ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অগণন শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ ‘রক্তধারা’

প্রকাশনার সময়: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:০৪

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস সময়কালে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এবং পাকবাহিনীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে রাখার জন্য চাঁদপুরে নির্মিত হয়েছে ‘রক্তধারা’। ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। শহরের তিন নদীর মোহনা মোলহেডে তৎকালীন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক প্রিয়তোষ সাহা স্থানীয়ভাবে বধ্যভূমি স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য গঠিত কমিটির সদস্যদের সহযোগিতায় এটি নির্মাণ করেন। জেলার জন্য এটিই হচ্ছে একমাত্র বধ্যভূমি।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকবাহিনী চাঁদপুর শহরের টেকনিক্যাল স্কুল এবং ষোলঘর রেস্ট হাউজে অবস্থান নেয়। কিন্তু তাদের সহযোগী রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সহযোগিতায় জেলা সদর এবং বিভিন্ন উপজেলা থেকে শিক্ষক, আইনজীবী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরকে ধরে আনাহত বড় স্টেশন মোলহেড এলাকার টর্সারসেলে। এখাণে নারী ও পুরুষদেরকে উলঙ্গ করে নির্যাতন করত পাকবাহিনীর সদস্যরা। এরপর তাদেরকে হত্যা করে ফেলে দেয়া হত পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনা এলাকায়। কত মানুষকে তারা হত্যা করেছে পাকবাহিনী তার সঠিক হিসেব কেউ বলতে পারে না। যে কারণে অগণন শহীদদের স্মরণে এই স্মৃতিস্তম্ব নির্মাণ করা হয়।

বধ্যভুমি ‘রক্তাধারা’ সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা জানান, ওই সময়ে পাকবাহিনীর সাথে রাজাকার ও আল বদর একত্রিত হয়। তারা শত শত নারী-পুরুষক ধরে নিয়ে এসে এখানে নির্যাতন করে হত্যা করে। যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তাদের কোন তথ্য সংরক্ষণ করা ওই সময়ে সম্ভব হয়নি। যে কারণে এটিকে আমরা বধ্যভূমি হিসেবে নির্ধারণ করেছি।

জেলার হাজীগঞ্জ বাকিলা থেকে ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় নাসিরকোর্ট স্মৃতিসৌধ। মুক্তিযুদ্ধের সময় সাব সেক্টর ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত এ স্থানটি মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনাবহুল স্মৃতি বিজড়িত। এই নাসিরকোটেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন স্বাধীনতা যুদ্ধের ৯ জন শহীদ। এই শহীদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য এখানে নির্মিত হয় ‘‘নাসিরকোট স্মৃতিসৌধ’’ ১৯৮১ সালে এ সৌধটি নির্মিত হয়। প্রতিদিন অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে বহুমানুষ স্মৃতি সৌধ দেখতে আসেন।

চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদ জানান, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পরে আমরা যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করি। দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে জেলার বিভিন্ন প্রবেশ পথে পৃথকভাবে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের সময় অনেকেই শহীদ হন। সর্বশেষ ৮ ডিসেম্বর আমাদের চাঁদপুর জেলা হানাদার মুক্ত হয়। শহীদদের স্মরণে রাখার জন্য আমরা অনেক বেশি করাও সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জেলার একমাত্র বধ্যভূমি ‘রক্তধারা’ নির্মিত হয়েছে। এছাড়া আর বড় কোন বধ্যভূমি আছে কিনা আমার জানা নেই।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ