মুক্তিযুদ্ধকালীন এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তৎকালীন বাগেরহাট মহকুমায় গণহত্যার ঘটনার সংখ্যা অর্ধশতাধিক। ১৯৭১ সালের ২১ মে শুক্রবার (৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৩৭৮) বাগেরহাটের রজ্জব আলী ফকিরের রাজাকার বাহিনী রামপাল উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়নের ডাকরা গ্রামে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। গুলি ও জবাই করে তারা সেদিন প্রায় ছয় শতাধিক সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। এক সাথে রাজাকার বাহিনীর এটিই জেলার সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।
এছাড়া কচুয়া উপজেলার শাঁখারীকাঠি, জেলা শহরের ডাকবাংলো ঘাট ও সদর উপজেলার কান্দাপাড়ায় নিরস্ত্র বাঙালিদের একইভাবে হত্যা করে তারা। সেই হিসাবে বাগেরহাটের বধ্যভূমির সংখ্যা অর্ধশতাধিক। স্বাধীনতা পরবর্তী এসব স্থানে বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও বছরের অধিকাংশ সময়ই সেগুলো অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকে। শুধু স্বাধীনতাবিষয়ক জাতীয় দিবসগুলোতে এগুলো ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়, বকি সময়ে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ময়লা জমে থাকে।
১৯৯৭ সালে বাগেরহাট শহরের ভৈরব নদের তীরের একটি জায়গাকে ‘ডাকবাংলো বধ্যভূমি’ হিসেবে চিহ্নিত করে একটি স্মৃতিফলক উন্মোচন করা হয়। ফলক উন্মোচনের ২১ বছর পর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছয় লাখ টাকা ব্যয়ে বধ্যভূমিটিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।
কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পাক হানাদারদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে সেদিন বাগেরহাটের মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাসহ বাগেরহাটের অসংখ্য মানুষ রাজাকারদের হাতে খুন হন। তাদের আত্মত্যাগের জন্য আজ আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তাদের স্মৃতির উদ্দেশে সরকার বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিত করে সেখানে স্মৃতিফলক নির্মাণ করেছে। কিন্তু এই সব স্থানগুলো, বলতে গেলে সারাবছরই পড়ে থাকে অযত্নে-অবহেলায়।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুদ্ধকালীন প্রায় পুরো সময়জুড়ে বাগেরহাট শহরের মদনের মাঠের ওয়াপদা রেস্টহাউজ চত্বর, সুপারি পট্টির রসিক পরামাণিকের বাসভবন, মোজাম ডাক্তারের চেম্বারের পিছনে নদীর ঘাট; কচুয়া উপজেলার শাঁখারীকাঠি, মঘিয়া, কান্দাপাড়া বাজার, দেপাড়া, মুক্ষাইট, বিষ্ণুপুর, রণজিতপুর, চুলকাঠি; মোরেলগঞ্জের তেলিগাতি, তেঁতুলবাড়ীয়া, লক্ষ্মীখালী; চিতলমারীর দশমহল; শরণখোলার বগীসহ অর্ধশতাধিক স্থানে গণহত্যার ঘটনা ঘটে। এসবের বেশিরভাগ জায়গায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এগুলো নিয়মিত দেখাশোনা করার লোক নেই বললেই চলে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বাগেরহাট জেলা কমান্ডার শাহীনুল আলম ছানা বলেন, ‘১৯৭১ সালে রাজাকাররা বাগেরহাটে অন্তত ৭০০ মানুষকে হত্যা করে। বাগেরহাটের প্রায় সব বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভ সারা বছর অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকে। কোনও দিবস আসলেই সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তাতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। তাই এই স্মৃতিস্তম্ভগুলোয় সীমানা প্রাচীর দিয়ে তা সংরক্ষিত করা এবং সংরক্ষণের দাবি জানাই।’
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, ‘বাগেরহাটে শহীদের স্মৃতি রক্ষায় নির্মিত বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভগুলো সংরক্ষিতই রয়েছে। এসব বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভগুলোর প্রতি জেলা প্রসাশনের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।’ জেলার সবগুলো বধ্যভূমি সারাবছর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের পাশাপাশি সবাইকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ