ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

চলনবিলে ঐতিহ্যবাহী বাউত উৎসব

প্রকাশনার সময়: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:১৫ | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:৪০

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ এবং পাশ্ববর্তী নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার প্রায় তিন শতাধিক মাছ শিকারী পলো উৎসবে মেতেছিল। তা‌দের কণ্ঠে ধ্বনিতো হ‌চ্ছিল ‘আল্লা, আল্লা, রাসুল বলরে- জাগো জাগো জাগো রে, সবাই মিলে মাছ ধরতে চলোরে।’

চলনবিল অধ্যূষিত অঞ্চলে দেশীয় মাছের প্রাচুর্যের কারণেই বিভিন্ন উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ শিকারের এ রেওয়াজ শতবর্ষের। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার তাড়াশ উপজেলার মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের নাদোসৈয়দপুর কাটা খালে সকাল থে‌কে পলো উৎসব শুরু হয়ে চলে পড়ন্ত দুপুর পর্যন্ত।

সেখানে পলো, বেড় জাল, হেসি জাল, ঝা‌কি জাল, মই জালসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ শিকারের উপকরণ দিয়ে নাদোসৈয়দপুর, বাহির পাড়া, কুশাবাড়ি, মাগুড়া বিনোদ, আমবাড়িয়া, বিন্নাবাড়ি, গুরুদাসপুরের পিপলা, শিকারপুর, রুহাই, বিলশা এলাকার তিন শতাধিক নানা বয়সী ও শ্রেণি-পেশার মানুষ এই মাছ শিকারে উৎসবে অংশ নেন।

নাদোসৈয়দপুর বাহির পাড়ার কৃষক মুসা মন্ডল (৬৫) জানান, একটি জলাশয়ে যখন গ্রামের কিংবা এলাকার শত শত লোকজন একই সাথে একই স্থানে মাছ শিকারে নেমে পড়েন তখন ওই জলাশয়ের পানি ঘোলা হয়ে যায়। আর এতে করে ওই জলাশয়ের ঘোলা পানিতে থাকা মাছগুলো জেগে উঠতো। আর তখনই মাছ শিকারীরা মনের আনন্দে মাছ শিকার করে খালৈই বা পাতিল বোঝাই করে বাড়িতে ফিরতো। যা চলনবিলাঞ্চলে পলো বা বাউত উৎসব নামে পরিচিত।

পিপলা গ্রামের আলাউদ্দিন (৫৬) বলেন, মাছ যাই পাই মাছ ধরার এ আয়োজনে আসলেই মন ভরে যায়। আর তাড়াশের বিন্নাবাড়ি গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, যদিও পলো উৎসবে আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না। তারপরও যখন শুনি এলাকায় পলো বা জাল দিয়ে এক সাথে অনেক মানুষ মাছ ধরবে। তখন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারি না।

পলো উৎসবে আসা নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা শিকারপুর গ্রামের মো. কালাম হোসেন (৪২) জানান, পলো বা বাউত উৎসবে মাছ শিকার করার বাতিক আমার কিশোর বয়সেই পেয়ে বসে। খবর পেলাম তাড়াশের কাটা খালে পলো উৎসব হবে। তা জানার পর ১২ কিলোমিটার পথ মারিয়ে এখানে এসেছি।

বাউত বা পলো উৎসব প্রসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান অনুষদ বিভাগের ডিন ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম বলেন, মাছ পাওয়া যাক আর না যাক বাউত বা পলো উৎসব চলনবিলের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। তবে আগের মতো সংখ্যায় বেশি না হলেও তবুও বাউত বা পলো উৎসব চলনবিলের অতীত ঐতিহ্য হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। আর মধ্য চলনবিলে শীত মৌসুমে পানি তেমনটি না থাকলেও পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর ও নাটোরের সিংড়া এলাকায় এখনো বাউত বা পলো উৎসব চোখে পড়ে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ