ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুজিবাদর্শে শানিত বাংলার আকাশ-বাতাস

জাতীয় শোক দিবস কাল
প্রকাশনার সময়: ১৪ আগস্ট ২০২২, ১০:৪২

বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিরঞ্জীব— তার চেতনা অবিনশ্বর। বাঙালির অস্থিমজ্জায় মিশে আছেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুজিবাদর্শে শানিত বাংলার আকাশ-বাতাস জল-সমতল। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে শেখ মুজিবুর রহমানের অবিনাশী চেতনা ও আদর্শ চির প্রবহমান থাকবে। জাতির পিতা চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার সুযোগ্যকন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে জয় করে বিশ্বসভায় একটি উন্নয়নশীল, মর্যাদাবান জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল।

ঘাতকের বুলেট ‘স্বাধীনতার সূর্য’ বঙ্গবন্ধু নামের প্রদীপ নিভিয়ে দিলেও বাঙালির হূদয় থেকে তাকে সরাতে পারেনি। একজন মানুষ মৃত্যুর পরেও যে কতটা শক্তিশালী, একটা জাতির কতটা জুড়ে থাকতে পারে তার উদাহরণ বঙ্গবন্ধু।

কবির ভাষায়— ‘আপনাকে তো নিয়েছে ওই ঘাসের নরম/কোল, জ্যোৎস্নার কিছু শিশির প্রতি ভোরে/বাঁচিয়ে রাখে বাংলার রূপ, আপনি/অন্য মনে আছেন বলে আমরা/বলি, শেখ মুজিব ঘুমিয়ে আছেন/টুঙ্গিপাড়ায়;/বঙ্গবন্ধু, আপনার যখন সময় হবে/এসে ডাক দেবেন, সবাই আছে,/সোনার বাংলার স্বপ্নও আছে,/আছে কোটি কোটি জনতা,/‘ভায়েরা আমার’ বলে ডাকলেই/আমরা জয়ধ্বনি দিয়ে বলব,/জয় মুজিব, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা।’

অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর আজীবনের স্বপ্ন ছিল বাংলার স্বাধীনতা ও বাঙালির জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠা। এ আদর্শেই তিনি নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। সারাজীবন আন্দোলন-সংগ্রাম ও লড়াই করে তিনি বাঙালির স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য আমাদের, বাঙালি জাতির! আজীবনের স্বপ্নের সেই স্বাধীন বাংলাদেশেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ঘাতকের দল। অশ্রুঝরা আগস্টের ১৪তম দিন আজ। ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট ছিল বৃহস্পতিবার।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে জড়িত ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বংশ এবং বাংলাদেশ থেকে তার নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন। এই দুই প্রধান উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে পরিবার-স্বজন সবাইকে একই সময়ে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ মনি ও আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসাসহ একেক বাসায় আক্রমণের নেতৃত্বে ছিলেন একেকজন। সিদ্ধান্ত হয়— ৩২ নম্বরের বাড়িটিকে ঘিরে দুটো বৃত্ত তৈরি করা হবে। ভেতরের বৃত্তের সদস্যরা সরাসরি বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণ করবেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় এ এফ এম মহিতুল ইসলাম, আবদুর রহমান শেখ (রমা), সেলিম (আবদুল), অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার মোহাম্মদ কুদ্দুস শিকদার, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল হামিদ, সাবেক সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ, আয়েনউদ্দিন মোল্লার সাক্ষ্য থেকে বিভিন্ন সময়ে এসব তথ্য জানা যায়।

এ পর্যন্ত ঘাতকদের ৬ জনের ফাঁসি হয়েছে। বাকি আছেন আরো ৫ জন। তারা হলেন— আবদুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও এবিএমএইচ নূর চৌধুরী। এর মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থান করছেন।

মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণের জন্য ১২টি ট্রাকে সাড়ে তিনশ’ সাধারণ সৈনিককে প্রস্তুত করা হয়। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন মেজর ফারুক। তিনিই অফিসারদের অপারেশনের পরিকল্পনা জানান। সিদ্ধান্ত হয়, ওই বাড়িকে ঘিরে দুটো বৃত্ত তৈরি করা হবে। ভেতরের বৃত্তের সদস্যরা সরাসরি বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণ করবেন। বাইরে থেকে রক্ষীবাহিনী বা ভেতর থেকে সেনাবাহিনীর কোনো আক্রমণ এলে তা ঠেকানোর দায়িত্বে থাকবে বাইরের বৃত্তের সদস্যরা। বাইরের বৃত্তের দায়িত্ব দেয়া হয় মেজর নূর ও মেজর হুদাকে।

এক কোম্পানি সেনাসহ রেডিও স্টেশন, বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউমার্কেট এলাকার দায়িত্বে ছিলেন মেজর শাহরিয়ার। পিলখানায় বিডিআরের তরফ থেকে কোনো ধরনের আক্রমণ হলে তা প্রতিহত করার দায়িত্বও ওই গ্রুপকে দেয়া হয়। ২৮টি ট্যাংক নিয়ে শের-ই-বাংলা নগরে রক্ষীবাহিনীকে প্রতিহত করার দায়িত্ব নেন মেজর ফারুক নিজে। সেসব ট্যাংকে গোলা না থাকলেও মেশিনগানে প্রচুর গুলি ছিল।

ভোর সোয়া ৫টার দিকে মেজর ডালিম ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিনের নেতৃত্বে আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও শেখ মনির বাসায় আক্রমণ হয়। শেখ মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যা করে ঘাতকরা। প্রাণে বেঁচে যান শেখ মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ ও শেখ ফজলে নূর তাপস।

১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি: সূর্যোদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে সংগঠনের সব স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল ৭ টা ৪৫ মিনিটে বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল।

সকাল সাড়ে ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। ওই কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল, গোপালগঞ্জ জেলা ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। বাদ জোহর কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে ওই দিন প্রথম প্রহরে (রাত ১২:০১ মিনিট) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে (৩/৭-এ সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর-১০) মোমবাতি প্রজ্বলন ও বিশেষ প্রার্থনা, সকাল ৯টায় তেজগাঁও হলি রোজারি চার্চে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করবে খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করবে। দুপুরে সারাদেশে অসচ্ছল, এতিম ও দুস্থ মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ ও গণভোজের আয়োজন।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ