ঢাকা, শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

বানিয়াচংয়ে শুঁটকি উৎপাদন শুরু, রপ্তানি হয় দুবাই-সৌদিসহ কয়েকটি দেশে

প্রকাশনার সময়: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:০০ | আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:২৮

হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে অর্ধশতাধিক ঘেরে পুরোদমে শুরু হয়েছে শুঁটকি উৎপাদন। বানিয়াচংয়ের শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হয় দুবাই, সৌদি আরব, কাতার, মালয়েশিয়া, ওমান, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

সরেজমিনে বানিয়াচংয়ের কয়েকটি জেলে পল্লীগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে শুঁটকি শুকানোর কাজে ব্যস্ত জেলেরা। উপজেলার রত্না, ভাটিপাড়া,আতুকুড়া, মিনাটের গাং ও নদীর চরগুলোতে অর্ধশতাধিক শুঁটকি মহালে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার জেলে শুঁটকি শুকানোর কাজ করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের অন্যান্য এলাকার জেলেরা ইউরিয়া সার, লবণ ও পাউডার দিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করে। শুঁটকি উৎপাদনে কেমিক্যাল ব্যবহার করায় স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ওইসব শুঁটকি খেতেও কোনো স্বাদ পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে বানিয়াচংয়ে শুঁটকি ঘেরগুলোতে বিষাক্ত ক্যামিকেল ব্যবহার না করায় এই শুঁটকির স্বাদ ও কদর আলাদা রয়েছে।

বানিয়াচংয়ের জেলে পল্লীগুলোতে শুঁটকি ক্রয় করতে আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে গুদাম মালিকরা ভিড় করছেন এবং অনেকেই জেলেদের অগ্রিম টাকা দাদন হিসেবে দিচ্ছেন। ক্রেতাদের কাছে বানিয়াচংয়ের জেলে পল্লীর শুঁটকির আলাদা সুনাম থাকায় অন্যান্য এলাকার শুঁটকিও বানিয়াচংয়ের শুঁটকি বলে চালিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও শুরু হয়েছে বাজারগুলোতে।

বানিয়াচংয়ের ভাটিপাড়ার সন্দ্বীপ শুঁটকি আড়তের মালিক জেলে নিখিল দাস জানান, আমাদের এখানে উৎপাদিত শুঁটকির মধ্যে লইট্যা, রুপচান্দা, পুটি, চিংড়ি, বাইম শুঁটকি অন্যতম। এসব এলাকার অন্যতম মানের শুঁটকি জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন রফতানি হয়, দুবাই, সৌদী আরব, কাতার, মালয়েশিয়া, ওমান, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। এবছরও দেশের চাহিদা মিটিয়ে বানিয়াচংসহ আশপাশের এলাকার শুঁটকি ঘের থেকে লাখ লাখ টাকার শুঁটকি বিদেশে রপ্তানি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঘের মালিকরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলেরা গুদাম মালিকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা দাদন এনে এসব শুঁটকি শুকানোর কারণে স্বল্প মূল্যে শুঁটকিগুলো তাদের হাতে তোলে দিতে হয়। বানিয়াচংয়ের প্রায় তিন থেকে চার হাজার জেলের অন্যতম আয়ের উৎস এই শুঁটকি ঘের। যেখানে শুকনো মৌসুমে শুঁটকি শুকিয়ে তা মালিকদের কাছে বিক্রি করে চলে তাদের সংসার চলে।

এবিষয়ে বানিয়াচং নন্দীপাড়া ভাদাউড়ির শুঁটকি ব্যবসায়ী ও মামু-ভাগিনা শুঁটকি আড়তের মালিক হেকিম উল্লাহ জানান, প্রতি বছর এ এলাকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। নদী ও হাওর থেকে আহরণ করা মাছ আধুনিক পদ্বতিতে শুকানোর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় জেলেদের বাড়ির সামনে প্রখর রৌদ্রে শুঁটকি শুকাতে হয়। তা ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক পথগুলো উন্নত না হওয়ায় উৎপাদিত শুঁটকি দূর-দুরান্তে সরবরাহ দিতে পরিবহন সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে।

তিনি আরও বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থায় বা পরিবহন খরচ কম হলে এখানকার শুঁটকি কম খরচে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো যেতো। শুঁটকি শুকানো কাজে নিয়োজিত জেলেরা সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে আরও ব্যাপকভাবে শুঁটকি উৎপাদন করার মাধ্যমে তা বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ