ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভিক্ষা নয় পরিশ্রমই শাহ আলীর নেশা

প্রকাশনার সময়: ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:৫৮ | আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:০২

ভিক্ষা নয় পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করছেন এক হাত বিহীন দিনমজুর শাহ আলী (৪৪)।চার সদস্যের পরিবারের একমাত্র উর্পাজনকারী তিনি। শাহ আলীর দিনমজুরির আয়ে কোনোরকমভাবে সংসার চলে।

শাহ আলী কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়াল ডাঙা ইউনিয়নের গতিয়াশাম গ্রামের সাইয়েদ আলীর ছেলে। বর্তমানে ঘরবাড়ি হারিয়ে তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরখিতাব গ্রামে অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন।

এলাকায় কাজ না থাকলে শাহ আলী ছুটেন ঢাকা, টাঙ্গাইল, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। লেখাপড়া না থাকায় কৃষিকাজ করে যে টাকা উপার্জন করতেন তা দিয়ে বেশ ভালোই চলছিল পরিবারটির। প্রায় তিন বছর আগে বগুড়ায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় বাম হাতটি হারান তিনি। একই বছরে একমাত্র সম্বল বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। জীবনের এমন পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েন। পুরো পরিবার জুড়ে নেমে আসে অন্ধকার। তবে তিনি থেমে থাকেননি। নিজেকে প্রতিবন্ধী না ভেবে এক হাত নিয়েই ধরেন সংসারের হাল। যদিও আগের চেয়ে তার উপার্জন কমেছে তবুও পরিবারকে বাঁচাতে দিন-রাত পরিশ্রম করে চলছেন শাহ আলী।

শাহ আলী জানান, আমার জমিজমা বলতে ১৬ শতক ভিটেমাটি ছাড়া কিছু ছিল না। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চলতো। এলাকায় কাজ না থাকলে জেলার বাইরে ধান কাটতে যেতাম। ২০২১ সালে বগুড়ায় ধান কাটতে যাই। সেখানে সিএনজিতে করে বাম দিকে বসে এক হাত বের করা ছিল। পথে ট্রাক আর সিএনজির ধাক্কায় আমার বাম হাতটি রাস্তায় পড়ে যায়। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে সঙ্গে থাকা লোকজন আমাকে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়।

তিনি আরও জানান, এক মাস চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে আসি। ক্ষত না শুকাতেই শুরু হয় নদীভাঙন। এক রাতেই তিস্তা নদী আমার ভিটেমাটি কেড়ে নেয়। মাথা গজার ঠাঁই না থাকায় দ্বীপ চরে বছরে ৫ হাজার টাকা ভাড়ায় ১০ শতক জমিতে কোনো রকমে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। চার মেয়ে এবং স্ত্রীসহ ছয়জনের সংসার। এরমধ্যে দুটি মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। এখন চারজনের ভরণপোষণ আমার এক হাতের উপর নির্ভরশীল। আমি এই এক হাত দিয়ে ধান কাটা-মাড়াই, মাটি কাটা-নিড়ানি, ইট ভাঙাসহ বিভিন্ন কাজ করে থাকি। তবে আমার এক হাত নেই বলে আগের মতো কেউ আর কাজে নিতে চায় না। তাই এই চরের মধ্যেই কাজ করে খেয়া না খেয়ে দিন চলছে। শরীরে যতক্ষণ শক্তি আছে ততক্ষণ কাজ করে যাবো। তবুও ভিক্ষাবৃত্তির মতো নিচু কাজ করবো না।

শাহ আলীর স্ত্রী আকলিমা বেগম বলেন, আগে মোটামুটি ভালো ছিলাম। স্বামীর হাত হারানোর পর প্রায় তিন বছর ধরে আমরা কষ্টে আছি। সরকার তিনমাস পর দুই হাজার দুই শত টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা দেয় এবং এলাকায় কৃষি কাজ করে তা দিয়ে চলেছে সংসার। আমাদের চারটা মেয়ে একটা ছেলে সন্তান নেই যে সংসারের হাল ধরবে। কষ্ট হলেও ওই মানুষটার এক হাতের উপর ভরসা ছাড়া উপায় নেই। দিন যতই যাচ্ছে সংসারে খরচ বাড়ছে দুঃশ্চিন্তাও বাড়ছে। আল্লাহ জানে ভবিষ্যতে আমাদের ভাগ্যে কি আছে?

প্রতিবেশী সাইফুল ইসলাম বলেন, শাহ আলী ও তার পরিবারের খুব কষ্টে দিন কাটছে। এক হাতের উপর চলছে পুরো সংসার। মেয়ের লেখাপড়ার খরচ ও পরিবারের খরচ যোগান দিতে না পারায় মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। সরকার যে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয় তাই দিয়ে কি আর এতগুলো মানুষের জীবন চলে।

ঘড়িয়াল ডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ. কুদ্দুস বলেন, দুর্ঘটনায় এক হাত হারিয়ে শাহ আলী পরিবার নিয়ে কষ্টে আছেন। তার নামে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে পরিবার চলার মতো কোনো সহযোগিতা পেলে হয়তো তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো।

জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ বলেন, দুর্ঘটনায় হাত হারানো শাহ আলীর বিষয় জানতে পারলাম। আরও খোঁজ-খবর নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সহায়তাসহ তাকে কিভাবে স্বাবলম্বী করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএ/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ