অমর একুশে বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের একটি স্টলে চোখ আটকে গেলো! দেখা গেলো খুব আগ্রহ করে দুজন বই পড়ছে! কিন্তু চোখে দেখতে পান না তারা! তাহলে পড়ছেন কিভাবে?
আসলে তারা পড়ছিলেন ব্রেইল পদ্ধতিতে, চোখে না দেখেও বইয়ের অক্ষর স্পর্শ করে পড়া যায় এ পদ্ধতিতে। যে স্টলে তারা ছিলেন সেটি দৃষ্টিহীনদের জন্য বিশেষভাবে ছাপানো বই প্রকাশ করে থাকে। সেখানে তাদের নতুন বই পড়ার সুযোগও রয়েছে।
এক যুগ ধরে বইমেলাতে বিশেষ এ গোষ্ঠীর জন্য বই পড়ার এ সুযোগ করে দিয়েছে স্পর্শ ফাউন্ডেশন।
কথা বলে জানা গেল, নানা কারণে যারা চোখে দেখতে পান না তাদের বই পড়ার পরিসরকে আরও বিস্তৃত ও সহজ করার পরিকল্পনা নিয়ে ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে ফাউন্ডেশনটি। ২০০৯ সালে তারা প্রথম একটি ছড়ার বই ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করে। আর ২০১১ সাল থেকে নিয়মিতভাবে বইমেলায় অংশ নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ১২ বছরে ১০১টি বই ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করে বইমেলায় এনেছে তারা।
এবারের মেলাতেও ৩০টি বই আনার পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানটির, যার মধ্যে কয়েকটি বই ইতোমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানান এটির উদ্যোক্তা নাজিয়া জাবীন।
এবার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে আছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই একাত্তরের চিঠি, বিভূতিভূষণ বন্দ্যেপাধ্যায়ের উপন্যাস চাঁদের পাহাড়, মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাইন্স ফিকশন ‘যারা বায়োবট’।
নয়া শতাব্দীর সঙ্গে কথোপকথনে নাজিয়া জাবীন বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে কাজ করছি। প্রতি বছরই নতুন বই আনার চেষ্টা করি। এবারের মেলায় সিসিমপুর থেকে আমাদেরকে ১০টি বই দিয়েছে। এছাড়া আমরাও বই নিয়ে আসছি। ২১ ফেব্রুয়ারির পর ৩০টি বই নিয়ে একটি প্রকাশনা উৎসব করব। তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
দৃষ্টিহীন নয় তারা চান ‘দৃষ্টিজয়ী’ শব্দ ব্যবহার করতে জানিয়ে নাজিয়া বলেন, আমরা বলি দৃষ্টিজয়ী। তারা চোখে দেখে না। কিন্তু অনেকের চেয়েও বেশি প্রজ্ঞাবান। যারা প্রজ্ঞাহীন, তারা দৃষ্টিহীন। যারা চোখে না দেখলেও ব্রেইল পদ্ধতিতে বই পড়তে পারে।
“কোনো কোনো ক্ষেত্রে চোখের দৃষ্টি সম্পন্ন অনেকের চেয়েও ভালো কাজ করে। তারা দৃষ্টিহীন নয়। যারা চোখ থাকার পরও খারাপ কাজ করে, তারা দৃষ্টিহীন। বরং এই অন্ধরা ভালো কাজের মধ্য দিয়ে হয়ে ওঠে দৃষ্টিজয়ী।
বইমেলায় ব্রেইল পদ্ধতিতে বই প্রকাশের ভাবনাটি কীভাবে এসেছে, এ প্রশ্নের উত্তরে নিজের একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সেদিন হঠাৎ মনে হল- ব্রেইল পদ্ধতিতে বই বের হলেতো তারাও আমাদের পাঠক হতে পারে। এরপর থেকে স্পর্শ ফাউন্ডেশন করেছি। প্রতিবছর বই প্রকাশ করছি।
তাদের জন্য বই না থাকার কারণে এতদিন তারা মেলা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। আমরা প্রতিবছর তাদের জন্য বই প্রকাশ করে তাদেরকেও মেলায় যুক্ত করতে পেরেছি। প্রতিটি প্রকাশনার উচিত ব্রেইল বই প্রকাশ করা।
জাতীয় গণগ্রন্থাগার, শিশু একাডেমি পাঠাগারসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্রেইল কর্নার করা হয়েছে জানিয়ে নাজিয়া বলেন, আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন পাঠাগারে ব্রেইল কর্নার করা হয়েছে। সেখানে ব্রেইল পদ্ধতিতে বই পড়ে আমাদের অনেক পাঠক। ফলে সারা দেশে এখন আমাদের অগণিত পাঠক রয়েছে।
নিজেও নিয়মিত লেখালেখি করেন জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তার ৪০টির মতো বই প্রকাশ হয়েছে।
মেলার একমাত্র এই ব্রেইল স্টলে কথা হল স্বেচ্ছাসেবী তরিকুল ইসলাম নাজিমের সঙ্গে, যিনি চোখে দেখতে পারেন না। তিনি বললেন, মেলায় এই স্টলে বসে অনেকেই বই পড়ছে। মেলার পর আমরা অনেককে বইগুলো উপহার হিসেবে দেব। সারা দেশেই এখন আমাদের পাঠক আছে।
নয়াশতাব্দী/জেডএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ