পাবনার ঈশ্বরদীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের ২০১০ সালের তথ্য অনুযায়ী ঈশ্বরদীতে প্রায় ১৯টি গণকবর ও বধ্যভূমি রয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঈশ্বরদীতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর অবাঙালীদের (বিহারী) অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞের জ্বলন্ত সাক্ষী হয়ে আছে এসব গণকবর ও বধ্যভূমি।
উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেসব বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বিজড়িত গণকবর ও বধ্যভূমি। অধিকাংশ গণকবর আর বধ্যভূমিগুলোর বেহাল দশা। অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকা সেগুলো যেন দেখার কেউ নেই।
এদিকে, দেশ স্বাধীনের ৫২ বছর পরেও অনেক গণকবর ও বধ্যভূমি এখানো শনাক্ত কিংবা সংরক্ষণ করা হয়নি। ফলে অবহেলা-অনাদরে এসব বধ্যভূমি ঝোপ-জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।
ঈশ্বরদী শক্রমুক্ত হওয়ার আগে এখানে পাক সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তিনটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এগুলো হচ্ছে- ২৯ মার্চ মাধবপুরের যুদ্ধ, ৬ নভেম্বর খিদিরপুরের যুদ্ধ এবং ১১ ডিসেম্বর জয়নগরের যুদ্ধ। এছাড়া ১১ এপ্রিল শহরের নতুন বাজার ফতেমোহাম্মদপুর, নুরমহল্লা এলাকায় পাকসেনারা প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে অবাঙালীরা মাথায় সাদা রুমাল বেঁধে তাদের ধারালো অস্ত্রশন্ত্র দিয়ে শতাধিক নিরিহ বাঙালিকে হত্যা করে।
উপজেলার গণকবর ও বধ্যভূমিগুলোর অন্যতম হলো- ফতেমোহাম্মদপুর রেলওয়ে লোকোমোটিভ কারখানার অভ্যন্তরে বধ্যভূমি, পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে বধ্যভূমি,পাকশী গণকবর, ও পাতিলাখালি বধ্যভূমি। মুক্তিযোদ্ধ থেকে শুরু করে নানা পেশার শত শত মানুষকে নারকীয় তান্ডবের মাধ্যমে হত্যা করে মাটি চাপা দিয়েছিল পাকিস্তানিবাহনী ও তাদের এদেশীয় দোসরা।
স্বাধীনতার এতো বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদদের স্মৃতির প্রতি যথাযথ সম্মান দেখিয়ে গণকবর ও বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা হয়নি। তবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ধরে রাখতে ঈশ্বরদী প্রেস ক্লাবের পাশে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবুল কালাম জানান, আমরা যাদের জন্য বিজয় দিবস করি, সেই সব শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ও নিরিহ মানুষের স্মৃতিগুলো সংরক্ষণের প্রয়োজন।
নয়াশতাব্দী/এফআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ