১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বধ্যভূমির ওপর গড়ে ওঠা দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী খুলনায় শত শত মানুষকে হত্যা করে গল্লামারী ও তৎসংলগ্ন এলাকায় তাদের লাশ ফেলত। সেই সময় গল্লামারী এবং তৎকালীন খুলনা রেডিও স্টেশনটির একতলা ভবন ছিল হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প। এই ভবনের পূর্ব পাশেই ছিল সেমিপাকা একটি টিনশেড ঘর। এটাই ছিল হানাদার ও তাদের দোসরদের টর্চার সেল।
অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষকে এখানে ধরে এনে গুলি করে, বেয়োনেট দিয়ে খুচিয়ে, জবাই করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। স্মৃতিবাহী সেই টর্চারসেল টিনশেড ঘরটি এখনও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিদ্যমান রয়েছে।
পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসররা বাঙালি জাতিকে পঙ্গু করে দেওয়ার ঘৃণ্য চক্রান্তে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের নাম বিধৃত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নামে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের নামকরণ করা হয়েছে শহিদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরী চিকিৎসা কেন্দ্র, নির্মিতব্য ১০তলা আবাসিক ভবনের নাম শহিদ বুদ্ধিজীবী ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ভবন, প্রফেসর/সমপর্যায়ভুক্ত কর্মকর্তা কোয়ার্টারের নাম শহিদ বুদ্ধিজীবী ড. জোতির্ময় গুহঠাকুরতা ভবন, সহযোগী অধ্যাপক/সমপর্যায়ভুক্ত কর্মকর্তা কোয়ার্টারের নাম শহিদ বুদ্ধিজীবী সুখরঞ্জন সমাদ্দার ভবন, সহকারী অধ্যাপক কোয়ার্টারের নাম শহিদ বুদ্ধিজীবী ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ভবন, লেকচারার/সমপর্যায়ভুক্ত কর্মকর্তা কোয়ার্টারের নাম শহিদ বুদ্ধিজীবী ড. রাশেদুল হাসান ভবন নামে।
এছাড়া নতুন ও পুরাতন প্রশাসন ভবনের নামকরণ করা হয়েছে যথাক্রম শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ এবং শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবন নামে। এছাড়াও তিনটি একাডেমিক ভবনের নাম যথাক্রমে ড. সত্যেন্দ্র নাথ বসু, আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ও কবি জীবনানন্দ দাশের নামে নামকরণ করা হয়েছে। নির্মিতব্য ১০ তলা একাডেমিক ভবনের নাম হবে জয় বাংলা ভবন। অতিথি ভবনের নাম মাইকেল মধুসূদন দত্ত অতিথি ভবন, সেন্ট্রাল সায়েন্স ল্যাবের নামকরণ করা হয়েছে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের নাম কাজী নজরুল ইসলাম কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, নির্মিতব্য আইইআর ভবনের নাম হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আইইআর ভবন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়ামের নাম সুলতানা কামাল জিমনেসিয়াম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার খান গোলাম কুদ্দুস নয়া শতাব্দীকে বলেন, ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের পূর্ব মুহূর্তে নতুন প্রজন্ম যেন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে জানতে পারে সে জন্যই ভবনগুলোর এমন নামকরণ করা হয়েছে।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ