ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
অমর একুশে বইমেলা

আলো ছড়াচ্ছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরাও

প্রকাশনার সময়: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২১:০১

কে বলল তারা নেই। অন্য সবার মতো তারাও আছেন। বলছি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বন্ধুদের কথা। অমর একুশে বইমেলায় তাদের জন্যও একটি স্টল রয়েছে মেলার বাংলা একাডেমি অংশে। বাংলা একাডেমির ড. মুহম্মদ এনামুল হক ভবনের সামনে স্পর্শ ব্রেইল ফাউন্ডেশনের স্টলে (স্টল নং ৮৮৭/৮৮৮)। ভিড় দেখা গেল বেশ। দৃষ্টিজয়ী পাঠকদের জন্য বইমেলায় এই একটিই স্টল। সেখানে সাজানো কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের ‘সূর্যের দিন’, মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, কাইজার চৌধুরীর ‘শোভনের একাত্তর’ উপন্যাস। তবে বই বিক্রির উদ্দেশ্য নয়, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরাও পড়তে পারেন এটা জানান দিতেই স্পর্শ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বইমেলায় হাজির হয়েছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বন্ধুরা। প্রিয় লেখকদের ব্রেইল বইগুলো উল্টে দেখছিলেন কয়েকজন। সেখানে কথা হয় দৃষ্টিজয়ী কলেজছাত্র তরিকুল ইসলাম নাজিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে আমি ব্রেইলের এ প্রকাশনার খবর পাই। তার পর থেকে নিয়মিত আসা শুরু। আমি এখন ব্রেইল প্রকাশনার স্বেচ্ছাসেবক। বইমেলায় নতুন বই এলেই খবর পাই। অনেক ভালো বই চাইলেও পড়তে পারি না। অডিও বুক আছে। কিন্তু বইয়ের অক্ষরগুলো ছুঁয়ে দেখে পড়ার যে আনন্দ, তা কি অন্য কিছুতে পাওয়া যায়?’

যারা চোখে দেখতে পান না, তাদের বলা হয় ‘দৃষ্টিজয়ী’। তাদের বই পড়ার পরিসর বিস্তৃত ও সহজ করার পরিকল্পনা নিয়ে ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্পর্শ ব্রেইল ফাউন্ডেশন। ২০০৯ সালে ‘স্পর্শ ব্রেইল কর্নার’ প্রতিষ্ঠার পরের বছর বইমেলায় অংশগ্রহণের পর কিছুটা সাড়া মেলে। ওই বছর তারা প্রথম একটি ছড়ার বই ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করে। বাংলায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রকাশিত প্রথম ব্রেইল বই ‘ছড়ার তালে মনটা দোলে’। বইটির লেখক ও প্রকাশক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্পর্শ ব্রেইল কর্নারের প্রতিষ্ঠাতা নাজিয়া জাবীন। এর পরই তার গল্পগ্রন্থ ‘বিনির সাথে পুতুল বিয়ে’ ব্রেইলে রূপান্তর করেন। ২০১২ সালে স্পর্শ ব্রেইল ফাউন্ডেশন বইমেলায় স্টল নেয়। স্টল দেখে ব্রেইল বই প্রকাশ বিষয়ে প্রথম এগিয়ে আসেন প্রকাশনা সংস্থা সাহিত্য প্রকাশের কর্ণধার মফিদুল হক। ১৫ বছরের পথচলায় স্পর্শ ফাউন্ডেশন এ পর্যন্ত ১৩১টি গল্প, কবিতা ও উপন্যাস ব্রেইলে রূপান্তর করেছে।

নাজিয়া জাবীন বলেন, ‘এ দেশে দৃষ্টিহীন মানুষ একেবারে কম নন। তারা শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে আটকে থাকতে চান না। তারা হুমায়ূন আহমেদ পড়তে চান, মুহম্মদ জাফর ইকবাল পড়তে চান। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তাদের মনের জানালা খুলে দেয়ার জন্য এ চাহিদা মেটানোর ন্যূনতম উদ্যোগ নেই। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারিভাবে পাঠ্যবইগুলো ব্রেইল করে সরবরাহ করা হলেও অন্য বই প্রকাশ হয় না। অথচ সাহিত্য পাঠে তাদের অপরিসীম আগ্রহ। সিসিমপুরের মতো প্রতিষ্ঠান এবার বইমেলায় তাদের ১০টি বই দিচ্ছে। যে শিশুর মাত্র অক্ষরজ্ঞান হলো, সে সিসিমপুরে ওই বইগুলো হাতে নিয়ে হারিয়ে যায় কল্পনার রাজ্যে।

তিনি জানান, এবার ৩০টি বই প্রকাশ করেছে স্পর্শ। বইগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চাঁদের পাহাড়’, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ‘সুলতানার স্বপ্ন’, লুৎফর রহমান রিটনের ‘ভূতের ডিমের অমলেট’, মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘যারা বায়োবট’, আনজীর লিটনের ‘বাবা বাড়ি ফেরেনি’। দেখা গেল মেলায় আগতরা কেউ কউ ব্রেইল বই হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছেন। আবার কেউ কেউ অনুরোধ করছেন এই বই-সেই বই থেকে খানিক পড়ে শোনাতে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বন্ধুরা সহাস্যে পড়েও শোনাচ্ছেন। আগ্রহীদের নানা প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক ও লেখিকা নাজিয়া জাবীন। তিনি জাবীন বলেন, ‘আমরা চাই প্রত্যেকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর অন্তত একটি করে ব্রেইল বই প্রকাশ করুক। এর মধ্য দিয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা অন্য সবার মতো করে সারা বছরই আনন্দে উজ্জীবিত থাকবে। কারণ তারাও মূলধারার সাহিত্য পছন্দ করে।’ নাজিয়া জাবীন জানান, তার কর্মজীবন শুরু ‘প্রচেষ্টা’ নামে একটি এনজিওতে কাজ করার সময় থেকে। ওই প্রতিষ্ঠানটি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করত। সেই থেকে তার পথচলা।

প্রথমদিকে নিজের চেষ্টায় বই প্রকাশ শুরু করেন। সে সময় আ্তীীয়স্বজনদের সহায়তা পেয়েছেন। এরপর কিছু দাতা সংস্থা পাশে দাঁড়িয়েছে। নাজিয়া জাবীন মনে করেন সহযোগিতার পরিমাণ বাড়লে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য আরও ব্রেইল প্রকাশনা বাড়ানো সম্ভব। ‘মানুষ দৃষ্টিহীন বলেই অন্ধ নয়/ মানুষ মূলত প্রজ্ঞাহীন বলেই অন্ধ’— স্লোগান ধারণ করে ২০০৮ সাল থেকে স্পর্শ-এর পদচারণা শুরু। ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত মেলায় অংশ নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সৈয়দ আকতার হোসেনের তত্ত্বাবধানে মিলিটারি ইনস্টিটিউট সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির তিন অধ্যাপক ইমতিয়াজ, মাহবুব ও সামি-মিলে বাংলায় প্রকাশিত বইকে দ্রুত ব্রেইলে রূপান্তরের সফটওয়্যার তৈরি করেন। তাদের সহযোগিতায় বইগুলো ব্রেইলে রূপান্তর করা হয়। এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ৩০০ পাতার বইকে ২০ সেকেন্ডে রূপান্তর করা সম্ভব।

নাজিয়া জাবীনের কাছ থেকে জানা গেল, ২০০৯ সালে তার হাত ধরে বাংলা ভাষায় প্রথম ব্রেইল ছড়ার বই ‘ছড়ার তালে মনটা দোলে’ প্রকাশ হয়। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে বের হয়েছে বিভিন্ন লেখকের প্রায় ১৩১টি বই। তবে এসব বই বিক্রির জন্য নয়। মেলায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা এলে স্টলে বসে বই পড়তে পারবেন। আর বই পড়তে পড়তে কোনো বই যদি কারও পছন্দ হয়ে যায় তাহলে মেলার পর সেই বইটি তাকে উপহার হিসেবে দেয়া হবে। এ জন্য অবশ্য আগে থেকে নাম নিবন্ধন করতে হবে। নির্দিষ্ট কোনো বইয়ের জন্য কমপক্ষে ২০ জন নাম নিবন্ধ করলে বইটি নতুন করে ব্রেইলে ছাপিয়ে বিনামূল্যে উপহার দেয়া হবে। জাতীয় গণগ্রন্থাগার, শিশু একাডেমি পাঠাগারসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্রেইল কর্নার করা হয়েছে জানিয়ে নাজিয়া বলেন, ব্রেইল বই প্রকাশে প্রতিটি পৃষ্ঠায় খরচ হয় ৮ থেকে ১০ টাকা। সাধারণ বইয়ের একটি পাতা ব্রেইল বইয়ে হয়ে যায় তিন পাতা। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্রেইল বই প্রকাশের উদ্যোগ নিলেও বইমেলার সহ-আয়োজক বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির নেতাদের এতে আগ্রহ নেই। আগ্রহী হয়ে বই কিনতে চাইলে স্টলে দায়িত্বে থাকা ইমরুল হাসান জানান এ প্রকাশনী বই বিক্রি করে না, দৃষ্টিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করে। তিনি স্পর্শ ও হেপার স্বেচ্ছাসেবী গণসংযোগ সমন্বয়ক। তিনি বলেন, স্পর্শের প্রতিষ্ঠাতা নাজিয়া জেবীন ২০০২ সালে বইমেলায় নতুন প্রকাশনা করেন। সেখানে তিনি দেখতে পান দৃষ্টিজয়ী শিক্ষার্থীরা বই নাড়িয়ে-চাড়িয়ে, স্পর্শ করে দেখছেন কিন্তু পড়তে পারছে না। তাদের বই পড়ার আকাঙ্ক্ষা নাড়া দেয় এ শিশুসাহিত্যিককে। এরপর তিনি ২০০৮ সালে প্রকাশনাটি প্রতিষ্ঠা করেন। আর ২০০৯ সালে প্রকাশনীর প্রথম বই প্রকাশ করা হয়। এরপর ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত বইমেলায় দৃষ্টিজয়ীদের সাহিত্যের স্বাদ দিয়ে আসছে প্রকাশনাটি।

বই পড়ার মাধ্যমে দৃষ্টিজয়ীদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও স্বপ্ন দেখতে উদ্বুদ্ধ করাই মূলত প্রকাশনার উদ্দেশ্য বলে তিনি জানান। সব সময় যেন দৃষ্টিজয়ী মানুষরা বই পড়তে পারেন, সে জন্য জাতীয় পাঠাগার, বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন লাইব্রেরিতে ব্রেইল কর্নার স্থাপন করেছে প্রকাশনাটি। হেপা নামে একটি এনজিওর সহযোগিতায় দুটি বৃত্তি দিচ্ছে প্রকাশনাটি। এর মধ্যে ‘জ্যোতিবৃত্তি’ দেয়া হচ্ছে যারা স্ব স্ব পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করছে তাদের। আর অন্য সাধারণ বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন বই কেনা, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মা-বাবাকেও কাউন্সিলিং করেন তারা।

ব্রেইল মাধ্যমে প্রকাশিত বইয়ে ছয়টি বিন্দু ব্যবহার করে লেখা হয় এসব বই। বাংলা বর্ণ অ-এর জন্য একটি বিন্দু আবার ইংরেজি বর্ণের (এ) জন্যও একটি বিন্দু ব্যবহার কার হয়। এভাবে ছয়টি বিন্দু বিভিন্নভাবে সাজিয়ে লেখা হয় বিভিন্ন বর্ণ। কিন্তু এ বাংলা, ইংরেজি বা আরবি— এসব ভাষার পার্থক্য তারা কীভাবে বুঝতে পারেন— জানতে চাইলে স্টলে বসে বই পড়া বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের দৃষ্টিজয়ী শিক্ষার্থী মোহিনী বলেন, ‘আমরা বিন্দুগুলো স্পর্শ করে বুঝতে পারি কোনটা কী। সেগুলো ডিকোড করে আমরা পড়ি। আর ইংরেজি বোঝার জন্য একটা চিহ্ন দেয়া আছে। যাকে ক্যাপিটাল সাইন বলে। এর ফলে আমরা বুঝতে পারি এটা ইংরেজি লেখা। আরবির জন্যও একই ধরনের চিহ্ন রয়েছে।’ তাদের মতো মানুষদের সাহিত্যের স্বাদ উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য স্পর্শের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা স্পর্শের সহযোগিতায় সাহিত্যের স্বাদ নিতে পারছি, অনেক অনেক মজার বিষয় সম্পর্কে জানতে পারছি। এ জন্য স্পর্শের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ভালোবাসা।’

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ছিল এবাবকার মেলার সর্বশেষ শিশুপ্রহর। এদিনও সকাল থেকে ছিল জনারণ্য। সন্ধ্যার পর মেলায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। এদিনও কঠোর নিরাপত্তা চৌহদ্দির মধ্য দিয়ে মেলায় ঢুকতে হয়েছে পাঠক-ক্রেতাদের। এদিনও ছিল সিসিমপুর চরিত্রগুলোর বিশেষ পরিবেশনা।

বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের দেয়া তথ্যমতে শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) মেলায় নতুন বই এসেছে ১৮৫টি। মেলায় চারুলিপি থেকে প্রকাশ হয়েছে আসাদুজ্জামান নূর সংকলিত ‘রাজনীতির কবিতা’, ঐতিহ্য থেকে এসেছে জাকির তালুকদারের ‘প্রিয় ১৫ গল্প’, সোমেশ্বর অলির কবিতার বই ‘কিছুটা উপর থেকে মানুষ দেখতে ভালো লাগে’, মাহফুজ আলম রচিত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও সমকালীন জনমত (১৯১১-১৯২১), কথাপ্রকাশ থেকে সনৎকুমার সাহা রচিত ‘প্রতিধ্বনির প্রতিধ্বনি: পাঁচ ভাষার কবিতা’, হরিশংকর জলদাসের ‘কর্ণ’ ও আলম সিদ্দিকীর ‘গোয়েন্দা’, আগামী প্রকাশনী এনেছে অধ্যাপক ডা. অরূপরতন চৌধুরীর ‘মাদকাশক্তি পরিস্থিতি বাংলাদেশ’, সিতাংশু গুহের ‘ক্লিনটন মনিকার প্রেম’, মঞ্জু সরকারের ‘অবগুণ্ঠন’, পাঠক সমাবেশ এনেছে হেনা খাঁনের ‘প্রতিবাদের অগ্নিজল’, অন্যপ্রকাশ এনেছে হাসানাত লোকমানের ‘সুন্দর সর্বনাশ’, পাঞ্জেরী এনেছে মারুফ রসূলের ‘বাকশালের আদ্যোপান্ত’ ও আব্দুল ওয়াহাবের ‘অরিণের জিন’, অর্জন প্রকাশন এনেছে এইচ এম মেহেদী হাসানের ‘ছোটদের বঙ্গবন্ধু’, শব্দশিল্প এনেছে অনামিকা হিয়ার ‘শিকলহীন শতাব্দী’, কামরুজ্জামান ভূঁইয়ার বাগ ও মায়ান, রাসেল মাহমুদের গল্পগ্রন্থ ‘কয়েক ছত্র কান্নার গল্প’ এনেছে পলল প্রকাশনী, সলিমুল্লাহ খানের দুটি বই ‘ঠাকুরের মাৎস্যন্যায়’ ও ‘উৎসর্গ’ মেলায় এনেছে মধুপোক, আবুল মোমেনের কবিতার বই ‘পাথর যখন চেপে ধরে’ মেলায় এনেছে চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন।

অমর একুশে বইমেলায় আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে রাজনৈতিক কর্মী ও টিভি ব্যক্তিত্ব রাশেক রহমান রচিত বই ‘লিটল রক নাইন ও বাংলাদেশ। আগামী প্রকাশনীর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বইটি। লেখক জানিয়েছেন, ‘সমকালের বাস্তবতায় নানামাত্রিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে বইটিতে। এতে সুন্দর, সমৃদ্ধ আগামীর স্বপ্ন দেখার উপকরণ রয়েছে, আছে স্বপ্ন বাস্তবায়নের উৎসও।’ বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার নৃশংসতা, দুই ঘটনার যোগসূত্র নিয়ে কিছু প্রশ্নের অবতারণা করা হয়েছে।

কনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার মূলমঞ্চে ছিল ‘কোভিড-১৯: ভাষার বৈশ্বিকতা ও বাংলাদেশের সাহিত্য এবং কোভিড-১৯: সংস্কৃতির সংকট ও রূপান্তর’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাকিম আরিফ এবং মোহাম্মদ শেখ সাদী। আলোচক ছিলেন পারভেজ হোসেন, হামীম কামরুল হক, কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী এবং আবুল হাসান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রফিকউল্লাহ খান। প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, ‘২০২০ সালে বৈশ্বিক বিস্তৃতিতে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ এমনই এক অতিমারি রোগ যা মানুষের সৃজনশীলতাকে নানা মাত্রায় স্পর্শ করেছে। এ অতিমারির কারণে বাংলা ভাষাসহ সারা বিশ্বের ভাষাগুলোয় নতুন শব্দমালা ও পরিভাষার উদ্ভব ঘটেছে। পাশাপাশি কোভিডকালীন বন্দি সময় বাংলাসাহিত্যে কোভিডকেন্দ্রিক সাহিত্যকর্ম রচিত হয়েছে। অতিমারির সময়টিতে আমাদের জীবনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন সংস্কার। ফলে ধীরে ধীরে সংস্কৃতিও রূপান্তরিত হচ্ছে।’

আলোচকবৃন্দ বলেন, ‘কোভিডকাল আমাদের জীবনে নতুন অভিজ্ঞতার সঞ্চার করেছে, আমাদের চিন্তায় এবং জীবনযাত্রায় এনেছে পরিবর্তন। এ সময় আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রের মতো শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিও অতিক্রম করেছে সংকটময় মুহূর্ত। করোনা আমাদের মনে যে প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে তা থেকে সারা বিশ্বের সাহিত্যে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। বাংলাসাহিত্যও এর ব্যতিক্রম নয়। সমকালীন বাস্তবতার ভাষ্যকার শিল্পী ও সাহিত্যিকরা তাদের সাহিত্যে করোনার নানামুখী অভিঘাতকে চিত্রিত করেছেন। করোনা ভয়াল অভিঘাতে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও জীবন-সংস্কৃতি যেমন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে তেমনি ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলার নানা পথ আমাদের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। ’

সভাপতির বক্তব্যে রফিকউল্লাহ খান বলেন, ‘করোনার সংকটময় কালে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশ ও মুখোমুখি হয়েছে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির। সে সময় আমরা বিচ্ছিন্নতার অভিজ্ঞতা লাভ করেছি, আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি নানাভাবে রূপান্তরিত হয়েছে। তথাপি বাংলাদেশের মানুষ সাহসিকতার সঙ্গেই করোনা সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে।’

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন সামসাদ সুলতানা খানম, হাসান রাউফুন, বীথি রহমান এবং মামুন সারওয়ার। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন প্রদীপ মিত্র, সুহিতা সুলতানা, চঞ্চল শাহরিয়ার, আরিফ মঈনুদ্দিন, সামতান রহমান, হরষিত বালা, কানিজ পারিজাত, মনির ইউসুফ, ইমরান পরশ এবং মীর রেজাউল কবির। আবৃত্তি পরিবেশন করেন সুপ্রভা সেবতি, সাহিত্য ভঞ্জ চৌধুরী এবং রত্না সিন্হা। ছিল রাজেশ দাসের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘উঠোন’, আলম আরা জুঁইয়ের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘কুষ্টিয়া আবৃত্তি পরিষদ’, সাজেদ ফাতেমীর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘নকশীকাঁথা’, আরিফুজ্জামান চয়নের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘উদ্ভাস নৃত্যকলা একাডেমী’র পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মুজিব পরদেশী, রুশিয়া খানম, রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সমর বড়ুয়া, লুনা ফাতিমা, ডালিয়া সুলতানা, নাসিমা খন্দকার পাপিয়া এবং সোমা দাস।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলা চলবে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত। এদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্থানীয় সাহিত্যের বৈভব ও জেলা সাহিত্যমেলা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সাইমন জাকারিয়া। আলোচনায় অংশ নেবেন মুন্সি আবু সাইফ, সাহেদ মন্তাজ এবং মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মুহম্মদ নূরুল হুদা।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ