রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বহুমাত্রিক সৃষ্টির মধ্যেই জীবন্ত সৈয়দ হক

প্রকাশনার সময়: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১৮:৩৫

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ৮৮তম জন্মদিন আজ। ছয় দশকেরও বেশি সময়ের লেখকজীবনে বহুমাত্রিক সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এই বরেণ্য সাহিত্যিক। কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, অনুবাদ তথা সাহিত্যের সব শাখায় যুগপৎ সক্রিয়তার জন্য তাকে ‘সব্যসাচী লেখক’ বলা হয়ে থাকে। সাহিত্যের নানা শাখায় পদচারণা থাকলেও কবি পরিচয়েই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন তিনি।

১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর এদিন কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ শামসুল হক। সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও হালিমা খাতুন দম্পতির আট সন্তানের প্রথম সন্তান সৈয়দ শামসুল হক। বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার ছিলেন। এক ছেলে ও এক মেয়ের গর্বিত বাবা সৈয়দ হক। কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক তার সহধর্মিণী।

সৈয়দ হকের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুলে। সেখানে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুলে। এরপর ১৯৫০ সালে গণিতে লেটার মার্কস নিয়ে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

বাবার ইচ্ছা ছিল, সৈয়দ শামসুল হককে ডাক্তারি পড়াবেন। বাবার এ চাওয়া এড়াতে ১৯৫১ সালে মুম্বাইয়ে পালিয়েছিলেন তিনি। পরে অবশ্য জগন্নাথ কলেজ থেকে পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন। সেই থেকে লেখালেখিকে তিনি একমাত্র ব্রত করে নেন।

১৯৫৪ সালে প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘তাস’ প্রকাশের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাহিত্যাঙ্গনে স্থায়ী আসন করেন তিনি। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় ‘শীত বিকেল’, ‘রক্তগোলাপ’, ‘আনন্দের মৃত্যু’, ‘প্রাচীন বংশের নিঃস্ব সন্তান’, ‘জলেশ্বরীর গল্পগুলো’সহ তার বিচিত্র বিষয়ের গভীর জীবনঘনিষ্ঠ রচনা। ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘এক মহিলার ছবি’। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একদা এক রাজ্যে’ প্রকাশিত হয় ১৯৬১ সালে।

সৈয়দ হকের ভাষা আর আঙ্গিকের উজ্জ্বল নিরীক্ষার পরিচয় উৎকীর্ণ হয়ে আছে ‘বিরতিহীন উৎসব’, ‘অপর পুরুষ’, ‘বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা’, ‘পরানের গহীন ভিতর’সহ বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থে। তার গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘নীল দংশন’, ‘খেলারাম খেলে যা’, ‘বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ’, ‘তুমি সেই তরবারি’ ও ‘নিষিদ্ধ লোবান’।

ছোটদের জন্য লেখা ‘সীমান্তে সিংহাসন’, ‘আবু বড় হয়’ ও ‘হাডসনের বন্ধু’ পেয়েছে বিপুল পাঠকপ্রিয়তা। তার অতুলনীয় কাব্যনাট্য ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ ইত্যাদি। ম্যাকবেথসহ বিশ্বসাহিত্যের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ রচনাও বাংলায় অনুবাদ করেছেন তিনি।

২০১৬ সালের ১৫ এপ্রিল ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিলে তাকে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হয়। লন্ডনের রয়্যাল মার্সডেন হাসপাতালে পরীক্ষায় তার ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেন। চার মাস চিকিৎসার পর ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বাংলা সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আদমজী সাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন স্বীকৃতি। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ রচয়িতা, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক, জেবুন্নেসা-মাহবুবউল্লাহ স্বর্ণপদক, পদাবলী কবিতা পুরস্কার, নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক, টেনাশিনাস পদক, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার।

নয়াশতাব্দী/এমএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ