ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ধামরাইয়ে অপ্রতিরোধ্য মাটি ব্যবসায়ীরা

প্রকাশনার সময়: ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৩৩ | আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৩৮

প্রশাসনের ব্যর্থতা ও মাটি ব্যবসায়ীদের কারণে ঢাকার ধামরাইয়ে বিগত কয়েক বছরের ব্যবধানে ৪ ভাগের ২ ভাগ ফসলি জমি পুকুরে পরিণত হয়েছে। কঠোর কোন আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলেই এই পরিস্থিতি হয়েছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় আঞ্চলিক রাস্তার পাশে যেসব ইটভাটা রয়েছে তারা প্রত্যেকেই রাস্তার ক্ষতি করে রমরমা মাটি ও ইটভাটার ব্যবসা করে যাচ্ছে।

গত ৫ বছর আগেও যেসব জমিতে সোনালী ফসল দক্ষিণা বাতাসে ধুল খেত এবং শমশম শব্দে কৃষাণের প্রাণ জুড়িয়ে যেত। গোলা ভরা ধানে কৃষকের মুখে হাসি ফুটতো। কিন্তু মাটি কাটার ফলে সেই জমিতে আজ কৃষকের স্বপ্ন ডুবে যাচ্ছে। তৈরি হয়েছে পুকুর আর বইছে পানি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব অবৈধ ইটভাটা ও মাটি ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে শক্তিশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। রয়েছে ইউনিয়ন উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পদ পদবিতে। একদিকে সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছে উপজেলাকে আধুনিক উপজেলায় পরিণত করবে। আবার অপরদিকে তারাই সরকারি অবকাঠামো ধ্বংস করে অবৈধভাবে কেটে নিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমির মাটি। আধুনিকতার নামে উপজেলাকে ৫০ বছর পিছিয়ে দিচ্ছে।

অবৈধ মাটি ব্যবসার জন্যই প্রতি বছর ঘটে যাচ্ছে হতাহতের ঘটনা। সরকারি অবকাঠামো ধ্বংস করে এভাবে যদি দিনের পর দিন অবৈধ মাটি ও ইটভাটার ব্যবসা চলতে থাকে তাহলে ধামরাই উপজেলার মানচিত্র জলাশয়ে পরিণত হবে।

বালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান, কুশুরা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান, কুশুরা ইউনিয়নের পানকাত্তা গ্রামের ফরিদ হোসেন, কুশুরা ইউনিয়নের মধুডাঙ্গা গ্রামের আহম্মদ হোসেন, গাড়াইল গ্রামের লুৎফর রহমান, ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের ডেমরান চন্দ্রপাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেন বানু, ভাড়ারিয়া গ্রামের হীরা, মালঞ্চ এলাকার হারুন সহ প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই চলছে মাটি খেঁকুদের তান্ডব।

এরা কেউ কেউ রাতের আঁধারে মাটি কেটে ইট ভাটায় বিক্রি করছে। আবার কেউ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দিনে দুপুরেই ভেকু দিয়ে ফসলি জমিতে থাবা মারছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, রাস্তার ক্ষতি যারা করছে তারা সরকার দলীয় লোক। এদের বিরুদ্ধে কিছু বললে বাড়িতে থাকতে পারবো না। ধামরাইয়ে যত ইটভাটার ব্যবসা ও মাটি কাটা দেখছেন তার সবই প্রায় আওয়ামী লীগের নেতারা করতেছে। কিছু বললে হুমকি ধামকি দেয় আর বলে রাস্তাঘাট তো আমরাই ঠিক করে দেই। তাই কিছু বলি না।

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন- আমরা যখনই কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাই তখনই অভিযান চালাই। যার জমি যে ক্ষতিগ্রস্ত সরাসরি সে যদি কোনো অভিযোগ করে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিব। যদি এরকম থাকে তার জমির মাটি কাটছে তার অনুমতি ছাড়া, তার জমির উপর দিয়ে লীক যাচ্ছে ক্ষতিপূরণ না দিয়ে, অথবা তার পাশের জমি এমন ভাবে কাটছে সে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। তারা যদি কেউ অভিযোগ করে আমরা ব্যবস্থা নিব।

তিনি আরও জানান, আর মাটি ব্যবসায়ীদের ভয়ে যদি কেউ অভিযোগ না করে সেক্ষেত্রে আমরা কিছু করতে পারব না। অভিযোগ করতে হবে তাকে। অভিযোগ না পেলে তো আর ঘুরে ঘুরে দেখা সম্ভব হয় না সব। আর যার জমি সে নিজেই কেটে দিচ্ছে, সেক্ষেত্রে আপনি কার বিচার করবেন? যার তিন ফসলি জমি সে যদি নিজেই কাটে, সে ক্ষেত্রে আমরা বাধা দিতে পারি। অন্যান্য ক্ষেত্রে যদি নিজেই কাটে বাধা দেওয়ার কিছু নাই।

জমির মালিক শ্রেণি পরিবর্তন করতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, আইনে অনেক কিছু বলা আছে কিন্তু বাস্তবে আসলে প্রয়োগ যোগ্য না। এগুলা আসলে অনেক কিছুই সম্ভব না এখন।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ