নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মাঠজুড়ে এখন হলদে রাঙা স্বপ্নে মেতেছেন সরিষা চাষি ও মধু চাষিরা। তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছ পরিচর্যায় আর মধু সংগ্রহে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ফসলের জমির পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স নিয়ে হাজির হয়েছেন মৌচাষিরা। ওই সব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে।
মৌ চাষিরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। আর তার ভেতর রাখা হয় একটি রাণী মৌমাছি। রাণী মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। আর এই চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করে থাকে। প্রতিদিন ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত মৌচাষিরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন।
গোলমুন্ডা ইউনিয়নের ঘাটের পাড় সংলগ্ন সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণের পদ্ধতি সম্পর্কে মধুচাষি মাজহারুল ইসলাম জানান, প্রায় চার বছর হলো মধুর ব্যবসা করছেন। মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা হয় বক্স। যার ওপরের অংশটা কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে মোড়ানো থাকে। বাক্সের ভেতরে কাঠের তৈরি সাতটি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো বিশেষ কায়দায় লাগানো থাকে এক ধরনের আসন। পরবর্তিতে বক্সগুলো সরিষাক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়।
তিনি আরো জানান, আমরা সরিষাক্ষেত থেকে বছরে চার মাস মধু সংগ্রহ করে থাকি। এলাকার বিস্তীর্ণ সরিষাক্ষেতে ২১০টি বাক্স বসিয়েছেন তারা। এসব বাক্স থেকে প্রতি আট দিনে গড়ে প্রায় ৭০০ কেজির মতো মধু পাওয়া যায়। গত বছরের তুলনায় মধুর দাম এবার কম। গত বছর এক মণ মধুর দাম ছিল সাত থেকে আট হাজার টাকা। আর এ বছর এক মনের দাম হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা। তবে মৌ-খামারিরা আশায় আছেন হয়তো মধুর দাম বাড়বে। যদি না বাড়ে তাহলে তারা লোকসানে বিক্রি করবেন।
জলঢাকা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আহসান হাবীব জানান, এবার চলতি মৌসুমে উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি। আর এই সরিষার আবাদকে ঘিরে জলঢাকা উপজেলায় মৌখামারি বসেছেন। সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি ফুলের ওপর বসলে পরাগায়ণে ফসল ভালো হয় এবং ১৫ থেকে ২০ ভাগ ফলন বেড়ে যায়। কৃষি অফিস থেকে মৌখামারিদের সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখছেন বলেও তিনি জানান।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ