ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে সফল অহিদুন নবী

প্রকাশনার সময়: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:৫৬

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মাছ চাষে সফল হয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা অহিদুন নবী। পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলছেন মৎস্য খামার। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে প্রতি ব্যাচে প্রায় এক থেকে দুই লাখ টাকা আয় করেন এই উদ্যোক্তা।

অহিদুন নবী (৩০) মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ভগবতিপুর এলাকার রুস্তম আলী ভূঁইয়া বাড়ির বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের ছেলে। ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসা থেকে স্নাতক (দাওরা) পাশ করেন তিনি।

বর্তমানে এলাকার বেকার তরুণদের কাছে আইডল নবী। প্রথমে বাড়ির পাশে ১০ শতক পুকুরে শুরু করেন বায়োফ্লক (পরিবেশবান্ধব উপায়)পদ্ধতিতে মাছের পোনা উৎপাদন। এখন তার মাছ চাষের পরিধি অনেক বেড়েছে। একইসাথে রয়েছে গরুর খামারও।

সরেজমিনে অহিদুন নবীর প্রকল্পে গিয়ে দেখা গেছে, বায়োফ্লকের পুকুরটি টিন দিয়ে চারদিকে ঘেরা দেওয়া। ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেছে ছোট্ট একটি পুকুরে মাছের পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। পুকুরের ওপরে নেট দেওয়া হয়েছে। অহিদুন পুকুরে খাদ্য দিচ্ছেন। ছোট্ট এই পুকুরে একসাথে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মাছের পোনা উৎপাদন করছেন তিনি। এ সময় এই পর্যন্ত আসার পেছনের সংগ্রাম ও সফলতা নিয়ে তার সাথে কথা হয়।

অহিদুন নবী জানান, পড়াশোনা শেষ করে প্রথমে দেশের বাইরে যাওয়ার চিন্তা ছিল তার। কিন্তু হঠাৎ তার বাবা মারা যাওয়ায় বিদেশ যাওয়ার চিন্তা বাদ দেন। চাকরি করবেন না বলে আগে থেকে মনস্থির করেন তিনি। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইউটিউবে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ দেখে আগ্রহী হোন। এরপরে চট্টগ্রাম শহরে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নেন অহিদুন।

তিনি আরও জানান, ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে পুঁজির সংকট বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অনেক কষ্টে দুই লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে ২০১৯ সালে পোনা উৎপাদন মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। প্রথমে ধাক্কা লাগে তার ব্যবসায়। সব মাছ মারা গিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা লোকসান হয়। এর ওপর বছর না ঘুরতেই করোনার কারণে বড় ক্ষতির মুখে পড়েন। ২০২০ সালের শেষের দিকে লাভের মুখ দেখে তার উদ্যোগ। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। বাড়িতে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে প্রতি ব্যাচে প্রায় এক থেকে দুই লাখ টাকা আয় হয় তার।

এই আয় দিয়ে উপজেলার মৎস্যজোন খ্যাত টেকেরহাট এলাকায় নিজে ৫ একর জায়গায় মাছ চাষ শুরু করেছেন। যৌথভাবে চাষ করছেন আরও প্রায় ৩০ একর প্রকল্পে। পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন গরুর খামার। দুইটি গরু দিয়ে শুরু করে এখন তাঁর খামারে ২৬টি গরু রয়েছে। সব মিলে অহিদুন নবীর ব্যবসার মূলধন এখন ৪০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

তরুণ উদ্যোক্তা বলেন, প্রথমে বিভিন্ন কোম্পানির রেনু ক্রয় করে নিয়ে আসি। এরপর তিনমাস ধরে সেগুলো বড় করে থাকি। যখন প্রতিকেজি ৫০ পিস মাছ হয় তখন বাইরে বিক্রি করা হয়। প্রতি ব্যাচে ১ লাখ মাছের পোনা উৎপাদন হয়। বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছের পোনা অন্য পোনার তুলনায় অনেক ভালো থাকে। আমার পুকুরে উৎপাদিত পোনার বেশ চাহিদা রয়েছে। মাছ চাষিরা অগ্রিম বুকিং দিয়ে রাখে। মিরসরাই ছাড়াও লক্ষীপুরের রায়পুর, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা থেকে এসে মাছের পোনা নিয়ে গেছে।

তার দেখাদেখি আরও ৪ জন এই পদ্ধতিতে মাছের পোনা উৎপাদন করছে। যারা আসে, তাদেরকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র কর্মকর্তা মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, অহিদুন নবী নামের এক তরুণ মাছ চাষ করছে বলে শুনেছি। আমি এখনো তার প্রকল্পে যাইনি। শীঘ্রই আমি নবীর প্রকল্পে গিয়ে দেখে আসবো।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ