১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর হত্যাকাণ্ড, লুটপাট ও নির্যাতন চালছিলো তারই নীরব সাক্ষী গোপালগঞ্জের বধ্যভূমি।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন জয়বাংলা পুকুর পাড়ে পাকিস্তানি বাহিনী একটি মিনি ক্যান্টনমেন্ট স্থাপন করেছিল। এই ক্যান্টনমেন্ট ছিল এই অঞ্চলের মুক্তিকামী মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্কের নাম।এখানে বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সমর্থকদের ধরে এনে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হতো। কত শত নারীকে ধরে নিয়ে নির্যাতিত করা হয়েছে এই অন্ধকার ক্যান্টনমেন্টে তার হিসাব নাই।
এখান থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী জেলার এক একটি জায়গায় হালমা চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সহযোগী, আত্মীয়স্বজন ও মুক্তিকামী মানুষকে ধরে এনে চালানো হতো বর্বর নির্যাতন। তাদেরকে হত্যা করে পুঁতে রাখা হতো বর্তমান উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকা ও পুকুর পাড়ে। ফলে এটি গোপালগঞ্জের অন্যতম বধ্যভূমিতে পরিণত হয়। এই টর্চার সেলে নির্যাতনে শহীদ হওয়া ৩৬ জনের নাম জানা গেলেও শহীদদের সঠিক সংখ্যা এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসন ১৯৯৫ সালে এ বধ্যভূমিটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। সেখানে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়। স্থাপন করা হয় শহীদদের নামের আলাদা আলাদা ফলক।
পাকিস্তান বাহিনীর হাত থেকে ১৯৭১ সালে ৭ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ মুক্ত হলে স্বজনদের খোঁজে মুক্তিকামী মানুষ ঐ মিনি ক্যান্টনমেন্টে যান। সেখানে মানুষের হাড়, মাথার খুলি দেখে স্বজন হারানোর বেদনায় ব্যথিত হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ ।
গোপালগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা অটল কুমার মজুমদার বলেন, আমাদের গোষ্ঠীর সব ভাইয়েরা ইন্ডিয়ায় চলে গেলেও আমি যায়নি। মুক্তযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর ব্যংকারে আমার পা ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে তখন আমাকে সরকার ইন্ডিয়ায় চিকিৎসার জন্য পাঠায়। চিকিৎসা শেষে দেশে এসে ক্যাম্পে যোগ দেয়। তখন ঐ মিনি ক্যান্টনমেন্টে বাংলার মুক্তিকামী নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হতো, নারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে তাদের ইজ্জত নেওয়া হতো। পরবর্তীতে গোপালগঞ্জ শত্রু মুক্ত হওয়ার পরে আমরা সেখানে গিয়ে দেখতে পায় মানুষের হাড়সহ বিভিন্ন অস্ত্র পড়ে আছে।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ