সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা বোরো ধানের বীজতলা প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
রানীদিঘী গ্রামের কৃষক গোলাম রব্বানী বলেন, ভালো চারা পেতে চাইলে অবশ্যই ভালো বীজতলা তৈরি করতে হবে। অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাস বোরো ধানের বীজতলা তৈরির উপযুক্ত সময়। বীজতলায় পর্যাপ্ত রোদ পড়েবে, এমন উর্বর ও সেচ সুবিধাযুক্ত জমি বীজতলার জন্য নির্বাচন করা হয়। চাষের আগে জৈবসার দিয়ে ভালোভাবে জমি তৈরি করে নিতে হয়। পানি দিয়ে জমিকে থক থকে কাদা করে, জমির চওড়া এবং দৈর্ঘ্য অনুসারে লম্বা করে ভেজা বীজতলা তৈরি করা হয়। বীজ বপন করার আগে ৪৮-৭২ ঘণ্টা ধান ভালো ভাবে জাগ দিয়ে রাখতে হয় এসময় ধানের অঙ্কুর গজাবে।
অপরদিকে তাড়াশের কৃষক নুহুর ফকির বলেন, অঙ্কুরিত বীজ বীজতলায় ছিটিয়ে বপন করতে হয়। বোরো ধানের বীজতলার অতিরিক্ত ঠান্ডায় চারা যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য কৃষকরা রাতের বেলা চারার উপরে সাদা পলিথিন দিয়ে বা কলার পাতা দিয়ে ছাউনির মতো করে ঢেকে দেয়, যাতে করে চারা নষ্ট না হয়। পরের দিন সকালে রোদ দেখা দিলে বীজ তলায় রোদ লাগার জন্য পলিথিন বা কলার পাতার ছাউনি আবার সরিয়ে রাখতে হবে। কৃষকরা প্রতিদিন সকালে বীজতলা একবার করে দেখে আসেন, কারণ বীজতলার চারা যাতে হলুদ ও পাতা ঝলসানো রোগে আক্রমণাত্মক না হয়।
এ ছাড়াও কৃষকরা চারায় প্রয়োজন মতো ইউরিয়া ও জিপসাম সার দিয়ে থাকে। কৃষকরা বীজতলা থেকে চারা উঠানোর এক সপ্তাহ আগে কীটনাশক দিয়ে থাকে। এতে বীজতলার চারা পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২২৩৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ১৩৭৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরিও হয়েছে। এক হেক্টর বীজতলা থেকে ১৭ হেক্টর জমি রোপন করা যায়।
দেশীগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক এনামুল হক বলেন, এ বছর আগের তুলনায় কম পরিমাণ জমিতে বোরো ধান চাষ করবো। আগের তুলনায় সব খরচই বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাধাইনগর ইউনিয়নের ওয়াশীন গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, তেল, সার, কিটনাষকসহ সকল কৃষি পণ্যের দামই বৃদ্ধি পেয়েছে তাই ধান চাষে খরচ আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। আবার এই অঞ্চলের বেশির ভাগ কৃষকই বর্গা চাষি, যাদের নিজের জমি নেই তাই তারা লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে থাকে। এমনিতেই যে টাকা খরচ করে ধানের চাষ করা হয় ধান বিক্রয় করে সে টাকা আয় হয় না। কেন না কৃষি শ্রমিকের সংকট সহ ফসলি মাঠে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা কারণে জমি পরিস্কার করতে অনেক টাকা খরচ হয়।
এ ব্যাপারে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বিগত বছরগুলোতে এ উপজেলায় বোরো ধানের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। এ বছর মাঠে পানি ছিল না, আবার সরিষা চাষ হয়েছে প্রায় ২ হাজার হেক্টর, এই সমস্ত জমিও বোরো চাষের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর ১০ দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে সরিষাও ভালো হবে আবার আবার বোরো ধানে চাষের লক্ষ মাত্রাও অতিক্রম করবে বলে আশা করছি।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ