ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নাম না জানা শহীদদের স্মৃতি

প্রকাশনার সময়: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৪:১৩

স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় সহযোগীরা সাধারণ নাগরিক, মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী ধরে নিয়ে হত্যার জন্য কিছু নির্দিষ্ট স্থানকে ব্যবহার করত। যেগুলো পরবর্তীতে বধ্যভূমি হিসেবে নামকরণ করা হয়। তাই চুয়াডাঙ্গা জেলায় বধ্যভূমির সংখ্যাও কম নয়।

শহরের সদর হাসপাতালের পেছনে, নাটুদহের স্কুলের পেছনে, জীবননগরের ধোপাখালী গণকবর, মদনার হৈবৎপুর গ্রামে পাঁচ কবর, নাটুদহের আট কবর, আলমডাঙ্গার লালব্রিজ সংলগ্ন বধ্যভূমিগুলো সংগ্রামী যুদ্ধের চুয়াডাঙ্গা জেলার কথা মনে করিয়ে দেয়।

জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমার নদের ওপর অবস্থিত লালব্রিজের দু’পাশে ছিল পাক হানাদার বাহিনীর মিলিশিয়া ক্যাম্প। লালব্র্রিজের পাশে ১টা ও নদের অপর পাড়ে কালিদাসপুরে আরেকটা মিলিশিয়া ক্যাম্প ছিল। মিলিশিয়া ক্যাম্পের বাহিনীরা লালব্রিজের ব্রীজের উপর দিয়ে চলাচলরত ট্রেন থামিয়ে যাত্রীদের ধরে নিয়ে যেত। তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ এ বধ্যভূমিতে পুঁতে রাখত। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাক ঘাতকরা ট্রেন থামিয়ে স্বাধীনতাকামী প্রায় ২ হাজার নারী-পুরুষ হত্যা করে রেলব্রিজের পাশে ওয়াপদা ভবনের বাউন্ডারির মধ্যে ও পার্শ্ববর্তী দুটি বধ্যভূমিতে পুঁতে রাখে।

লালব্রিজের কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও বাঙালি নর-নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতনের সাক্ষী এটি। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের জুনের শেষ থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারকীয় নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় এবং এখানে পুঁতে রাখা হয়। সেই সময় এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলুদ খালাসি ঘর ছিল। এ কক্ষেই স্বাধীনতাকামী যুবক, নারী-পুরুষকে নির্যাতন শেষে হত্যা করা হতো। লাশ পুঁতে রাখা হতো বা ফেলে রাখত পাকপিশাচ ও তাদের দোসররা। ‘টর্চার সেল’ নামক সেই হলুদ কক্ষটি ঘিরে এখন বধ্যভূমির স্তম্ভ বা কমপ্লেক্স।

নরপশু পাকবাহিনী বাঙালি জাতির ওপর জঘন্যতম এ নির্যাতনের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে আলমডাঙ্গা বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন কমিটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ২০০৯ সালে। ২০১২ সালে নির্মাণ করা হয় এ স্মৃতিস্তম্ভ। আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের লালব্রিজের কাছের এ বধ্যভূমিতে প্রতিদিন হাজারও দর্শনার্থী আসেন স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি ও রাজাকারদের নারকীয় তাণ্ডবের ধ্বংসলীলা দেখতে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ বধ্যভূমির গর্তে পাওয়া গেছে শত শত মানুষের মাথার খুলি ও হাড়। অনেকে এ বধ্যভূমিতে এসে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের আজও খুঁজে ফেরেন। কেউ গুমরে কেঁদে ওঠে আবার কেউ নীরবে চোখের পানি ফেলে ফিরে যায় আপন ঠিকানায়।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ