১৯৪৮ সালের আজকের এই দিনে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন ক্ষণজন্মা এই কথাশিল্পী। বিচিত্র বিষয় নিয়ে লেখা, চরিত্র নির্মাণ, গল্প তৈরি, লাগসই সংলাপ রচনা— এসব মিলিয়ে তিনি সাহিত্যে এক অভিনব ধারা সৃষ্টি করেন, যে শৈলী একান্তই তার নিজস্ব। রসবোধের কারণে তার রচনা খুব সহজেই পাঠকের মন জয় করে নিয়েছে। দেশের কথাশিল্পে গতানু গতিক ধারাকে অতিক্রম করে হুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ করেন এক নিজস্ব ভুবন। সফল লেখক হিসেবে শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বুদ্ধিদীপ্ত বিচরণ তাকে এনে দেয় অভাবনীয় জনপ্রিয়তা। গল্পের ভেতর বিচিত্র মানুষের সন্নিবেশ তার রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
মাত্র ৬৪ বছরের জীবনে হুমায়ূন আহমেদ বাংলা কথাসাহিত্যের অঙ্গনে, টেলিভিশন নাটক আর চলচ্চিত্রাঙ্গনে এমন জনপ্রিয়তায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন, যা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। তার মতো অতুলনীয় পাঠকপ্রিয় ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, নাট্যকারের শূন্যতা যে কখনও পূরণ হবে না— তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। বাংলা একাডেমি আয়োজিত ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে অমর একুশের বইমেলায় প্রকাশকরা যে বিপুলসংখ্যক বই প্রকাশ করেন, সব বই মিলিয়ে যা বিক্রি হতো, একা হুমায়ূন আহমেদের লেখা বই তার প্রায় সমান বিক্রি হতো। এখনও তার বই কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন পাঠক-সাধারণ।
নন্দিত নরকে এবং একজন লেখকের আর্বিভাব
মুক্তিযুদ্ধের পরের বছর ১৯৭২ সালে ‘নন্দিত নরকে’ শিরোনামে ঢাকা থেকে বের হয় একটি উপন্যাস। উপন্যাসটি বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি বাঙালি মধ্যবিত্ত পাঠকদের মন জয় করে নেয়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর কাছে নতুন এক ধরনের উপন্যাস বলে মনে হয়, কারণ এ ধরনের উপন্যাস তারা আগে কখনও পড়েননি। ‘নন্দিত নরকে’ বইটি রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আহমদ শরীফও বইটির প্রশংসা করে লেখেন, বাংলাসাহিত্যে একজন শক্তিশালী ঔপন্যাসিকের আবির্ভাব ঘটেছে।
আশ্চর্য এক কথার জাদুকর
সেই যে সদ্য স্বাধীন দেশের পাঠক তার ‘নন্দিত নরকে’ আর ‘শঙ্খনীল কারাগার’ পাঠ করে আবিষ্ট হয়েছিলেন, সেই আবেশ আজও কাটেনি বাংলা ভাষার পাঠকদের। প্রথম দুটি উপন্যাস লেখার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নশাস্ত্রের তৎকালীন তরুণ অধ্যাপক পিএইচ.ডি গবেষণার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ায় কিছুকালের বিরতি পড়ে তার লেখালেখিতে। কিন্তু আশির দশকে স্বদেশে ফিরে রহস্য উপন্যাস ‘অমানুষ’ রচনার মধ্য দিয়ে আবার বিপুল পাঠকপ্রিয়তায় নতুন করে অভিষেক ঘটে তার বাংলার পাঠক সমাজে। প্রায় একই সময়ে টেলিভিশন নাটক রচনার মধ্য দিয়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে তার খ্যাতি। বিপুল জনপ্রিয়তায় অভিষিক্ত হয় তার প্রতিটি নাটক, উপন্যাস আর চলচ্চিত্র। তারপর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রাণঘাতী কর্কট ব্যাধি অকালে কেড়ে নেয় এই অনন্য জননন্দিত সাহিত্যিককে মাত্র ৬৪ বছর বয়সে। জীবনে যেমন তিনি ছিলেন বরণীয়, মৃত্যুর পরও এতটুকু ম্লান হয়নি তার বইয়ের চাহিদা।
নয়া শতাব্দী/আরআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ