অতিরিক্ত ওজন অনেক সময় বিড়ম্বনার কারণ। তবে ওজন একবার বেড়ে গেলে সেটি কমোনোও অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তবে আপনি জানেন কি- ওজন কমানোর জন্য সর্বোত্তম উপায় হলো নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা?
একদম শূন্য ক্যালোরির হওয়ায় অতি সাধারণ এই খাবার পানি কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই শরীরকে সরাসরি হাইড্রেটেড রাখতে পারে। যারা ইতোমধ্যে নিয়মিত পানি খাওয়ার অভ্যাসের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন তাদের সুষম খাবারের সঙ্গে আর কোন পানীয়র সংযোজনের প্রয়োজন পড়ে না। তবে একটু মুখরোচক ও শরীরের তাৎক্ষণিক চাঙ্গা ভাবের জন্য যারা পানির সঙ্গে যথাযথ পুষ্টিও পান করতে চাইছেন তাদের জন্যও রয়েছে উপযুক্ত উপায়। ১০ কার্যকরী পানীয়র ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।
জাম্বুরা ও ডালিমের শরবত : ওজন কমাতে জাম্বুরা খুবই কার্যকরী। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা এবং পোস্ট-গ্লুকোজ ইনসুলিনের মাত্রা উন্নত করে দেহের স্থুলতা কমায়। আর ডালিম প্রদাহ কমাতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে যা মূলত ওজন হ্রাসের দিকে ধাবিত করে।
নারকেলের পানি : অল্পের মধ্যে পুরো একবেলা আহারের জন্য নারকেলের জুড়ি নেই। এর পানি ক্ষুধা দমন করে এবং অল্পতেই তৃপ্তি মিটিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি কিডনির সঠিক কার্যকারিতার জন্যও ভালো।
মধু দিয়ে লেবুর শরবত : লেবু এবং মধুর মিশ্রণ ওজন কমানোর জন্য সেরা পানীয়গুলোর মধ্যে একটি। কারণ মধু অন্ত্রের সমস্যা প্রতিরোধ, কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ফলশ্রুতিতে দেহ স্বাস্থ্যসম্মত ওজন হ্রাসের দিকে এগিয়ে যায়। অন্যদিকে, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবু দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, টক্সিন বের করে দেয়, শরীরে পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আপেল সিডার ভিনেগার : এই বহুল জনপ্রিয় কম ক্যালোরির ভিনেগারটি মুখের রুচি বাড়ায়, রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায়, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে, উচ্চ রক্তচাপকে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে, অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নতি করে। ফলে অন্যান্য মুখরোচক ফ্যাটযুক্ত খাবারের একটি সেরা বিকল্প হিসেবে এটি কাজ করে।
পেঁপের শরবত : পেঁপের সুস্বাদু শরবত অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
গ্রিন টি : গ্রিন টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি বড় উৎস। এতে বিদ্যমান যৌগ-ক্যাটেচিন এবং ক্যাফেইন বিপাকের কার্যকারিতাকে গতিময় করে। ক্যাফেইন চর্বি পোড়াতে এবং বিশ্রামে থাকাকালীন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া কোমরের পরিধিকে হ্রাস করে দেহের আকারকে আরও সুন্দর করে তোলে।
ব্ল্যাক কফি : ব্ল্যাক কফি সারা দিন ক্ষুধা এবং ক্যালোরি গ্রহণ কমাতে সহায়তা করে। তবে তাতে ক্রিম বা চিনি যোগ করলে কফির ক্যালোরির পরিমাণ বেড়ে যায়, যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা ফেলে। এ ক্ষেত্রে কফিতে কম-ক্যালোরি যুক্ত বাদাম দুধ মেশানোটা স্বাদ বাড়াতে কাজ করতে পারে।
লেবু দিয়ে আদা চা : আদা চা ক্ষুধা কমাতে ও ক্যালোরি খরচ বাড়াতেও সাহায্য করে। এই চা পানে দীর্ঘ সময় ধরে পাকস্থলী ভরা অনুভূতি দেয়। লেবু শরীর থেকে ক্ষতিকর তরল বের করতে সাহায্য করে, যা চর্বি কমানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। শুধুমাত্র এই একটি যাদুকরি পানীয় শরীরের মেটাবলিজমকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
সবুজ শাক সবজির শরবত : ফুলকপি, পালংশাক বা বাঁধাকপি দিয়ে তৈরি সবুজ শাক সবজির শরবতে ফাইবার ও অল্প চিনি থাকে। এগুলো শরীরের ওজন ও চর্বি কমানোতে সরাসরি কাজ করে। এই শরবত পানে দেহে মূলত লেপটিন হ্রাস শুরু হয়ে যায়। লেপটিন হল চর্বি কোষ দ্বারা নিঃসৃত একটি হরমোন, রক্তে যার মাত্রা খুব বেশি হলে দেহের স্থুলকায় হতে শুরু করে।
ইসবগুলের ভূষির শরবত : প্রতিদিন পানির সাথে ইসবগুলের ভুসি পান করা হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য এবং রক্তে শর্করার মাত্রা ভারসাম্যপূর্ণ রাখার পাশাপাশি ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি শরীরের তরলের যোগান দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পেটপূর্তির অনুভূতি দেয়। ফলে ওজন হ্রাসের জন্য প্রতিদিনের খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসে।
পরিশেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় মনে রাখতে হবে তা হলো, ওজন কমাতে এই ১০টি কার্যকরী পানীয় কোন শর্টকাট উপায় হিসেবে কাজ করবে না। এগুলো গ্রহণের পাশাপাশি প্রয়োজন নিয়মিত শরীরচর্চা ও পানীয় ছাড়া নিত্যদিনের অন্যান্য খাবারগুলোতে একটি সুষম খাদ্য তালিকা অনুসরণ করতে হবে। এভাবে একটি দুশ্চিন্তামুক্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ধারণ পদ্ধতির মাধ্যমে উপভোগ করা যাবে ওজন কমানোর যাত্রা।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ