ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কালপুরুষের কবিতা : ‘মদ সংক্রান্ত নয়’

প্রকাশনার সময়: ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:৩১

আমাকে যদি রাষ্ট্রপতি বানানো হতোঃ

প্রথমেই সকল মন্ত্রীদের খাঁদের সীমান্তে দাঁড় করিয়ে

আমাকে তোষামোদ করতে আদেশ দিতাম—

তাদের দিকে যেহেতু তাক করা থাকতো রাইফেল আর

পেছনে খাঁদ তারা একবার ব্রোথেল একবার কবরের কথা ভেবে মাথা নত কোরে গিলে ফেলতো থু থু

*

আমার বয়স আশি আর আমি এখনো

রাষ্ট্রটাকে কাঁধে নিয়ে ব্যারোলিনা নাচতে পারি

কারণ আমি নিয়মিত মদ খাই

আর দুই বেলা সঙ্গম করি

আমার এক কাঁধে পতাকা

অন্য কাঁধে মানচিত্র

সুতরাং আমাদের যুদ্ধক্ষেত্রের বিজয়ী ঘোড়াগুলোকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা হোক

যতদিন না মেয়রদের যুবতী স্ত্রীগণ এই মহৎ মৃত্যুদৃশ্যের তাৎপর্য অনুভব কোরে

স্মরণ করতে পারে প্রথম মাস্টারবেশোনের স্মৃতি

আপনাদের মধ্যে যাদের সুন্দরী মেয়ে আছে বিবাহযোগ্য— স্কুলে পাঠাবেন না

ওইসব স্কুলগুলো নতুন কিছুই দিতে পারে না;

আবিষ্কার কিংবা পরকাল সম্পর্কে তারা যা বলে সেসব তারা মুখস্ত কোরেছিলো

দাদীদের কোলে শুয়ে প্রায় দু’ হাজার বছর পূর্বে বরং তাদের ছবি আঁকা শেখান

কী কোরে আত্মার পাপকে আঁকতে হয়;

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন আমিই সে, যে সমস্ত পৃথিবীটাকে

একটি মাত্র শীতকালে

এঁকেছিলেন হামিং বার্ডের ডিমের খোসায়

সুতরাং আপনারা প্রতি রাতে মাত্র দু’জনকে পাঠাবেন।

দ্বিতীয় বছর থেকে শেখানো হবে গণতন্ত্র

মত প্রকাশে সকলকে স্বাধীনতা দেয়ার বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করা হবে

এমনকি ওদের ততক্ষণ কথা বলতে দেয়া হবে যতক্ষণ না কথা শেষ হয়

আমি শুধু ইশারায় শুরু ও থেমে যাবার সময় নির্ধারণ কোরে দেবো

আর যা বোলবে তা লেখাই থাকবে; এই কাজ লেখকদের।

সাধারণ জনগণ নিশ্চয়ই চিন্তা কোরে সময় অপচয় করবে না;

আপনাদের সুবিধামতো ধর্মগ্রন্থে আমি পরিবর্তন কোরে দেবো

কিন্তু ধর্মে বিশ্বাস ও সে অনুযায়ী আপনারা কাজ করে যাবেন

আমাকে বিশ্বাস করা মানে পুনর্জন্মে বিশ্বাস করা

আমাকে অবিশ্বাস করা মানে শয়তানের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো

সুতরাং আপনাদের সামনে একটিই দরোজা যা স্বর্গে যায় না

সময় মতো যারা কাজ করবে— বন্ধ দেয়ালঘড়ি

সময় মতো যারা ধর্ষণে অংশ নেবে— ব্যবহৃত কনডম

সময় মতো যারা কর দেবে— ব্যাংক

সময় মতো যারা গোলাপ গাছে পানি দেবে— পতিতালয় পুরষ্কার দেয়া হবে

পতিতালয়গুলো থাকবে সঙ্গম অযোগ্য বুড়ো ও তরুণদের তত্ত্বাবধায়নে

(যদিও অতি বৃদ্ধ ও অতি তরুণেরা পৃথিবীকে কিছুই দিতে পারে না যুদ্ধের উৎসাহ ছাড়া)

এবং স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না

মহিলাদের জন্য পৃথক ব্রোথেল থাকবে এবং আমি সমকামিতা ঘৃণা করি যদি না সেটা নির্বাচনী ইশতেহারে গোপন থাকে

নির্বাচনেঃ

চিংড়ি মাছ

অব্যবহৃত ব্রেসিয়ার

এবং সৌদি আরব

নামে কোনো প্রতীক বরাদ্দ করা যাবে না

নির্বাচন হবে বৈধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ সবাই ভোট দেয়ার অধিকার পাবে

সংবাদ মাধ্যম হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন তারা আগেই লিখে রাখবে আমার বিজয়ের খবর

*

আমি আমার দেশপ্রেমকে সীমান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছি

আপনারা নিশ্চিন্তে সার্কাসের জোকারের সঙ্গে

গলা মেলান— হা— হে— হো— হু

সার্কাসে যারা নাচে তারা মানুষ

সার্কাসে যারা টিকিট বিক্রি করে তারা মানুষ

সার্কাসে যারা হাততালি দেয় তারাও;

মহানুভব শয়তান ছাড়া আমার ধারণা সকলেই মানুষ

আপনারা ভাবছেন আমি মাতাল;

ভাবেন— পাগলদের দিয়ে আমি সংসদ চালাচ্ছি

আড়ালে আপনারা আমার কুশপুত্তলিকা জ্বালান

আমার স্ত্রীকে নিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি বইমেলায় যাবার পরিকল্পনা করেন

আমার মেয়েকে ভেবে আপনারা মাঝরাতে মৈথুন করেন

আপনারা ভাবেন লজ্জায় আমি আত্মহত্যা করবো আর

এক সৎ মেষপালককে আপনারা রাষ্ট্রপতি বানাবেন

রাষ্ট্র কি এতটাই নির্বোধ?

আপনারা ভুলে যাবেন না পকেটে আমি

সবসময় দুটি শোকমিছিল নিয়ে ঘুরে বেড়াই

*

রেডিওগুলো সারাদিন প্রচার করুকঃ

গতরাতে আমার স্ত্রী নির্বাসনে গ্যাছেন

যাবার আগে শেষ কথা কী বলেছিলো সে?

সকাল তখন দশটা

দাঁত ব্রাশ করছিলাম

একজন সাধারণ জীবিত মানুষ হিসেবে সেটাই ছিলো স্বাভাবিক

যুদ্ধের পূর্বে আপনাদের যেমনঃ

প্রথম কাজ হলো— বুলেট ও ট্রিগারগুলো চেক কোরে নেয়া

দ্বিতীয় কাজ হলো— ঘরের জানালাগুলো বন্ধ রাখা ও

শেষ কাজ হলো— প্রিয় স্থানে সঠিক মাপে কবর খুঁড়ে রাখা

পত্রিকাগুলো লিখুকঃ মরবার আগে সে কিছুই বলেনি

*

এবং আমি একজন কবি হু নেভার রাইটস এ পোয়েম

অথচ

কবিদের আপানারা মাথায় তুলেছেন

আর আপানাদের মাথায় তারা ঢুকিয়ে দিচ্ছে মিছিল

মিছিলে কারা যায়? মিছিলে কী হয়?

আপনাদের যুবতী যুবতী মেয়েরা কেন রাত ১১টায় বাড়ি ফেরে?

আপনারা কিচ্ছু জানেন না

পৃথিবীর মাঠে নেচে চলে এক নর্তকী

গণতন্ত্র দিয়ে কেনা সাপ তাকে চুমু খায়

স্বাধীনতা দিয়ে কেনা বেয়োনেট তাকে ধর্ষণ করে

আপনারা জানেন না রোজ সন্ধ্যায় কারা আপনার স্ত্রীকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে?

কয়েক লক্ষ ধর্মগ্রন্থ আপনারা কীভাবে আবিষ্কার করলেন? আমি জানি—

হারিয়ে যাওয়া বউকে খুঁজতে গিয়ে আপনি আবিষ্কার কোরেছিলেন একটি নতুন ধর্ম

পুরুষের সঙ্গে হাসতে দেখে লিখে ফেলেছিলেন গ্রন্থটির প্রথম ইশতেহার

ভবিষ্যৎদ্রষ্টাদের ডেকে নিয়ে আসুন

দুই হাজার বছর পূর্বে লিখে রেখেছিলাম আমার ভবিষ্যৎ

প্রমাণ করুক এটা মিথ্যে আর প্রমাণ করুক

কে নিহত আর কে খুনী

(আমি পৃথক করতে পারছি না)

আপনারা যারা এখনো জীবিত আর যীশুর মতো পবিত্র

আপানরা যারা দাঁতের ভেতর সায়োনাইড নিয়ে ঘুরে বেড়ান

আপনারা যারা তিনরাত ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যার নির্বুদ্ধিতা প্রসঙ্গে বক্তৃতা দিচ্ছেন

আপনারা কি সত্যিই মৃত্যুতে বিশ্বাস রাখেন না?

সুতরাং আপনারা, এই শীতে যারা সঙ্গম করতে করতে মারা গিয়েছিলো—

আর স্বপ্নে খুন করার অপরাধে যাদের ফাঁসি দেয়া হয়েছিলো

তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় শোক পালন উৎসবে

প্রয়োজনীয় অনুদান দেবেন—

দেয়ালঘড়ি

শীতবৃষ্টি

হলোকাস্ট

পরস্ত্রীকে প্রেম

পৃথিবীকে তিনবার প্রদক্ষিণ

প্রেমিকার নগ্ন পোট্রেইট

মা’কে দাঁড় করিয়ে পাখি শিকার

হাঁটতে হাঁটতে ঘুমিয়ে পড়া

স্বপ্নে পরস্ত্রীর নাভি

সাপের তৈরি মদ

কবর থেকে উঠিয়ে ধর্ষণ

মোম জ্বালিয়ে থেরাপী

নপংসুক স্বামীর ট্রাউজার

ব্রোথেলের দালাল

নরকের প্রহরীর সঙ্গে জুয়া

নো ম্যানস ল্যান্ডে মাছ চাষ

কৃষিবিপ্লবীদের হাতে গার্মেন্টস কর্মীর রক্ত

সমাধিফলকে ‘I can’t see’

( ডানদিকে কখনো হাঁটবেন না

দিনের বেলা মিথ্যে বলবেন না

বউদের প্রতি লয়াল থাকবেন )

ক্রুশের নিচে মাথা রেখে হো হো কোরে হাসি

বাজির ঘোড়াকে গুলি

হিপোক্রেট সব যাজক

লেখা হয়নি এমন চিঠি পড়ে কান্না

‘ফিরে এসো চাকা’

স্কুল পালানো সিনেমাঘর

বিলীন হয়ে যাওয়া গ্রাম

জুয়ার টেবিলে প্রার্থনা

ধানক্ষেত পুড়িয়ে গ্রীষ্মকাল

কুকুরের পিঠে বিশ্বভ্রমণ

ছেলেটির হাতের বয়স ১৩

মেয়েটির চোখের বয়স ১৯

তেরেসাকে প্রেমের প্রস্তাব

প্রাক্তন প্রামিকার সঙ্গে রাঙ্গামাটি

পাহাড় থেকে নিজেকে ধাক্কা

কবিতার বাজারজাত প্রসঙ্গ

গুলিস্তানে কবির মৃতদেহের বয়স তিন ঘণ্টা

শিংহীর চামড়ার জ্যাকেট

সমুদ্রে গিয়ে ঘুম

মদের বোতলে রপ্তানীকৃত গীতাঞ্জলী

ডোমের অতিথি সৎকার

কবরে জন্মানো ঔষুধি গাছ

স্মরণ সভায় চিৎকার

কফিন খুলে উঠে দাঁড়ানো সম্ভাষণ

গণিকাকে উপর্যুপরি ছুরি

দু’ পা ছড়িয়ে সন্তানের লাশের প্রতীক্ষা

কুষ্ঠ রোগীর সঙ্গে জীবন বদল

ইঁদুর কেটে নৈশ ভোজ

পাগলিনীর স্তনে এক্সিডেন্ট

ঘোড়ার সঙ্গে সহবাস

বেড়ালের জাফলং ভ্রমণ

পিতাকে জীবন্ত আগুন

দু’ হাজার মাইল দৌড়ে চিঠি পোস্ট

রাস্তা ভুলে ভিক্ষে

শ্বাসরোধ কোরে টিকটিকি হত্যা

ক্যানসার আক্রান্ত হাসপাতাল

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির নাকে ঘুসি

সিগারেট বেঁচে লাইটার

বাসর রাতে হস্তমৈথুন

প্রভুর সঙ্গে ইয়ার্কি

ভূতের সঙ্গে টুয়েন্টি নাইন

যুবতীর উরুহীন বিজ্ঞাপন

ভগবান কি গরু খান?

‘বিয়ে করবেন না’ ইশতেহার

চিন্তাশীল কমোড

পতিতালয়হীন একটি বিখ্যাত শহর

এবং

নিলামে পৃথিবীর শেষ মানুষ

*

ভাবতেই বিষণ্ণ লাগে যে, আমি এখনো বেঁচে আছি

আর এটা পৃথিবীর জন্যও একটা দুর্ভাগ্য

অস্ত্র ব্যবসায়ীরা আমার সঙ্গে মদ খায়

টুপি-নির্মাতারাও আমাকে নমস্কার জানায়

আমিই সেই ব্যক্তি যিনি হত্যা আর প্রার্থনার পূর্বে

রক্ত দিয়ে হাত ধোয় আর জেগে জেগে পৃথিবীটাকে এক ফুঁৎকারে ধ্বংসের স্বপ্ন দ্যাখে

আর চিন্তার অর্থহীনতা নিয়ে দু’ বছর ধরে ভেবে নিজেকে

একজন দার্শনিক হিসেবে অহঙ্কার করেঃ

—কিন্তু আমেরিকা, ক্ষমতা দিয়ে আপনি কি আমার মতো,

কবরে একটি জানালা লাগাতে পারবেন?

—ট্রাউজারের জিপার খুলতে আর বন্ধ করতেই অর্ধেক জীবন শেষ হয়ে যায়— বাকিটুকু অন্ধকার

—দিনের বেলায় আপনারা কখনো কবরস্থানে যাবেন না বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, একটি কুকুরকে সেদিন হাওয়ার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করতে দেখেছি

—২১টি মিথ্যের দলগত সঙ্গমে একটি সত্য উৎপাদিত হয়

তোমরা বলো লোকটা সত্যবাদী— সত্য এক চমৎকার মিথ্যে

—মদ খাও সন্ধ্যা থেকে সূর্যদয় পর্যন্ত;

তারপর?— অপেক্ষা করো সন্ধ্যার

—মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে যা তোমাকে আমৃত্যু বাঁচিয়ে রাখে সেটাই জীবন

—আপনি যদি দ্যাখেন দু’জন রূপসী মহিলা ঝগড়া কোরছেন,

আপনি যদি দ্যাখেন ধর্মালয়ে ধর্ষণ হচ্ছে একজন শিশু

হ্যাঁ ওটাই

ওখানে ঢুকবেন না

ওটাই পৃথিবী

—“যুদ্ধ নয় শান্তি” লেখা ইশতেহার ছাপানোর লক্ষ্যে

আপনারা যখন কাগজ ছিনতাই করেন— আপনাদের আদর্শের উপর

আমার মৈথুন করতে ইচ্ছে হয়

—একমাত্র গাছ ছাড়া কেউই আমাকে ভালোবাসে না

( গাছেরা কি নির্বোধ? )

*

জাহান্নাম সম্পর্কে আমার ধারণাসমূহ উঁচু আর আশাপ্রদ ছিলো

কিন্তু আমার বিরক্ত লাগছিলো যখন আমাকে বেহেস্তের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো

আর সোনালী চুলের বাহাত্তরটি হুর

তাদের উচু স্তন দেখিয়ে

আমার চোখকে শোকাগ্রস্ত কোরে তুলবার চেষ্টা করছিলো

আমাকে রক্ষা কোরেছিলো আমার সংযম—

নরকে বইয়ের দোকান দেবার ইচ্ছে হতে যার জন্ম

*

আমার কফিনে দুটি ডানা লাগানো হয়েছে,

কিন্তু, আমি কি ঠিক সময়ে মরতে পারবো?

*

পৃথিবীটা আমার স্বপ্নমাত্র

সুতরাং আমাকে ঘুমোতে দিন

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ