আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা দিনে দু’একবার কফি খেতে খুবই পছন্দ করি। কিন্তু নতুন একটি গবেষণা বলছে, বেশীমাত্রায় কফি পান করলে এটি মস্তিষ্ককে সংকুচিত করে ফেলে এবং দীর্ঘমেয়াদে ডিমেনশিয়া রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ডিমেনশিয়া রোগে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ, অস্থিরতা বেড়ে যায়। এছাড়া স্মৃতিভ্রম এমনকি উন্মাদ হওয়ারও ঝুঁকি বেড়ে যায়।
যুক্তরাজ্যের বায়োব্যাংক প্রকল্পের আওতায় ৩৭ থেকে ৭৩ বছর বয়সী ১৭ হাজার ৭০২ জনের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়। দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীর স্বাস্থ্য ও জীবনযাপনের নানা দিক যেমন কফি সেবন, মস্তিষ্কের আকার, রোগব্যাধি ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার মতো অন্যান্য কিছু তথ্যও সংগ্রহ করা হয় যার ওপর বিজ্ঞানীরা কাজ করেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত কফি গ্রহণ করলে এর ঝুঁকি অনেক বেশি তীব্র হতে পারে। যারা দিনে ৬ কাপ বা তার চেয়ে বেশি কফি গ্রহণ করেন তাদের ডিমেনশিয়া রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। দিনে এক কাপ বা দুইকাপ কফি গ্রহণ করেন এমন ব্যক্তির চেয়ে তারা ৫৩ শতাংশ বেশি এ রোগের ঝুঁকিতে থাকেন।
সাউথ অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ কিটি ফ্যাম বলেন,‘পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় হচ্ছে কফি। প্রতিবছর সারাবিশ্বে নয় বিলিয়ন কিলোগ্রামের বেশি কফি পান করা হয়। তাই, আমাদের স্বাস্থ্যে এর সম্ভাব্য প্রভাব কতটুকু তা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি আরো বলেন, ‘ব্যাপক এই গবেষণায় দেখা গেছে, কফির সঙ্গে মস্তিষ্কের আকারের পরিমাপ, ডিমেনশিয়া ও স্ট্রোকের সম্পর্ক আছে। এছাড়াও মস্তিষ্কের আকারের তথ্যচিত্র নিয়েও এখানে ব্যাপক গবেষণা করা হয়েছে।’
আমরা যদিও জানি যে, কফি আমাদের মস্তিষ্ককে নানাভাবে প্রভাবিত করে। আগের কিছু গবেষণায় কফির সঙ্গে মস্তিষ্কের আকার ও ডিমেনশিয়ার সম্পর্কের বিষয়ে বিপরীত ফলাফল পাওয়া গিয়েছিলো।
নতুন এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নারী-পুরুষ, বয়স, উচ্চতা ও ওজনের অনুপাত এবং দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ইত্যাদি নানা দিক বিবেচনার পরও কফি পান এবং মস্তিষ্কের আকার কমে যাওয়া ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। তবে মস্তিষ্কের সংকোচন হলে কি হতে পারে তা এ গবেষণায় জানা যায় নি। মস্তিষ্কের ধূসর এবং সাদা উভয় পদার্থই পেশীর সঞ্চালন ও সংবেদনশীল কাজগুলোতে সাহায্য করে। তাই কোন একটি পদার্থের ঘাটতিতে মানুষের আচরণগত ও মস্তিষ্কের কাজের কি পরিবর্তন হতে পারে তা বলা কঠিন। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের সংকোচন হওয়াটা স্বাভাবিক। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে মস্তিষ্কের আকার ও ডিমেনশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক আছে।
বিজ্ঞানী ফ্যাম বলেন,‘সব ধরনের তথ্য উপাত্ত বিবেচনায় নিয়ে আমরা দেখেছি, মস্তিষ্কের সংকোচনের সঙ্গে বেশি মাত্রায় কফি গ্রহণের ধারাবাহিক সম্পর্ক রয়েছে। দিনে ৬ কাপের চেয়ে বেশি কফি খেলে ডিমেনশিয়া ও স্ট্রোকের মতো মস্তিষ্কের রোগের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
তবে কি কারণে এমনটি হয় তা এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে পরিষ্কার নয়। ক্যাফেইন এবং কফি কীভাবে মস্তিষ্কের কোষকে প্রভাবিত করে তা জানার জন্য আরো অনেক গবেষণার প্রয়োজন। তবে এই গবেষণা থেকে বলা যায়, একটি বড় গ্রুপের মধ্যে বেশি মাত্রার কফি গ্রহণ করার সঙ্গে ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
সাউথ অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ এলিনা হিপ্পেনেন বলেন,‘সাধারণত প্রতিদিন এক থেকে দুই কাপ কফি খাওয়া ভালো অভ্যাস। তবে কয়েক কাপ কফিও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হবে কি না তা নির্ভর করে কফি বানানোর নানা উপাদানের ওপর। তাই আপনার যদি দিনে ছয় কাপের বেশি কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে অবশ্যই আরেকবার ভাবুন।’
নয়া শতাব্দী/এসইউ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ