ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
হুমায়ূন প্রয়াণ দিবস আজ

মরমে শতত জাগিছো শয়নে স্বপনে...

প্রকাশনার সময়: ১৯ জুলাই ২০২৩, ১১:১৮
নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। ফাইল ছবি

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে/রয়েছ নয়নে নয়নে,/হূদয় তোমারে পায় না জানিতে,/হূদয়ে রয়েছ গোপনে’— কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গানের এই ক’টি চরণ খুবই পছন্দ করতেন বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ। তাই শহিদ পিতা ফয়জুর রহমানের সমাধিতে এপিটাফে চরণ দুটি খোদাই করেছেন তিনি। ‘লীলাবতী’ নামে হুমায়ূন আহমেদের এক কন্যা জন্ম নিয়েছিল দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের গর্ভে। সন্তানটি জন্মের সময় মারা যায়। এই মেয়ের নামে নাম রেখেছেন দিঘির। তার পাড়ে শানবাঁধানো ঘাটের পাশে মার্বেল পাথরে লিখে রেখেছেন এপিটাফ, রবীন্দ্রনাথের লেখা এই’ই চরণ দুটি। কবিগুরুর কথাগুলোর মতোই তিনি আজ নেই নয়নের সম্মুখে। কিন্তু সবার অলক্ষ্যেই তিনি রয়ে গেছেন সবার নয়নে নয়নে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে হয়— ‘বাসনার বশে/মন অবিরত/ধায় দশ-দিশে পাগলেরও মত/স্থির আঁখি তুমি/মরমে শতত-জাগিছো শয়নে স্বপনে...’।

বইমেলায় এখনও সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় তার বই। লেখক-প্রকাশকরা নির্দ্বিধায় বলেন, তিনি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের চেয়েও বেশি জনপ্রিয়। তার সৃষ্টিসম্ভার দিয়ে তিনি জয় করছেন অগণিত পাঠকের মন। গল্পের জাদুকরখ্যাত হুমায়ূন আহমেদের ১২তম প্রয়াণ দিবস আজ। দেখতে দেখতে হুমায়ূনবিহীন কেটে গেল ১১টি বছর। ২০১২ সালের আজকের এই দিনে ক্যান্সার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি নিউইয়র্কের বেলভ্যু হাসপাতালে মারা যান। তার মৃত্যু শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী সব বাঙালির হূদয়ে গভীর শোকের অন্ধকার ছড়িয়ে দিয়েছিল।

নুহাশপল্লীর লিচুতলায় যেখানে হুমায়ূন আহমেদ চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। আজ তা ভরে যাবে হাজারও ভক্তের ফুলেল ভালোবাসায়। ভালোবাসার অর্ঘ্য নিয়ে আসবেন পরিবারের সদস্যরাও। তার প্রয়াণ দিবস উপলক্ষ্যে নুহাশপল্লীর পার্শ্ববর্তী এতিমখানার অনাথ শিশুদের খাওয়ানো হবে হুমায়ূন আহমেদের পছন্দের খাবার। থাকবে কোরআনখানি।

মাত্র ৬৪ বছরের জীবনে হুমায়ূন আহমেদ বাংলা কথাসাহিত্যের অঙ্গনে, টেলিভিশন নাটক আর চলচ্চিত্রাঙ্গনে এমন জনপ্রিয়তায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন, যা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। তার মতো অতুলনীয় পাঠকপ্রিয় ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, নাট্যকারের শূন্যতা যে কখনও পূরণ হবে না— তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়।

তিনি এ দেশের সৃজনশীল সাহিত্য প্রকাশনাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন বিপুল পাঠকপ্রিয়তা সৃষ্টির মাধ্যমে। ভারতীয় বাংলা গল্প, উপন্যাসে নিমগ্ন পাঠকদের বাংলাদেশি লেখকদের বই পড়তে বাধ্য করেছিলেন তার আশ্চর্য জাদুকরি গল্পের জালে জড়িয়ে। মোহাবিষ্ট পাঠক হুমায়ূন আহমেদের রচনায় মধ্যবিত্ত জীবনের হাসি-কান্নার এমন নিবিড় পরিচয় পেয়েছেন, যেখানে তাদের নিজেদেরই জীবনের ছবি প্রতিবিম্বিত।

গাজীপুরের পিরুজালীতে নিজ হাতে গড়ে তুলেছিলেন সবুজ ছায়াঘেরা নিসর্গ ‘নুহাশপল্লী’। সেখানেই চিরঘুমে আছেন হুমায়ূন আহমেদ। তার মুত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নুহাশপল্লীর লিচুতলায় তার সমাধি যেমন ফুলে ফুলে ভরে উঠবে, তেমনই গণমাধ্যমও মুখর থাকবে তার স্মৃতির-মুদ্রিত আর ভিজুয়াল উপস্থাপনায়। দেশের প্রকাশনা সংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠন গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে পাঠকনন্দিত এ কথাশিল্পীকে। তার নাম জয় গৌরবে উচ্চারণ করে ভক্তকূল অকুণ্ঠ কণ্ঠে বলে উঠবে— ‘কে বলে আজ তুমি নাই’।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ