ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ জরুরি 

হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি

প্রকাশনার সময়: ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:৫১

‘বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,/ কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই,/ আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে/ তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।’ রজনীকান্ত সেনের এমন কবিতার লাইন ছোটোবেলার পাঠ্য বইয়ে কমবেশি সবাই আমরা পড়েছি। রজনীর কাছে প্রকৃতি ও পাখি তখন এমনই ভাবে ধরা দিয়েছিলো। কিন্তু রজনীর সময়কাল এখন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এখন আর খুব একটা চোখে পড়ছে না বাবুই পাখির বাসা।

সঠিক পরিবেশ ও খাদ্যের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি। অথচ এখন থেকে ২৫বছর পূর্বেও রাজশাহী, নওগাঁ জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ সকল গ্রাম-গঞ্জের তালগাছে ব্যাপক বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ত। এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই ছিলো না। মানুষের মনে চিন্তার খোরাক যোগাত এবং স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করতো।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাবুই হচ্ছে চড়ুই সাদৃশ্য পাখি। গাছে ঝুড়ির মতো চমৎকার বাসা বুনে বাস করায় এ পাখির পরিচিতি জগৎজুড়ে। এ জন্য অনেকেই একে তাঁতি পাখিও বলে থাকেন। সারা বিশ্বে বাবুই পাখির প্রজাতির সংখ্যা পায় ১১৭। তবে বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বাবুই পাখি বসবাস করে বলে জানা গেছে।

বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, রাতের বেলায় তাদের ঘর আলোকিত করার জন্য জোঁনাকি পোকা ধরে নিয়ে তাদের ঘরে রাখে এবং সকাল হলে আবার তাদের ছেড়ে দেয়। প্রজনন সময় ছাড়া অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী পাখির গায়ে কালো কালো দাগসহ পিঠ হয় তামাটে বর্ণের। নীচের দিকে কোনো দাগ থাকে না। ঠোঁট পুরো মোচাকার, লেজ চৌকা। তবে প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখির রং হয় গাঢ় বাদামি। বুকের উপরের দিগ হয় ফ্যাকাশে। অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির চাঁদি পিঠের পালকের মতোই বাদামি। বুকের কালো দোড়া ততটা স্পষ্ট নয়। প্রকট ভ্রুরেখা কানের পিছনে একটি ফোঁটা থাকে। বাবুই পাখি সাধারণত তালগাছেই বাসা বাঁধে। তবে বর্তমানে তাল গাছ কমে যাওযায় কিছু কিছু পাখি নিম গাছে বাসা বাধা শুরু করেছে। ধান, চাল, গম ও পোকা-মাকড় প্রভৃতি তাদের প্রধান খাবার।

পাখি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. বিধান চন্দ্র দাস বলেন, বৃহত্তর রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল ও নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলায় তাল, নারিকেল ও খেজুর গাছে বাবুই বসবাস করত। ফুটিয়ে তুলত বাসার শৈল্পিক সৌন্দর্য। বর্তমানে এসব এলাকায় গাছ হারাতে বসেছে, হারাতে বসেছে বাবুই পাখিও।

এই প্রাণিবিজ্ঞানী বলেন, মানবসৃষ্ট নানা কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনিষ্ট হচ্ছে। যার কারণে পাখিদের আবাসস্থল ও খাদ্যের জন্য চরম সংকট দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার ও নগরায়নের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ঐতিহ্যের ধারক বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রাণিসম্পদ। এগুলো রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেন তিনি।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ