ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নাটোরে আজও যেসব গণকবরে স্মৃতিস্তম্ভ হয়নি

প্রকাশনার সময়: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ২২:৫৯

নাটোরে কতটি বধ্যভূমি আছে তার সঠিক হিসাব মেলেনি আজও। স্বাধীনতার এত বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোর বেশিরভাগই সংরক্ষণ না হওয়ায় হতাশ বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের পাঁচটি বধ্যভূমিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা জানানোর কথা বলা হচ্ছে। তবে উপজেলা বা গ্রামের বধ্যভূমিগুলোতে থাকে না কোনো আনুষ্ঠানিকতা।

এদিকে সরকারি কোনো সঠিক তথ্য না থাকলেও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, নাটোরে অন্তত ১৫টি বধ্যভূমি আছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ছয়টি। এগুলো হলো- ফুলবাগান, উপজেলা পরিষদের সামনে, ছাতনী, সুইসগেট, দত্তপাড়া ফতেঙ্গাপাড়া, আহমেদপুর ব্রিজ, লিয়াকত ব্রিজ ও কানাইখালী রেজা রঞ্জুর কবর। লালপুর

উপজেলায় আছে তিনটি বধ্যভূমি- গোপালপুর শহীদ সাগর, লালপুর ও ময়না। বড়াইগ্রামের ধানাইদহ ব্রিজের পাশে ও কালিকাপুরে আছে দুটি বধ্যভূমি। সিংড়ার দুটি বধ্যভূমি হলো হাতিয়ান্দহ ব্রিজ ও কলম। এ ছাড়া গুরুদাসপুরে উত্তর নাড়িবাড়ি ও নলডাঙ্গায় রয়েছে খোলাবাড়িয়া বধ্যভূমি।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম নান্টু বলেন, হাতেগোনা কয়েকটি গণহত্যাস্থলে স্থানীয়ভাবে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ফতেঙ্গাপাড়া গণকবর, লিয়াকত ব্রিজ, নাড়িবাড়ি, ধানাইদহ, কালিকাপুরে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়নি আজও।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নবীউর রহমান পিপলু বলেন, বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ না করা হলে পরবর্তী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে না। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫১ বছরেও সব বধ্যভূমি চিহ্নিত এবং সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ না হওয়া হতাশাজনক। এসব গণহত্যাস্থলের স্বীকৃতি দিয়ে দ্রুত সেখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে শহীদদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানাই।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নাটোর ইউনিটের সাবেক কমেন্টরা আব্দুর রউফ বলেন, নাটোরের বধ্যভূমিগুলো ১০ বছর আগে আরও অবহেলিত ছিল। এখন প্রশাসন ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বিশেষ দিনগুলোতে বধ্যভূমিতে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের দু-একটি বধ্যভূমিতে আনুষ্ঠানিকতা করা হলেও উপজেলায় তেমন কোনো কার্যক্রম নেওয়া হয় না।

এ ব্যাপারে নাটোর গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী কাওসার আহমেদ বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মমতার সাক্ষী বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করতে গিয়ে ২০২১ সালে অক্টোবর মাসে জমি নিয়ে জটিলতায় পড়ে গণপূর্ত বিভাগ। পরে জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত জায়গা বুঝে পাওয়া যায়নি। ফলে বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়নি।

নাটোর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, বধ্যভূমিগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকার আন্তরিক। বধ্যভূমিগুলোতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের লক্ষ্যে একবার মন্ত্রাণালয় থেকে পরিদর্শন করে গেছেন কর্মকর্তারা। পরে আর কিছু জানানো হয়নি। এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা করতে যা যা করা দরকার তাই করা হবে।

নয়াশতাব্দী/জেডএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ