বাংলা একাডেমির মহাপরিচালককে উড়ো চিঠি দেয়ার পরের দিন শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বইমেলায় কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং সকাল থেকেই মেলার টিএসসি, রমনা কালী মন্দির ও ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের গেটে লম্বা লাইন দেখা গেছে। সন্ধ্যায় জনারণ্যে পরিণত হয় মেলা। জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন ‘অমর একুশে বইমেলা’র শেষ শুক্রবার আজ। সকাল ১১টার ১০ মিনিট আগে মেলায় প্রবেশের দীর্ঘ লাইন।’ এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘বোমা হামলার হুমকি দিয়ে উড়ো চিঠির কোনো প্রভাব মেলায় পড়েনি। বরং সকালে যখন টিএসসি প্রান্ত দিয়ে মেলায় ঢুকি তখন লম্বা লাইন ছিল। অনেকে দলবেঁধে পরিবার নিয়ে মেলায় আসছেন।’
অমর একুশে বইমেলায় বোমা হামলার হুমকি দিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদাকে চিঠি দিয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। ২৩ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডাকযোগে বাংলা একাডেমির অফিসে এ চিঠি পাঠানো হয়। এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। বাংলা একাডেমির নিরাপত্তা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম থানায় জিডি করেন।
জিডির আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আনুমানিক সকাল সাড়ে ১১টায় আনসার আল ইসলামের মাওলানা মো. সাইদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বরাবর প্রেরিত এক পত্রে অমর একুশে বইমেলায় বোমা হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে। বিষয়টি আতঙ্কের। এমতাবস্থায় বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করে রাখা প্রয়োজন।’
জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ নয়া শতাব্দীকে বলেন,‘নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বাংলা একাডেমির মহাপরিচালককে চিঠি দিয়ে বলেছে, রাজধানীর দুটি হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। এগুলো বন্ধ না হলে অমর একুশে বইমেলায় বোমা হামলা চালাবে। এ ঘটনায় বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ একটি জিডি করেছে। আমরা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছি।’
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি অফিসের বাইরে ছিলাম। শুনেছি এমন একটা চিঠি এসেছে। আমরা শাহবাগ থানায় জিডি করেছি।’
অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডাকযোগে এ চিঠি পাঠানো হয়। আমরা চিঠি থানাকে ফরোয়ার্ড করে দিয়েছি। বিষয়টি তারা দেখবে।’
বোমা হামলার হুমকি পাওয়ার পর অমর একুশে বইমেলায় সকাল থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার শহীদুল্লাহ বলেন,‘মেলায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ভয়ের কোনো কারণ নেই। লেখক ও পাঠকরা নির্ভয়ে মেলায় আসতে পারেন।’
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) প্রথম দুই ঘণ্টা শিশু প্রহর হলেও সব বয়সি ক্রেতা মেলার প্যাভিলিয়ন ও স্টল ঘুরে কিনেছেন পছন্দের বই। কেউ একা আবার কেউ দলবেঁধে এসেছিলেন। প্রকাশকরা জানালেন, ‘আগের তুলনায় বিক্রির চিত্রটা খুবই ভালো যাচ্ছে। এখন আর কেউ ঘাঁটাঘাঁটি করছেন না, বই কিনছেন। মেলার শেষ শুক্রবার ছিল (২৪ ফেব্রুয়ারি)। সাধারণত শুক্রবারে বেচাকেনা হয় খুবই জমজমাট। হয়েছেও তাই। আগামী প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী ওসমান গনি মেলার সার্বিক দিক নিয়ে সন্তুষ্ট। তিনি বলেন ‘মেলা এখন পরিণত হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের। পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি প্রকাশকের সংখ্যাও বেড়েছে।
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের সামনে কথা হলো ইংরেজি মিডিয়ামে পড়ুয়া ইসমৎ আরা জেবিনের সঙ্গে। হাতে সদ্য কেনা বইয়ের ব্যাগ। তিনি বললেন, ‘কয়েকবার মেলা ঘুরে কী বই কিনব তা ঠিক করে গেছি। আজ (শুক্রবার) একগুচ্ছ বই কিনলাম। আরও বই কেনার ইচ্ছে আছে।’ তার মতো আরও কয়েকজন জানালেন, ‘এখন দেখাদেখির সময় নেই, বই কিনছি।’ তাদেরই একজন মিরপুর ১০-এ বাসিন্দা সাব্বির খান। তিনি বললেন, ‘ব্যস্ততার কারণে মেলায় এবার দুই বারের বেশি আসতে পারি না। হাতে সময়ও বেশি নাই। বাসা থেকে তালিকা তৈরি করে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। এখন ঘুরে ঘুরে বই কিনছি। এখনই তো বই কেনার সময়-কী বলেন ভাই!’
ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশের অন্যতম প্রকাশক আদিত্য অন্তর জানালেন এবার প্রথম দিন থেকেই বিক্রির চিত্রটা ভালো। এখন যারা তালিকা সঙ্গে নিয়ে আসছেন। বইও কিনছেন।’
আর একটা মাত্র শিশু প্রহর আছে ২৪ ফেব্রুয়ারি (শনিবার)। এদিনও মেলার দ্বার খোলা হবে বেলা ১১টায়। চলবে একটানা রাত ৯টা পর্যন্ত। যদিও এদিন সব শিশু-কিশোরের ছুটি থাকে না। তাই (শুক্রবার) শিশু প্রহর ছিল শিশুদের দখলে। নানা বয়সি শিশুদের ভিড়ে টইটুম্বর ছিল শিশু চত্বর। শিশুতোষ বই কেনার জন্য স্টলে স্টলে ছিল প্রচণ্ড রকমের ভিড়। যথারীতি এবারও শিশুদের মাতিয়ে রেখেছিল জনপ্রিয় সিসিমপুর কার্টুনের চরিত্রগুলো হালুম, টুকটুকি ইকরি, শিকুরা। তাদের মজাদার সব কাণ্ড-কারখানায় আনন্দ দিলেও শিশুরা ঠিকিই বই কিনতে এতটুকু ভুল করেনি। বরং অভিভাবকদের নতুন বই কিনে দেয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল।
শিশু চত্বরের গেট দিয়ে এক শিশু বের হচ্ছিল বাবার হাত ধরে। হোঁচট খেল সে হঠাৎ। বাবার হাত থেকে ছুটে পড়ে গেল মাটিতে। কিন্তু তার হাতের পাতলা রঙিন বইটা পড়ে ছুটে গেল আরও দূরে। শিশুটি নিজে উঠে দাঁড়ানোর আগে চিৎকার করে বলল, ‘আমার বই বাবা আমার বই।’ বাবা দ্রুত ছেলের হাত ধরে তুলে ধরলেন। কিন্তু ছেলে তখনও সামনে পড়ে যাওয়া বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে আঁকুতি, উৎকণ্ঠাও— বইটা কেউ নিয়ে যাবে না তো!
হন্ত-দন্ত হয়ে দুই হাতে দুই ব্যাগ নিয়ে মেলায় ঢুকছেন মাঝবয়সি একটা লোক। হাঁপাচ্ছেন তিনি। পরিচিত একজনের দেখা হতেই তার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লেন তিনি। ভারী ব্যাগ দুটো পায়ের কাছে রেখে বললেন, ‘একটা বই কিনতে ভুলে গেছি। দোয়েল চত্বরের কাছে গিয়েই মনে পড়ে গেল বইটা তো কেনা হলো না। তাই আবার ছুটে এলাম। কথা হলো আদনান মোহাম্মদ ইকবালের নামে ওই ভদ্রলোকের সঙ্গে। পেশায় তিনি একজন স্থপতি। এসেছেন রাজধানীর মীরেরটেক থেকে। জানালেন ‘তার ছোট ভাই জাপানে থাকেন। দেশে থাকলে ভাইটি নিয়মিত মেলায় আসত। জাপানপ্রবাসী তার ছোটভাইটি হুমায়ূন আহমেদের ‘সেই মেয়ে’ কিনে কারোর মাধ্যমে জাপানে পাঠাতে বলেছে। সেই বইটি কেনার জন্য মেলায় এসেছিলাম। কিন্তু অনেক বই কিনতে গিয়ে সেই বইটির কথা মনেই ছিল না। মনে পড়তেই আবার ফিরে এলাম বইটি কেনার জন্য।’
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, সভাপতিত্ব করেন নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতাগুলোর আহ্বায়ক কাজী রুমানা আহমেদ সোমা, সায়েরা হাবীব, ফারহানা খানমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় ওয়াকিয়া নূর (প্রথম), আফফান আল হাসনাইন (দ্বিতীয়), রুজাইনাহ মারিফা (তৃতীয়)। খ-শাখায় প্রত্যয় পাল রাজ (প্রথম), তাসনিয়াহ সিদ্দিক (দ্বিতীয়), শাফিন উদ্দিন আহম্মেদ (তৃতীয়)। গ-শাখায় অর্নিলা ভৌমিক (প্রথম) আল মুমিনুর (দ্বিতীয়), জায়ীফা তাসনীম (তৃতীয়) স্থান লাভ করেন। শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় আরোহী বর্ণমালা (প্রথম), অংকিতা সাহা রুদ্র ((দ্বিতীয়) এবং জুমানা হোসেন (তৃতীয়)। খ-শাখায় সমৃদ্ধি সূচনা স্বর্গ (প্রথম), আনিশা আমিন (দ্বিতীয়) এবং অদ্রিতা ভদ্র (তৃতীয়) এবং গ-শাখায় আদিবা সুলতানা (প্রথম), তাজকিয়া তাহরীম শাশা (দ্বিতীয়) এবং সিমরিন শাহিন রূপকথা (তৃতীয়) স্থান লাভ করে।
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় নীলান্তী নীলাম্বরী তিতির (প্রথম), অন্বেষা মজুমদার (দ্বিতীয়) এবং সার্থক সাহা (তৃতীয়)। খ-শাখায় রোদোসী নূর সিদ্দিকী (প্রথম), তানজিম বিন তাজ প্রত্যয় (দ্বিতীয়) এবং মৈত্রেয়ী ঘোষ (তৃতীয়) স্থান লাভ করে।
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের দেয়া তথ্যমতে শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) মেলায় নতুন বই এসেছে ২৩৯টি। এরই মধ্যে মেলায় কথাপ্রকাশ এনেছে মাহবুব আজিজের ‘জল মহাল’, জালাল ফিরোজ ও সাব্বীর আহমেদ সম্পাদিত ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পক্ষে বিপক্ষে’, গ্রন্থকুটির এনেছে জ্যোতির্ময় সেনের ‘আলো চাই ভালো চাই’, অন্যপ্রকাশ এনেছে শেরনিয়াবাত আবুল বাশারের ‘অহর্নিশ প্রত্যাশা’, শ্রাবণ প্রকাশনী এনেছে শরাফত হোসেনের ‘নির্বাচিত উনপঞ্চাশ’, র্যামন পাবলিশার্স এনেছে বিপ্লব রঞ্জন সাহার ‘বিশ্বসেরা দশজন কবির কবিতা’, সময় প্রকাশন এনেছে সুমি শারমিনের ‘কিশোরী রেণু থেকে বঙ্গমাতা’, মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ট্রিনিটি সিকোয়েন্স’, ইকরিমিকরি এনেছে কাকলি প্রধানের ‘মেঘ রাজকন্যা’, তুষার আবদুল্লার ‘তিলা ঘুঘু’, সালেক খোকনের ‘নদী মা’, ঐতিহ্য এনেছে সৈয়দ শামসুল হকের ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ এবং খসরু চৌধুরীর ‘দালান বাড়ি’, চৈতন্য প্রকাশনী থেকে এসেছে মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহাবের ‘কার্ভিং করাপশন অব পুলিশ ইন অর্ডার টু এনশিওর গুড গভারনেন্স ইন বাংলাদেশ’, গাঙুড় প্রকাশন থেকে এসেছে আয়ারল্যান্ড প্রবাসী লেখক সাজেদুল চৌধুরী রুবেলের কবিতার বই ‘ফেরাবো না তেমাকে’, আজব প্রকাশ থেকে এসেছে মিলু আমানের উপন্যাস সংকলন ‘রকযাত্রা অমনিবাস’। জার্নিম্যান বুকস মেলায় এনেছে অভিনেতা আফজাল হোসেনের পঞ্চম কবিতার বই ‘আমরা ধুলোকাদার, আমরা আদর্শলিপি’। এ প্রতিবেদককে আফজাল হোসেন বলেন, ‘মেলার অনেক কিছু এখন আর আগের মতো নেই। আগে মেলা ছিল খুবই আবেগের বিষয়। তখন ছোট পরিসরে মেলা হলেও একই মানুষ ঘুরেফিরে প্রতিদিনই আসত। সারা দিন মেলায় কাটাত। এখন যারা বই পড়ে হয়তো তারাই বইটা কেনার জন্য আসে।’ নিজের নতুন বই সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের শৈশবটা ছিল ধুলোকাদার, আদর্শলিপির। মানে এক কথায় শুদ্ধতার। আমার গ্রন্থটিতে একাত্তরটি কবিতা রয়েছে।’
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার মূলমঞ্চে ছিল আধুনিকতা, ‘উত্তর-আধুনিকতা ও পরবর্তীকালের সাহিত্যতত্ত্ব’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাসুদুজ্জামান। আলোচক ছিলেন নিরঞ্জন অধিকারী, এজাজ ইউসুফী, বিপ্লব মোস্তাফিজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাশিদ আসকারী। প্রাবন্ধিক বলেন, ‘বিশ্বে সাহিত্যতত্ত্ব নিয়ে রচিত গ্রন্থের সংখ্যা বিপুল। এর কারণ তত্ত্ব সম্পর্কে পৃথিবীর সব প্রান্তেই লেখক, পাঠক ও সমালোচকদের রয়েছে অনিঃশেষ আগ্রহ। মানবিক কর্মকাণ্ড যত বাড়ছে, নতুন নতুন বিষয়ের আবির্ভাব ঘটছে, তত্ত্বের পরিসরও তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তত্ত্বচর্চার মধ্য দিয়েই আ্ত্তপরিচয়ের বিনির্মাণ, লৈঙ্গিক পার্থক্যের অপসারণ, নুিবর্গের মানুষকে আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা চলছে। বৈশ্বিকভাবে আজ অবধি যত তত্ত্বের আবির্ভাব ঘটেছে তার মধ্যে আধুনিকতা, উত্তর-আধুনিকতা, উত্তর-উপনিবেশবাদ খুবই শক্তিশালী প্রভাব বজায় রেখেছে।’
আলোচকরা বলেন, ‘আধুনিকতা, উত্তর-আধুনিকতা এবং পরবর্তীকালের সাহিত্যতত্ত্বের পটভূমি অনেক বিস্তৃত। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি ভাষার সাহিত্যে এসব তত্ত্ব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক চিন্তা, সামাজিক চিন্তা ও সাহিত্যিক চিন্তা থেকেই মানবতাবাদী চিন্তক ও তাত্ত্বিকরা সময়োপযোগী তত্ত্বের বিকাশ ঘটান। আজ তত্ত্ব, তাত্ত্বিক বয়ান ও তাত্ত্বিক বিতর্কের কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে গেছে সাহিত্য ও সংস্কৃতি। সে কারণে কেবল সাহিত্যকে কেন্দ্র করেই উদ্ভব ঘটেছে বিভিন্ন তত্ত্বের।’ সভাপতির বক্তব্যে রাশিদ আসকারী বলেন, ‘একুশ শতকে শিক্ষার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো সমালোচনামূলক ও বিশ্লেষণধর্মী মানসিকতা সৃষ্টি। এজন্য গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ এসব তত্ত্বকে বিদ্যায়তনিক সীমার বাইরে এনে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রতিটি বিষয়কেই তাত্ত্বিক চিন্তার আলোকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গ্রহণ করতে হবে।’
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন আশরাফ জুয়েল, রণজিৎ সরকার, মেহেদী হাসান শোয়েব, কানিজ পারিজাত। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন নাজমুন নেসা পিয়ারি, রওশন ঝুনু, ফরিদা ইয়াসমিন সুমি, নাঈমা খানম, মাদুসুল হক, হাসান মাহমুদ, প্রত্যয় জসিম, মাহী ফ্লোরা, প্রসপারিনা সরকার এবং মনিরুজ্জামান রোহান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন শাহ কামাল সবুজ, আজহারুল হক আজাদ, শিরিন সুলতানা, ফারজানা মালিক নিম্মী, অনিকেত রাজেশ। ছিল কাঙাল মজিবরের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কাঙ্গাল হরিনাথ সাংস্কৃতিক সংগঠন’, এ. কে. আজাদের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আনন্দন’, শাহাবুদ্দিন আহমেদ দোলনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সুর সুধা সংগীতায়ন’, সিদ্দিকুর রহমান পারভেজের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র’, সুবর্না আফরিনের পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘কিংবদন্তি আবৃত্তি পরিষদ’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আবিদা রহমান সেতু, আফরোজা খান মিতা, মারুফ হোসেন, আশরাফ উদাস এবং অগ্নিতা সিকদার মুগ্ধ।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘কোভিড-১৯ : ভাষার বৈশ্বিকতা ও বাংলাদেশের সাহিত্য এবং কোভিড-১৯’ সংস্কৃতির সংকট ও রূপান্তর শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন হাকিম আরিফ এবং মোহাম্মদ শেখ সাদী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন পারভেজ হোসেন, হামীম কামরুল হক, কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী এবং আবুল হাসান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রফিকউল্লাহ খান।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ