মিষ্টিকুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে।
ব্রহ্মপুত্রের বালুচরে মিষ্টিকুমড়া চাষ করে শত কৃষক এবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। বালুচরে কুমড়ার নান্দনিক দৃশ্য দেখে শুধু কৃষেকই নন যেন মুগ্ধ হচ্ছেন এলাকাবাসীও। নান্দনিক এ দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়াচ্ছে পথিকেরাও। অল্প সময় ও কম পুঁজি বিনিয়োগে অনেক কৃষক মিষ্টি কুমড়া চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের চরে চলতি মৌসুমে ৩০০ হেক্টর জমিতে কুমড়া চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ছাড়িয়ে গেছে। অন্য ফসলের চেয়ে তুলনামূলক কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিগন্তজুড়ে বালু চরে শুধু মিষ্টি কুমড়া চাষ করছে কৃষকরা। তবে মিষ্টি কুমড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের সবজি এই ধূ-ধূ বালু চরে চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, মিষ্টিকুমড়াসহ অন্যান্য সবজির পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে কৃষকেরা। সবুজে ছুঁয়ে গেছে পুরো চর এলাকা। এ ছাড়া চরআলগী, দত্তের বাজার, নিগুয়ারী ও পাঁচবাগ ইউনিয়নের চরাঞ্চলেও ব্যাপকহারে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে। বিশেষ করে টাঙ্গাব ইউনিয়নে ব্যাপকহারে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে।
এখন দিগন্তজুড়ে মিষ্টি কুমড়া খেতের সমারোহের পাশাপাশি বাম্পার ফলনে খুশি চাষিরা। শুধুমাত্র ধান চাষের উপর নির্ভরশীল কৃষি জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ এনে দিয়েছে নতুন গতি। এই উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া রাজধানীর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রফতানি হচ্ছে।
কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রকিব আল রানা জানান, টাঙ্গাব ইউনিয়নের বামনখালী, বাশিয়া, দুবাসিয়া ও টাঙ্গাব গ্রামে, পাঁচবাগ ইউনিয়নের চরশাঁখচূড়া, খুরশিদ মহল, গাভীশিমুল গ্রামে, চরআলগী ইউনিয়নের বালুয়া কান্দা, জয়ারচর ও চরআলগী গ্রামে এবং দত্তের বাজার ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাপকভাবে মিষ্টি কুমড়া উৎপাদিত হচ্ছে। এবার মিষ্টি কুমড়ার ফলনও ভালো হয়েছে।
টাঙ্গাব ইউনিয়নের বাশিয়া, বামনখালী ও দুবাসিয়া গ্রামের কৃষক এখলাছ মিয়া, শহীদুল ইসলাম, বুলবুল, ইয়াসিন, আসাদ মিয়া, মোশারফ হোসেন, ইসরাইল মৃধা, ফরিদ উদ্দিন, আবুল হোসেন, মাসুদ হাসান, বামন গ্রামের সুফল মিয়া, একলাছ উদ্দিন জানান, এ ইউনিয়নে মিষ্টি কুমড়া চাষে তারা অনেক লাভবান হয়েছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের অনুপ্রেরণায় ও তাদের পরামর্শক্রমে এই ফসলের চাষ করেন।
সারা বিশ্বে মিষ্টি কুমড়া একটি পরিচিত সবজি। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উজ্জ্বল বর্ণের সুস্বাদু এ সবজিটির সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ থাকা। এতে ভিটামিনের খনি আর তেমন কোনো সবজিতে পাওয়া যায় না। এ সবজিটিতে ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করে, উচ্চ রক্তচাপ কমায়, গর্ভবতী মায়েদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করে ও কুমড়ার আয়রন বাচ্চাকে অক্সিজেন দিতে সাহায্য করে এবং মায়ের রক্তশূন্যতা রোধ করে, ত্বক উজ্জল করে, দেহের জ্বালাপোড়া সমস্যা দূর করে ও চোখ ভালো রাখে।
নয়াশতাব্দী/এনএইচ/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ