অভাবের সংসার। বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। বেড়ে ওঠা পর্যন্ত অভাবের মাঝেই কেটেছে তার দিন। সুখের মুখ দেখেননি কখনো। অর্ধাহারে, অনাহারে কেটেছে দিন। পিতা-মাতা দিতে পারিনি লেখাপড়ার সুযোগ। অনেক স্বপ্ন আশা ছিল লেখাপড়া করে একদিন বড় ধরনের চাকরি করবে। তবে সেই স্বপ্ন সবার পূরণ হয় না। সংসারে হাল ধরতে ছোটকাল থেকেই কাজে লেগে যান। এখন ফেরি করে পণ্য বিক্রি করে সফলতার মুখ দেখেছেন তিনি। ছেলে-মেয়েরা আজ উচ্চশিক্ষিত। পাকা ঘর বাড়িও নির্মাণ করেছেন।
যাকে নিয়ে কথা হচ্ছে তার নাম আব্দুর রশিদ। বয়স৫০। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দ।
চরকাটি হারী গ্রামে কথা হয় রশিদের সাঙ্গে। জীবন-জীবিকার তাগিদে তিনি পরিবার ছেড়ে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করছেন নানা রকমের জিনিস। বাইসাইকেলে করে ভ্রাম্যমাণ দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র সাজিয়ে নিয়ে ফেরি করে বিক্রি করেন তিনি।
রশিদের ভ্রাম্যমাণ দোকানে পাওয়া যায় স্টিলের থালা, টিফিনবক্স, মগ, প্লাস্টিকের বাটি, বালতি, ট্রে, মোড়া, বল বদনা, খাড়া, তালা ব্যাংক, চামচ, খেলনা, গাড়ি, ঢালা, লবনদানি, বদনা, টুল, প্লাস্টিকের দা, বটি বাচ্চাদের খেলনা, আচার, ফিতা, ও কসমেটিকসসহ প্রায় ১০০ প্রকারের জিনিস। ৫০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা মূল্যের জিনিস রয়েছে তার দোকানে। তিনি রাজধানী ঢাকা থেকে এ মালামাল কিনে থাকেন।
সকাল ৮টার আগেই গ্রামে গ্রামে দল বেধে পণ্য নিয়ে শুরু হয়ে যায় তাদের হাঁকাহাঁকি। তাদের দলে রয়েছেন ৪০ জন। স্থানীয় হোসেনপুর বাজারে ভাড়া বাসায় থাকেন তারা। প্রতিদিন বিভিন্ন রকমের হাঁকডাক ও বাঁশি বাজিয়ে
সাইকেলে পণ্য সাজিয়ে গ্রামের পর গ্রাম ছুটে চলেন। তাদের বিভিন্নরকম ছন্দমাখা বাক্যে মুখরিত থাকে গ্রামীণ জনপদ। তাদের ডাকে বাড়ির পুরুষরা কিছুটা বিরক্ত হলেও নারীরা কান পেতে থাকেন কখন আসবে ফেরিওয়ালা।মানুষের মাঝে নিত্যপণ্য জিনিসপত্র পৌঁছে দিয়ে গ্রামের পাড়া-মহল্লার গৃহিণীদের কাছে জনপ্রিয়তা কেড়েছে ফেরিওয়ালা। এতে ব্যবসায়িকভাবে সফলতার সাথে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা।
উপজেলার চরকাটি হারী গ্রামের গৃহিনী বিলকিস, অঞ্জনা আক্তার জানান, সংসারের ব্যস্ততার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হাটবাজারে যাওয়া সম্ভব হয় না। এসব পণ্যই ফেরিওয়ালারা ডেকে ডেকে বিক্রি করেন। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য সাশ্রয়ী।
চিরচেনা জীবন জীবিকার তাগিদে হরেক রকম ব্যবসার ভিড়ে সাফল্যের মুখ দেখেছেন ফেরিওয়ালা আ. রশিদ।
তিনি জানান, সংসারের তার চার ছেলে মেয়ে। বড় মেয়ে অনার্স পাস করে স্থানীয় দাখিল মাদরাসায় চাকরি করে। এক ছেলে সমাজকর্মে অনার্স পড়ছে। বাড়িতে পাকা ঘর নির্মাণ করেছে। ফেরি আয় থেকেই সংসারের ভরণপোষণ ও ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া খরচ চলছে।
রশিদ জানান, এ ব্যবসায় বেচাকেনা ভালোই হয়। তার অধিকাংশ ক্রেতাই গ্রামের মহিলা ও শিশু। যারা কেনাকাটার জন্য বাজারে যায় না। তারাই তার কাছ থেকে নানা জিনিসপত্র কিনে থাকেন। রঙিন বিভিন্ন খেলনা শিশুরা কিনে থাকে। অন্যান্য ব্যবসার মতো বাকিতে কোনো জিনিস বিক্রি হয় না। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার জিনিস তিনি বিক্রি করতে পারেন। বিশেষ করে দুই ঈদ, পহেলা বৈশাখ ও পূজার সময় তার বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি হয়। সব খরচ বাদে প্রতিমাসে তার ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় থাকে। প্রতিদিন তিনি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ফেরি করতে যান।
একমাস-দুইমাস পরপর গ্রামের বাড়িতে প্রিয়জনের টানে ছুটে যান রশিদ। সংসারে বাবা-মা, স্ত্রী নিয়ে এখন তার দিন ভালোই কাটছে।
নয়া শতাব্দী/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ