ইদানীং একান্নবর্তী পরিবার প্রায় নেই বললেই চলে। তাছাড়া যে হারে ফ্ল্যাট কালচার গড়ে উঠছে, সেখানে ৭০০-১৫০০ স্কয়ার ফিটের একটি ঘরে ড্রইং, ডাইনিং, লিভিং, বেডরুমকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে কিচেনের গুরুত্ব একেবাওে শেষের দিকে এসে পড়ে। যে কারণে বেশিরভাগ বাসায় দেখা যায়, রান্নাঘর তুলনামূঔশ ছোট। এ জন্য অনেক গৃহিণীকেই আফসোস করে বলতে শোনা যায়, ‘রান্নাঘরটা একটু ছোট হয়ে গেছে।’ একজন কাজ করলে অন্যজনের নড়াচড়ারও জায়গা থাকে না। না, হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। ছোট রান্নাঘরেই আপনি সবকিছু সুন্দরভাবে সামাল দিতে পারবেন। এর জন্য দরকার একটু পরিকল্পিত উপায়ে রান্নাঘর গোছানোর। আসুন জেনে নেই ছোট রান্নাঘর গুছিয়ে নেয়ার কিছু উপায়
* গতানুগতিক বাসন-কোসন বদলে নিন : একটা সময় ছিল যখন রান্নাঘরের মতো রান্নার সরঞ্জামও ছিল বিশাল। আগের দিনের হাঁড়িকুড়ি দিয়ে এখনকার ফ্ল্যাটবাড়ির রান্নাঘর সামলানো সত্যিই কষ্টসাধ্য। কোথায় রাখবেন ওই চার-পাঁচ কেজি রান্নার বাসন-কোসন। খুন্তি, কড়াই, হাঁড়ি, সসপ্যান, রুটির তাওয়া, তেলে ভাজার তাওয়া কত আয়োজন। আজকের রান্নায়ও বাসনপত্র লাগে। তবে সেটা হতে হবে ব্যবহারের সুবিধাজনক, হালকা সবচেয়ে বড় দরকার নিজেই ঘঁষেমেজে পরিষ্কার করতে পারেন এমন সরঞ্জাম। আর তাই রান্নাঘরে যতটা সম্ভব ফুড গ্রেডেড প্লাস্টিক কিংবা মেলামাইনের জিনিস ব্যবহার করুন। ছোট-বড়-মাঝারি বিভিন্ন সাইজ এবং শেপের এসব জিনিস আপনার রান্নাঘরকে গোছানো ও পরিচ্ছন্ন রাখতে সহায়ক।
* অব্যবহৃত জায়গা কাজে লাগান : আজকালকার বেশিরভাগ কিচেনেই স্টোর কিংবা তাক ব্যবহৃত হয়। এ জন্য দেয়াল অনেকটা জায়গাজুড়ে ফাঁকা থাকে। এসব জায়গায় আপনি রেল হুক ইত্যাদি লাগাতে পারেন। ফলে প্যান, কড়াই, ছুরি, কাঁচি, সবজি কুরুনি ইত্যাদি আপনি অনায়াসেই ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। এছাড়া বেসিনের নিচে কাবার্ডে অথবা ওপরের কাবার্ডের দরজার ভেতরের দিকে তাক লাগিয়ে অনায়াসেই মসলাপাতি রাখতে পারেন।
এ জন্য আপনাকে নামিদামি কোম্পানির ডিজাইনকৃত রান্নাঘর দেখে হাঁহুতাশ করার প্রয়োজন নেই। নিজের চিন্তা কাজে লাগান। আসবাবপত্রের বিভিন্ন দোকানে কিচেন আইটেম পাওয়া যায়। সেখান থেকে টুকরো টুকরো জিনিস সংগ্রহ করে নিজের মতো রান্নাঘর কাজের উপযোগী করে নিন।
* সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে রান্না শুরু করুন : যে কোনো মানুষের কাছে কী খাব বিষয়টি প্রতিদিনের চিন্তা। ভাবুন তো বাড়ির ওই মানুষটির কথা যাকে প্রতিদিন রান্নার কাজটি করতে হয়। তিন বেলা বাড়ির সব মানুষকে সন্তুষ্ট করার জন্য তার কত আয়োজন। আর এ জন্য অনেকে মাঝে-মধ্যে বাড়তি চাপই শুধু নয়, একটু বিরক্তিতেও ভোগেন। আসলে পরিকল্পনার বিকল্প নেই। সপ্তাহে রান্নার একটা তালিকা করে রাখুন। আর সে হিসেবে আজ কী রান্না হবে তার ওপর নির্ভর করে আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে ফেলুন। সবকিছু কোটা-বাছা করে ধুয়ে বাটিতে নিন এবং সবশেষে চুলার কাজ শুরু করুন, যাতে শেষ মুহূর্তে কোনো ঝামেলা না হয়। আগে সব তরকারি কেটে গুছিয়ে নিলে রান্না চট-জলদি করে ফেলা সম্ভব।
* পরিষ্কারের কাজটিও যেন সঙ্গে সঙ্গে হয় : আজকাল অনেকেই ঝুরির সাহায্যে কোটা-বাছা করেন। আগের দিনের মতো রান্নাঘরে একপাশে বসে বড় বঁটি দিয়ে কেউ মাছ, সবজি নিয়ে বসবে এমন জায়গাও নেই। আপনার রান্নাঘর ছোট হলেও যে জায়গায় আপনি কোটা-বাছা করেন সেটা একটু খোলামেলা হলে ভালো হয়। চাইলে খাবার টেবিলেও কাজটি করতে পারেন। আপনি যদি চপ বোর্ড ব্যবহার করেন, তবে সেটা যত বড় হবে ততই আপনার সুবিধা। চপ বোর্ডের পাশে অবশ্যই একটি প্লাস্টিকের ছোট গামলা কিংবা বাটি রাখবেন। এতে উচ্ছিষ্ট জিনিসপত্র যেমন সেখানে ফেলতে পারেন, তেমনি কাজ শেষ হওয়ার পরে জিনিসপত্র না ছড়িয়ে ডাস্টবিনে ফেলতেও সুবিধা হবে। চাইলে এর নিচে পুরনো খবরের কাগজ বা একটি নির্দিষ্ট কাপড়ও ব্যবহার করতে পারেন যেটা পরে ধুয়ে ফেললেই হলো।
* বহুবিধ ব্যবহার করা যায় এমনভাবে জিনিস কিনুন : আমরা অনেকেই বছরের পর বছর ধরে কিচেনের হাঁড়িকুড়ি সংগ্রহ করতে থাকি। কিন্তু আসলেই কি এত জিনিসের দরকার পড়ে? পরিমাণের কথা না ভেবে উপযোগিতার ব্যাপারটা যাচাই করুন। অর্থাৎ একটি ভালো কোম্পানির কয়েকটি ননস্টিক প্যান এবং কড়াই আপনার সব ধরনের রান্নার কাজে সহায়ক। জুসার, ব্লেন্ডার কিংবা মিক্সচার আলাদা না কিনে সব সুবিধাই আছে এমন ফুড প্রসেসর কিনুন। এতে আপনার খরচ এবং জায়গা দুটোই বাঁচবে। প্যান কিংবা কড়াই কেনার সময় খুব বেশি ছোট কিংবা ঢাউস সাইজ না কিনে সঠিক মাপের কিনুন। এতে কম যেমন রান্না করা যাবে আবার বেশি মানুষের রান্না হলেও বিপদে পড়তে হবে না।
* সব জিনিস জায়গা মতো গুছিয়ে রাখুন : ঘর গোছাতে অনেক সময় বাড়তি জিনিসপত্র আমরা অনেকেই রান্নাঘরের কোনায় এনে জড়ো করতে থাকি। ভাবি ফেলে দেব বা কাউকে দিয়ে দেব। কিন্তু নানা কারণে এসব কিছু করা হয় না। ফলে পুরনো জিনিস জমতে জমতে এক সময় রান্নাঘরটাকে ভাড়ার ঘর মনে হতে থাকে। মনে রাখবেন, কিচেন স্টোর রুম নয়, শুধু অন্য ঘরের পুরনো জিনিসই নয়, রান্নার কাজে ব্যবহৃত বোতল, ব্যাগ, বাক্স, প্যাকেট ইত্যাদি কাজ শেষ হলে জায়গা মতো গুছিয়ে রাখুন। না হলে দেখতে খুবই অগোছালো লাগে। ফ্রিজের মাছ-মাংসের প্যাকেটগুলো জানালায় গুঁজে রাখলে দেখতে খারাপ লাগে। বরং ধুয়ে বারান্দায় দিয়ে শুকিয়ে ছোট ভাঁজ করে বক্সে তুলে রাখুন। এতে ছোট রান্নাঘরও পরিচ্ছন্ন দেখাবে।
* রান্নাঘরের রং ও আলো বাতাস : সাধারণত রান্নাঘরটি আমাদের বাড়ির সবচেয়ে অবহেলিত ঘর হয়ে ওঠে। ছোট্ট ফ্ল্যাটে রান্নাঘরে দম ফেলার জন্য আপনার মনোযোগ আরো বেশি প্রয়োজন। নিজের হোক কিংবা ভাড়া বাড়ি, রান্নাঘরের দেয়াল উজ্জ্বল রঙে রাঙিয়ে নিন। দেয়ালের সঙ্গে মিলিয়ে কেবিনেট বা ওয়াল রং করুন। এছাড়া রান্নাঘরে টিমটিমে নয়, ফ্লুরোসেন্ট উজ্জ্বল আলো ব্যবহার করুন। দেয়ালে বা কেবিনেটের নিচে আলোর ব্যবস্থা রাখুন। রান্নাঘর এমনিতেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। ছোট হোক তাতে কী? রান্নাঘর হওয়া চাই গোছানো, ঝকঝকে পরিষ্কার।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ