ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

নকলায় বাণিজ্যিকভাবে ওলকচু চাষ শুরু

প্রকাশনার সময়: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:১২

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথমবারের মতো শেরপুরের নকলায় ওলকচু ও গাছ আলুর বানিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। নকলা উপজেলায় কৃষিতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে মাদ্রাজি জাতের ওলকচু ও গাছ আলুর চাষাবাদ।

কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকেরা ঝুঁকছেন ওলকচু চাষে। এটি একটি অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন কন্দাল জাতীয় গুল্ম উদ্ভিদ। ওলকচু বেশি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় নির্দিষ্ট কিছু রোগের পথ্য হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও সবজি হিসেবে খাওয়া যায় বলে বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে।

উপজেলায় প্রথমবারের মতো উচ্চ ফলনশীল সববি ওলকচু বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন উপজেলার ৫ জন কৃষক। তাদের প্রত্যেককে ২০ শতাংশ জমিতে মাদ্রাজি জাতের ওলকচু চাষের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। এতে করে ৫ জন কৃষক মোট এক একর জমিতে চাষের জন্য প্রদর্শনী পেয়েছেন। তবে তারা সবাই প্রদর্শনীর ২০ শতাংশ জমি ছাড়াও আরো ২০ থেকে ৫০ শতাংশ করে জমিতে ওলকচু চাষ করেছেন।

এ ছাড়া বাড়ির আঙিনা ও পরিত্যক্ত জমিতে বিছিন্নভাবে ওলকচুর চাষ হয়েছে, যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্ট উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ।

তবে এ বছর উপজেলায় অন্তত ১০ একর জমিতে ওলকচুর আবাদ হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে। বিলুপ্তির পথে স্থানীয়ভাবে অনেকটা অপরিচিত এ সবজি থেকে কয়েকগুণ লাভের আশা করছেন চাষিরা। নকলার মাটি ওলকচু চাষের উপযোগী ও কম খরচে বেশি ফলন পাওয়ায় বাণিজ্যিকভিত্তিক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

প্রদর্শনী প্রাপ্ত কৃষকসহ উপজেলার অর্ধশতাধিক কৃষককে ওলকচু চাষের পদ্ধতি ও চাষাবাদ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরে ৫ জন কৃষককে ২০ শতক করে জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য প্রদর্শনী হিসেবে মাদ্রাজি জাতের ওলকচুর বীজ, সার ও পরিচর্যার জন্য খরচ প্রদান করা হয়। চৈত্র মাসে (মার্চ) জমিতে ওলকচুর বীজ রোপণ করতে হয়। ওল কচুর পূর্ণতা পেতে ৬ মাস থেকে ৮ মাস সময় লাগে। সেই হিসেবে জমি থেকে ভাদ্র মাস থেকে ওলকচু উত্তোলন করা শুরু হয়।

এ সময়ে একেকটি গাছে ৬ কেজি থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত ওলকচু হয়ে থাকে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও ভালোভাবে পরিচর্যা করলে অপেক্ষাকৃত অনুর্বর জমিতে ওলকচু চাষ করে যেকোন কৃষক সফতা পেতে পারেন। বর্তমানে বাজারে দাম ও চাহিদা ভালো থাকায় বাণিজ্যিকভাবে ওলকচু চাষ করে লাভবান হওয়া সহজ। বাজারে প্রতি কেজি ওলকচুর দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ভূরদী ব্লকের বানেশ্বরদী গ্রামের কৃষক এমদাদুল হকের ওলকচুর প্রদর্শনী প্লটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার খেতের শতকরা ২০ ভাগ গাছের পাতা হলুদ হয়ে গেছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, কচু সংগ্রহের সময় ঘনিয়ে আসলে ওলকচু গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়।

স্থানীয় এক কৃষক আমিন মিয়া জানান, এমদাদুল হকের ওলকচুর আবাদ দেখে অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তা ছাড়া অনেকে পলীক্ষামূলকভাবে বাড়ির আঙিনায় ওলকচু লাগিয়েছেন। তাদের ফলন ভালো হয়েছে। আগামীতে তারা সবাই বানিজ্যিকভাবে চাষ করবেন।

ওলকচু গাছে তেমন কোনো রোগ বালাই হয় না, তবে পাতা ও কাণ্ড পচা রোগ দেখা যেতে পারে। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার, গোড়া উঁচু করে দেয়া ও গোড়ায় খড় বা আচ্ছাদন দিয়ে ঢেকে দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এতে জৈব সার বেশি ব্যবহার করা ভালো। তবে রাসায়নিক সার যেমন ইউরিয়া, পটাশ, টিএসপি সারও কিছু দেওয়া যায়। গাছ লাগানোর ৭ থেকে ৯ মাস পর যখন গাছের প্রায় সব পাতা যখন হলুদ হয়ে যায় তখন ওলকচু সংগ্রহ করতে হয় বলে জানান উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম।

উপযুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে পারলে অনুর্বর ও ছায়াযুক্ত স্থানেও ওলকচু চাষ করা যায়। এই ওল চাষ সম্প্রসারণে কৃষকদের উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধকরণের চেষ্টার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত পরামর্শ সেবা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। কন্দাল ফসল হিসেবে ওলকচুর চাষ নকলা উপজেলার কৃষিতে নতুন সম্ভবনাময় ফসল হিসেবে চিহৃত করছেন অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত কৃষকরা। আগামীতে এ ফসলের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, তৎকালীন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ-এর একান্ত প্রচেষ্টায় নকলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৫টি প্রদর্শনী প্লটে ওলকচু চাষ করা হয়েছে। তা ছাড়া কৃষকের আগ্রহে বিচ্ছিন্ন ভাবে আরো অন্তত ১০ একর জমিতে ওলকচুর আবাদ করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী জানান, দেশে কন্দ জাতিয় ফসলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে কিন্তু সেই তুলনায় উৎপাদন অনেক কম। তাই সরকার দেশে কন্দ জাতিয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে করে ওলকচু, গাছ আলুর মত অপ্রচলিত অথচ উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগ নিতে পেরেছে কৃষি বিভাগ। এমন একদিন আসবে যেদিন দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে কোরিয়া ও জাপানসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও জানান, এই ফসল উৎপাদন করতে কৃষকরা কম খরচে কয়েকগুণ লাভ পাচ্ছেন। এই কচু জাতীয় ফসল যখন বাজারে আসে তখন অন্যান্য সবজি তেমন একটা থাকে না, তা ছাড়া বালাইনাশক ব্যবহার না করায় এই সবজি শতভাগ নিরাপদ তাই চাহিদাও বেশি। ওলকচু গাছের তেমন রোগ বালাই নেই, পরিশ্রম ও খরচ দুটোই কম লাগে। এসব বিবেচনায় আগামীতে ওলকচু চাষে জমির পরিমাণ ও কৃষকের সংখ্যা বাড়বে বলে তিনি আশা করছেন।

নকলায় প্রথমবারের মতো উচ্চ ফলনশীল সববি ওলকচু বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়েছ। ৫ কৃষককে প্রতিজনে ২০ শতাংশ জমিতে মাদ্রাজি জাতের ওলকচু চাষের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। তবে তারা সবাই প্রদর্শনীর ২০ শতাংশ জমি ছাড়াও আরো ২০ থেকে ৫০ শতাংশ করে জমিতে ওলকচু চাষ করেছেন। প্রদর্শনী প্রাপ্ত কৃষকদের সরকারিভাবে বীজ, সার ও পরিচর্যার জন্য খরচ দেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ উপজেলা ও জেলা কৃষি অফিসারগণ কৃষকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ও বিভিন্ন পরামর্শ সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন বলেও জানান এ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ