ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘বারি’ জাতে দীর্ঘ হচ্ছে আমের মৌসুম

প্রকাশনার সময়: ১৮ আগস্ট ২০২৩, ১৫:০৩ | আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৩, ১৫:০৭

মধুমাস (জ্যৈষ্ঠ) শেষ হয়েছে দুই মাস আগেই। এ মধুমাস ঘিরে দেশে যেসব ফল পাওয়া যায়, তার প্রায় সবই ফুরিয়েছে। এখন মিলছে শুধু আম-কাঁঠাল। কাঁঠালও একেবারে শেষ দিকে। বাজারে মিলছেও কম। তবে কিছুটা ভিন্ন চিত্র আমের ক্ষেত্রে। মৌসুমের একেবারে শেষদিকেও পাবনার ঈশ্বরদীর বাজারে এখনো আমের সরবরাহ ভালো। আম্রপালি ও বারি জাতের কল্যাণে এখনো মিলছে আম।

ক্রেতারা বলছেন, বাজারে বেশ কয়েক জাতের আম এখনো পাওয়া যাচ্ছে। অন্যবারের চেয়ে আগস্ট মাসে এবার আমের সরবরাহ কিছুটা বেশি। দাম একটু বেশি হলেও যেসব আম পাওয়া যাচ্ছে, তা স্বাদ-গন্ধে ভালো।

বিক্রেতারা জানান, দুই বছর আগেও এ সময়টাতে (আগস্ট) আম্রপালি ও ফজলি জাতের কিছু আম পাওয়া যেত। বারি আম থাকলেও সরবরাহ খুব কম ছিল। কিন্তু এবার ফজলি, আশ্বিনা আমের সরবরাহ কম, আম্রপালি ও বারি আম বেশি। শেষ দিকে জাত ও মানভেদে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে আম পাওয়া যাচ্ছে। এই দাম তুলনামূলক কম বলে দাবি বিক্রেতাদের।

যেসব এলাকা থেকে তারা (ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা) আম আনছেন সেখানে আরও সপ্তাহে খানিক আম্রপালি এবং বারি জাতের আমের ভালো সরবরাহ পাওয়া যাবে।

বুধবার ও বৃহস্পতিবার (১৬ ও ১৭ আগস্ট) পৌর শহরের বাজারের আশপাশের বাজার ও গ্রামের হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনো এসব বিভিন্ন এলাকার খুচরা বাজারেও মিলছে পর্যাপ্ত আম। বাজারে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ থেকে আম আসছে। মৌসুম শেষের দিকে হলেও এখনো আমের বেচাকেনা ভালো।

এসব ফলের দোকানে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে আম্রপালি। এসব আম্রপালির ৯০ শতাংশই নওগাঁর সাপাহার থেকে আনার কথা জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। আম্রপালির পরই বাজারে বেশি মিলছে বারি-৩, বারি-৪, বারি-১১, বারি-১৩ বা গৌড়মতি জাতের আম। তবে সব আমই ‘বারি আম’ বলে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

খুচরা বাজারে আম্রপালি ও বারি আম মানভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফজলি আমের কেজি ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা। এ ছাড়া আশ্বিনা আম পাওয়া যাচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে। এরপর কাটিমন জাতের কিছু আম আসবে। সেগুলো ৩০০ টাকা কেজির নিচে পাওয়া যাবে না বলে জানান বিক্রেতারা।

ঈশ্বরদী পৌরশহরের বাজারের ফল ব্যবসায়ী রিপন শেখ বলেন, ‘এখন ফজলি আমের সরবরাহ খুব কম। আগে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রচুর ফজলি আম আসতো। শেষ দিকে ফজলি ও আশ্বিনা আম দিয়ে আমের সিজন (মৌসুম) শেষ হতো। এখন বারি আমের ছড়াছড়ি। বারি জাতের আম এখনো কিছুদিন পাওয়া যাবে। তবে দাম আরও বাড়বে।’

শহরের রেলওয়ে টিকেট বুকিং অফিসের ওভারব্রিজের সামনে সরল আলীর ফলের দোকান। বৃহস্পতিবার সেখানে আমের দরদাম করছিলেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাসায় ফেরার সময় প্রতিদিন দুই-এক কেজি আম নিয়ে যাই। বাচ্চারা খায়। আম্রপালি নেওয়া হয় বেশি। গত দুইদিন বারি-৪ নিচ্ছি। আমটা বেশ ভালো। আঁটি ছোট এবং রসালো। দাম বেড়ে যাচ্ছে। অন্যবারের তুলনায় দাম এবার এখনো কমই মনে হচ্ছে।’

বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী তুফান বলেন, ‘আম আছে এখনো ভালোই। আমি নিজে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এবং নওগাঁর সাপাহারে গিয়ে আম্রপালি ও বারি জাতের আম নিয়ে এসে ঈশ্বরদীতে দোকানে বিক্রি করি।

তিনি আরও বলেন, ‘বাগান থেকে বারি আম কিনছি ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে। সাথে লেবার খরচ, পরিবহন খরচ দিয়ে সেটা ৫ হাজার টাকার ওপরে পড়ছে। আমরা পাইকারিতে ৫ হাজার ৬০০ থেকে ৫ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে ছেড়ে দিচ্ছি। খুচরাতে যারা বিক্রি করছেন, তারা হয়তো সেটা কেজিতে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। আম্রপালি একেবারে শেষ দিকে। আম্রপালির দাম বাগানেই বাড়ছে প্রতিদিন।’

ফল ব্যবসায়ী ছানা আহমেদ বলেন, মৌসুম তো শেষ। অন্যবারে জুলাইয়ের পর আর আম বিক্রি করিনি। কিন্তু এবার আম আছে, মানুষ কিনছেও। প্রতিদিন কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। সপ্তাহখানেক পর সাধারণ ক্রেতারা আর আম কিনে খেতে পারবেন না হয়তো। তখন আমরাও বেচবো না।’

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, নতুন কয়েকটি জাত উদ্ভাবনে দেশে আমের মৌসুম দীর্ঘ হচ্ছে। আমের মৌসুমটা বড় হয়েছে এবং হচ্ছে। এটা তো একদিনের বিষয় না। তবে বারি জাতের আম মৌসুম বড় করার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ