ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপূর্ণ রয়ে গেল কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের দুটি উপন্যাস

প্রকাশনার সময়: ২৬ নভেম্বর ২০২১, ১৮:০১

শেষ বেলাতেও মগ্ন ছিলেন লেখালেখিতে। জাতিকে দেওয়ার প্রচেষ্টা ছিলো তার অনবদ্য। কিন্তু মৃত্যুর কারণে যাত্রার বিরতি। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক জীবনাবসানের আগে আরও দু’টি উপন্যাস উপহার দিতে চেয়েছিলেন। হঠাৎ মৃত্যুর কারণে আর শেষ হলো না তাঁর দু’টি উপন্যাস। ‘তরলাবালা’ ও ‘মাটির বাড়ি যতোদিন চন্দ্র-সূর্য’ নামে এই দুইটি উপন্যাস লেখা চলমান ছিলো তাঁর। উপন্যাস দুইটিতে সাহিত্যচর্চায় নতুন মাত্রা এনে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। গত সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় হাউসিং সোসাইটির (বিহাস) বাসভবনে জ্যোতির্ময় নক্ষত্রতুল্য কিংবদন্তি হাসান আজিজুল হকের প্রয়াণের কারণে তা অপূর্ণ রয়ে গেল। হাসান আজিজুল হকের ঘনিষ্ঠজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হোসেন বকুল (সাজ্জাদ বকুল) এমনটাই জানালেন।

ড.সাজ্জাদ বকুল জানান, বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন নারীকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া বিয়োগান্তক ঘটনা নিয়ে বড় পরিসরে ‘তরলাবালা’ উপন্যাসটি তিনি লিখতে চেয়েছিলেন। তা আর হয়ে ওঠেনি। বেশ ছোট পরিসরে তা লিখে বাংলাদেশে তার বেশ কিছু বইয়ের প্রকাশক ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের জহিরুল আবেদীন জুয়েলের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি আর সম্ভব হলো না।

তাঁর অসম্পূর্ণ আরেকটি উপন্যাস হলো ‘মাটির বাড়ি: যতোদিন চন্দ্র-সূর্য’। উপন্যাসটি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের যবগ্রামে ছেলেবেলায় তার বাবার মাটির বাড়ি তৈরির গল্প। এই গল্পেও আগুনপাখির মতো উঠে আসত সে সময়ের রাঢ়বঙ্গের জীবন, সংস্কৃতি, সংগ্রাম, হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির চিত্র। কিন্তু মাত্র ১০-১১ পৃষ্ঠা লেখার পরে করোনা মহামারিতে গৃহবন্দী হয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ায় আর শেষ করা হয়ে ওঠেনি তার এই উপন্যাস।

ড. সাজ্জাদ বকুল বলেন, ‘তরলাবালা’ মূলত একটি নারীর বাস্তব পারিবারিক ও সাংসারিক জীবন নিয়ে ট্রাজিটিক উপস্থাপনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এটি তিনি শুরুই করতে পারেননি। ‘মাটির বাড়ি যতদিন চন্দ্র-সূর্য’ তার গ্রাম যবগ্রামে বাড়ি নির্মাণের বিষয় নিয়ে একটি লেখা। এটিও আর উপন্যাস হয়ে উঠল না।

হাসান আজিজুল হক তার অসাধারণ সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। তিনি ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে একুশে পদক ও ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এর পাশাপাশি তিনি লেখক শিবির পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা অর্জন করেন।

সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ২০১৮ সালে ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধি লাভ করেন। ২০১২ সালে ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সন্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রিতে ভূষিত করে। তাঁর মৃত্যুতে দেশ একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদকে হারিয়েছেন বলে মনে করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. আবদুল খালেক।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ