দা, বটি, চাকু, ছুরি ইত্যাদি শাণ (ধার) দেন রাজ আলী মিয়া। প্যাডেলচালিত বিশেষ যন্ত্র কাঁধে নিয়ে হাঁটছেন আর উচ্চস্বরে বলছেন, শাণ দিবেন শাণ! দা-বঁটি, চাকু ধার..!
সুনামগঞ্জের শাল্লার বাহাড়া ইউনিয়নের মুছাপুর গ্রামের মৃত সুন্দর আলী মিয়ার ছেলে রাজ আলী মিয়া (৫০)। স্ত্রী ও তিন ছেলে নিয়ে ৫ জনের অভাবের সংসার।
সংসারের অভাব ঘোচাতে ও জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পথ হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন দা, বটি ধার দেয়ার কাজ। আর এই কাজ করতেই নিজের এলাকা ছেড়ে রাজ আলী মিয়াসহ চারজন এসেছেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায়।
বুধবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে নান্দাইল উপজেলার বীরকামট খালী গ্রামের মড়লবাড়িতে রাজ আলী মিয়া (৫০) নামে এক শাণওয়ালার দেখা মেলে। তিনি দা, বটি ও চাপাতি শাণ করছিলেন। শিলপাটা ধার দেওয়ার দৃশ্য মুগ্ধ হয়ে দেখছেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।
ছোট একটি কাঠের কাঠামোর গায়ে বিশেষভাবে চাকা, প্যাডেল আর চাকতি লাগানো বিশেষ এক যন্ত্র এটি। লোহার বস্তুটি চাকতির কার্নিশে ধরতেই আগুনের ফুলকি ছিটিয়ে কিচকিচ শব্দ হয়। চাকতি ঘোরানোর জন্য পা দিয়ে প্যাডেল মারছেন তিনি।
লোহা ও চাকতির ঘর্ষণে ভোঁতা দা আর চাপাতি চকচকে হয়ে উঠছে। পায়ের প্যাডেল থামিয়ে একটু পরপর হাতের আঙুল দিয়ে ধার পরীক্ষা করছেন শাণওয়ালা।
স্থানীয় লোহিতপুর গ্রামের মোত্তাকিন বলেন, আমি একটি বটি ও চাপাতি ধার করাইছি। ধার করার লোক পাইছি তাই ধার করাইয়া রাখলাম। দা ধার করতে নিছে ২০ টাকা, চাপাতি নিছে ৩০ টাকা। করতে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে।
রাজ আলী মিয়া জানান, ‘তার ৫০ বছর বয়স হয়েছে। একযুগ ধরে দা-বঁটি ধার দেন। গ্রামে-পাড়ায় ঘুরে ঘুরে দিনে ৪শ থেকে ৫শ টাকা আয় হয়। এই আয় দিয়েই চলে তার অভাবের সংসার। জমি সম্পদ কিছুই নেই, বসতভিটা আছে শুধু।
তিনি জানান, এখন আগের মতো আর কাজ হয় না। বর্তমান সময়ে নতুন নতুন যন্ত্র এসেছে, সবাই সেখানেই যায়। ফলে আয় কম হয়।
রাজ আলী বলেন, আকার অনুযায়ী প্রতিটি, দা ২০, কাচি ৩০, বটি ২০, চাপাতি ৪০, পাটা ৮০ টাকা মজুরি নেন তিনি। দৈনিক কাজ করে আয় করেন ৪শ থেকে ৫শ টাকার মতো। প্রতিমাসে তিনি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করেন। ঈদে বেশি আয় হয়।
নয়া শতাব্দী/এসএ/এসআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ